এখন তো বৃষ্টির সময়, প্রায়ই খিচুড়ি রান্না করতে হয়...

সাধক রাধারমণের জনপ্রিয় গান ‘শ্যাম কালিয়া সোনা বন্ধুরে’ নতুন করে গেয়েছেন সালমা। গত সপ্তাহেই প্রকাশ পায় তাঁর ‘মায়া লাগেরে’সহ দুটি গান। প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে আরও ১০টি গান। এসব নিয়েই প্রথম আলোর মুখোমুখি হলেন এই গায়িকা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মনজুরুল আলম

প্রথম আলো :

আগেও রাধারমণের গান করেছেন। নতুন কী অভিজ্ঞতা হলো?

সালমা: প্রায় ৪ বছর পর আবার রাধারমণের গান করেছি। এমন মানুষের কোনো গান করতে পারাটা ভাগ্যের ব্যাপার। তিনি বাংলাদেশের বড় বাউল সাধক। তাঁর বাণী অমৃত। তাঁর গান গাওয়ার সাহস দেখানোকেই বড় কিছু মনে করি। কারণ, এই গানের সুর বাংলা ভাষাভাষী মানুষের মন ও মননে মিশে আছে। এবারও গানটি গাইতে গিয়ে দর্শক কীভাবে নেবে, ভাবতে হয়েছে।

প্রথম আলো :

গান করার সময় কোন দিকটা বেশি ভেবেছেন?

সালমা: প্রথমত মনে হয়েছে, কোনো কিছুই যেন বাড়তি মনে না হয়। গানটির পুরোনো সুরকে অবশ্যই ঠিক রাখতে হবে। মিউজিক হয়তো কিছুটা মডিফাই করা যায়। গায়কি হয়তো আমার মতো করে করতে পারি; কিন্তু সুরের জায়গায় বেশি সচেতন থাকতে হয়েছে।

মঞ্চে গায়িকা সালমা। ছবি: ফেসবুক থেকে

প্রথম আলো :

এখন তো বর্ষা মৌসুম, স্টেজ শো কম

সালমা: আমাদের শিল্পীদের জন্য এই সময়টা অবসরের। আমরা ভ্যাকেশন মুডে থাকি। তারপরও মাসে দুইটা করে স্টেজ শো করছি। এই সময়ে দুইটা স্টেজ প্রোগ্রাম করব, ভাবতেই পারি না।

প্রথম আলো :

রেকর্ডিং বা স্টেজ শো না থাকলে অবসর কীভাবে কাটে?

সালমা: আমার কোনো অবসর নাই। কাজ না থাকলেও পরিবারে সময় দিতে হয়। ভ্যাকেশন মুডে থাকতে পারি না। বাচ্চার পড়াশোনা দেখভাল করি। কাজ, সংসার, স্বামীকে নিয়েই সময় কেটে যায়।

প্রথম আলো :

রান্না নিয়ে আপনার অভিজ্ঞতা শুনতে চাই...

সালমা: রান্না করতে আমি খুবই পছন্দ করি। দিনে তিনবার স্বামীকে রান্না করে খাওয়াই। এটা আমার ভালো লাগে। কখনো এমনও হয় রান্নাঘরেই কাটে বেশি সময়। প্রায়ই সবার পছন্দের খাবার তৈরি করতে হয়। এখন তো বৃষ্টির সময়। প্রায়ই খিচুড়ি রান্না করতে হয়। সংসারে সময় দেওয়াতেই আমি আনন্দ পাই। নিয়মিত ফেসবুকে পোস্ট দিই বলে অনেকেই মনে করে আমি ফেসবুকেই থাকি। আমি শুধু ফেসবুকে কোনো পোস্ট দিতেই আসি। পোস্ট দেওয়া শেষ হলেই ফেসবুক বন্ধ করে দিই। একটু সময় পেলেই রান্নায় বসে যাই, ইবাদত করি।

গায়িকা সালমা। ছবি: ফেসবুক থেকে

প্রথম আলো :

কখনো কি শুনতে হয়, একই ঘরানার গান করছেন?

সালমা: দর্শক মন কিন্তু সব সময়ই চাইবে নতুন কিছু। শিল্পী হিসেবে সেই চেষ্টা আমাকে করতে হবে। সফলও হচ্ছি। নিয়মিত মৌলিক গান করছি। এর মধ্যে ‘দিল দিওয়ানা’ নামে একটি আইটেম গান করেছি। গানটি দর্শক পছন্দ করেছেন। ভিন্নতা আনতে নিজেও গানের ভিডিওতে ছিলাম। তবে সব মিলিয়ে আপনি যদি বলেন, আমি ক্যারিয়ার নিয়ে খুশি কি না? তাহলে বলব ক্যারিয়ার নিয়ে আমি খুশি না।

প্রথম আলো :

কেন খুশি না?

সালমা: প্রতিনিয়ত চ্যালেঞ্জিং কাজ করতে চাই। নিজের সঙ্গেই নিজের প্রতিযোগিতা করতে চাই। সেখানে যদি ভাবি আমার সেরা প্রাপ্তি পেয়ে গেছি, তাহলে মনে হয় আমার আর কিছু দেওয়ার নাই। তবে শিল্পী হিসেবে মনে করি আমার দেওয়ার অনেক কিছু এখনো বাকি রয়েছে। প্রতিনিয়ত চাই গান দিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে।

পরিবারের সঙ্গে গায়িকা সালমা। ছবি: ফেসবুক থেকে

প্রথম আলো :

সহশিল্পীদের প্রতিযোগী মনে করেন?

সালমা: আমার ১৯ বছরের ক্যারিয়ার। কখনো আমার সহযোগীদের প্রতিযোগী মনে করি না। কারণ, আমি কাউকে নকল করি না। আমার কাছে মনে হয় এখানে পরিশ্রম আর মেধা দরকার। যারা সততার সঙ্গে সাধনা করে দিন শেষে তারাই মূল্যায়ন পায়। যে কারণে কেউ ভালো করছে বলে তাকে হিংসা করতে হবে, তার জায়গায় যেতে হবে, এমনটা মনে করি না। আমি আমার প্রতিযোগী। নিজেকে সব সময় চ্যালেঞ্জিং জায়গায় দাঁড় করাতে পছন্দ করি।

প্রথম আলো :

ভক্তদের সঙ্গে মজার কোনো অভিজ্ঞতা?

সালমা: এমন বহুবার হয়েছে। আমার পাশেই আমার ভক্তরা আমার গান শুনছেন। আমাকে নিয়ে কথা বলছেন। এবারও ‘বন্ধু মায়ার জাদু জানে’ গান নিয়ে ভক্তরা কথা বলছিলেন। গানটির ভিউ ২০ মিলিয়নের বেশি। স্বাভাবিকভাবেই তাঁরা কী বলছেন, শোনার চেষ্টা করি। পরে হঠাৎ করে লক্ষ করি, তাঁরা আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলছেন, আপনি গায়িকা সালমা না?

প্রথম আলো :

ভক্তদের সঙ্গে কথা হয়?

সালমা: বাইরে গেলে মাস্ক পরে থাকি। কখনো মুখ ঢাকা থাকে। কিন্তু ভক্তরা কীভাবে যেন চোখ দেখেই চিনে ফেলে। আমার পাশে তখন যাঁরা থাকেন, তাঁরা বলেন, ‘তিনি অন্য কেউ।’ আমি কোনো কথা বলি না। আমিও আসলে প্রকাশ্যে আসতে চাই না। তাঁরা যে আমাকে ভালোবাসেন, আমাকে ভালোবাসার জায়গায় রাখেন, এটা বুঝতে পারি।

গায়িকা সালমা। ছবি: ফেসবুক থেকে

প্রথম আলো :

সামনে কটি গান আসবে?

সালমা: এরপরে ‘সানাই’ গানটি মুক্তি পাবে। এ ছাড়া ১০টি গান তৈরি করা আছে, সেগুলো এই মাসেই বিভিন্ন সময় মুক্তি পাবে। স্টেজ শো ও নতুন গানের রেকর্ডিং নিয়ে সময়টা কেটে যাবে।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন