এই পুরস্কার প্রত্যাশার চেয়েও বেশি

৪৪তম মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পুরস্কার বিশেষ জুরি পুরস্কার সিলভার সেন্ট জর্জ অ্যাওয়ার্ড জিতেছে বাংলাদেশের সিনেমা ‘আদিম’। গতকাল দুপুরে কথা হয় ছবির নির্মাতা যুবরাজ শামীমের সঙ্গে

পুরস্কারপ্রাপ্তদের সঙ্গে যুবরাজ
ছবি : সংগৃহীত

প্রশ্ন :

অভিনন্দন। কোথায় আছেন?

ধন্যবাদ। দুবাইতে, দেশে ফেরার কানেক্টিং ফ্লাইট ধরব।

প্রশ্ন :

মস্কো উৎসবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পুরস্কার জিতলেন। এতটা আশা করেছিলেন?

একেবারেই না। আমি তো প্রতিযোগিতা বিভাগে জায়গা পেয়েই খুশি ছিলাম। এই পুরস্কার প্রত্যাশার চেয়েও বেশি।

মস্কো উৎসবের লাল গালিচায়
ছবি : সংগৃহীত

প্রশ্ন :

সিলভার সেন্ট জর্জ অ্যাওয়ার্ড পাবেন, এটা কি সমাপনী অনুষ্ঠান শুরুর আগেই জানতেন?

না। ১ সেপ্টেম্বর রাতে জানানো হয় নেটপ্যাক জুরি পুরস্কার পাব। শুক্রবার দুপুরে পুরস্কার গ্রহণ করে হোটেলে ফিরে আসি। বিকেলে ছিল লালগালিচায় হাঁটা ও সমাপনী অনুষ্ঠান। যখন একে একে সেরা অভিনেতা–অভিনেত্রীদের নাম বলা হচ্ছিল, ভেবেছিলাম পুরস্কার পাচ্ছি না। পরে সেরা অভিনেতার পুরস্কার পাওয়া অভিনেতাকে জিজ্ঞেস করে জানলাম, তিনিও আগে থেকে কিছু জানতেন না। তখন মনে হলো, পেলেও পেতে পারি।

পরিচালক যুবরাজ শামীম
ছবি: সংগৃহীত

প্রশ্ন :


যখন আপনার নাম ঘোষণা করা হলো...

আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছিল না। মঞ্চে উঠেই বলেছিলাম—এটা কি সত্য নাকি স্বপ্ন। আসলে একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম।

পুরস্কার হাতে যুবরাজ শামীম
ছবি : সংগৃহীত

প্রশ্ন :

কার কথা মনে পড়েছিল?

বাবার কথা। উনি গত বছর করোনায় মারা যান। তাঁর অসুস্থতার সময় রাতে পাশে বসে থাকতাম। তখন আমার মধ্যে নানা রকম আধ্যাত্মিক চিন্তা তৈরি হয়, যা নির্মাতা ও মানুষ হিসেবে আমাকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছে।

যুবরাজ শামীম
ছবি : সংগৃহীত

প্রশ্ন :

উৎসব কর্তৃপক্ষ, বিচারকেরা আপনার ছবি দেখে কী বললেন?

সবাই ‘আদিম’ দেখে মুগ্ধ। বিচারকেরা বলেছেন, এতটা ‘জীবন্ত’ ছবি তাঁরা আগে দেখেননি। সমাপনী অনুষ্ঠানের আগে যখন লালগালিচায় হাঁটি, আলোকচিত্রীরা পাত্তা দিচ্ছিলেন না। কিন্তু পুরস্কার পাওয়ার পর যখন বের হলাম, সবাই রীতিমতো ঝাঁপিয়ে পড়লেন। একের পর এক সাক্ষাৎকার, ছবির জন্য পোজ—আমাকে ছাড়তেই চায় না। ফ্লাইট ধরার তাড়া থাকায় আয়োজকেরা একরকম জোর করেই গাড়িতে তুলে দেন।
সিলভার সেন্ট জর্জ অ্যাওয়ার্ডের আগে তো নেটপ্যাক অ্যাওয়ার্ডও জিতেছেন।
জি। এটা গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কার হলেও নেটপ্যাক কিন্তু মস্কো উৎসবের প্রতিযোগিতা বিভাগের পুরস্কার না। এটা নেটপ্যাক নামে একটি সংস্থা সেরা এশীয় ছবিকে দেয়।

আরও পড়ুন

প্রশ্ন :

ছবি নির্মাণের অর্থ জোগাড় করতে আপনাকে সংগ্রাম করতে হয়েছে। সেখান থেকে এই দুই পুরস্কার তো...

(কথা শেষ করতে না দিয়ে) অর্থ নিয়ে আমার সংগ্রাম কিন্তু উৎসবে এসেও শেষ হয়নি।

ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবেও শর্টলিস্টে ছিল ‘আদিম’
ছবি : সংগৃহীত

প্রশ্ন :

সেটা কেমন?

আমার ফেরার কথা ছিল ৩১ আগস্ট। উৎসব কর্তৃপক্ষ জানায়, আমি চাইলে সমাপনী অনুষ্ঠান পর্যন্ত থাকতে পারি (২ সেপ্টেম্বর)। সে ক্ষেত্রে ফ্লাইট বদলের খরচ ওরা দেবে, কিন্তু দুই দিনের থাকা-খাওয়ার খরচ নিজেকেই দিতে হবে। তখন ধন্দে পড়ে যাই। পরে আমার ছবিতে অর্থায়ন করা হেলাল মোখলেস আলম ভাইয়ের সাহায্য চাই। উনি বলেন, টাকা তো সমস্যা না, কিন্তু নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ায় টাকা পাঠানো সম্ভব না। পরে ওনার মাধ্যমে প্রয়াত নিসর্গবিদ দ্বিজেন শর্মার ছেলে মস্কোপ্রবাসী সুমিত শর্মার সঙ্গে যোগাযোগ হয়। উনি সাহায্য করেছেন। তবে এরপরও সমস্যা ছিল।

পরিচালক যুবরাজ শামীম
ছবি : সংগৃহীত

প্রশ্ন :

কী সমস্যা?

লালগালিচায় ব্লেজার পরা বাধ্যতামূলক। আমার তো ব্লেজার নেই, জীবনে কখনো পরিনি। মস্কো যাওয়ার পর মস্কোপ্রবাসী শেফালি আপার সঙ্গে পরিচয় হয়। উনি তাঁর স্বামীর দুটি ব্লেজার আমাকে দেন, নিজের বাসায় ডেকে নিয়ে ভাত রেঁধে খাওয়ান। বলতে পারেন আদিম নির্মাণ থেকে উৎসবে সফর—সবই হয়েছে মানুষের সাহায্যে।

আরও পড়ুন

প্রশ্ন :

‘আদিম’ নিয়ে আর কী পরিকল্পনা? দেশে কবে মুক্তি পাবে?

এশিয়ার একটি পরিচিত উৎসব কর্তৃপক্ষ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। চূড়ান্ত হওয়ার পর জানাব। দেশের মানুষকে কবে ছবিটি দেখাতে পারব, জানি না। কারণ, আমি এখনো পরিচালক সমিতির সদস্য না।

প্রশ্ন :

মস্কো কেমন লাগল?

দারুণ। উৎসবে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি যতটা পারি মেট্রোতে চড়ে ঘুরে বেড়িয়েছি। আগামী বছর হয়তো আবার আসতে হতে পারে।

প্রশ্ন :

কেন?

বড় কিছু একটা হতে পারে। সেটা এখনই প্রকাশ করতে চাই না।

‘আদিম’-এর একটি দৃশ্য
ছবি : সংগৃহীত

প্রশ্ন :

আপনি তো ‘আদিম’-এর সিকুয়েল ‘হাজত’-এর শুটিং শেষ করেছেন।

জি। দেশে ফিরে পোস্ট প্রডাকশনের কাজ শুরু করব। ছবিটির জন্য সহ–প্রযোজকও খুঁজছি।