‘আমার জন্মের পর নানাভাই হাসপাতালে সোনার চামচ এনে মুখে মধু দিয়েছিলেন’
এ প্রজন্মের অভিনেত্রী রুকাইয়া জাহান চমক ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ ২০১৭’ প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় রানারআপ হন। পরের তিন বছর কোনো কাজে ছিলেন না। ২০২০ সালে আবার অভিনয়ের শুরু। দুই বছরে বেড়েছে পরিচিতি। সম্প্রতি অভিনেত্রী পরিচয়ের বাইরে তাঁর নামের সঙ্গে চলচ্চিত্র পরিচালকও যুক্ত হচ্ছে। মানিকগঞ্জ সরকারি মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস শেষ করা এই অভিনেত্রীর সঙ্গে কথা হলো।
প্রশ্ন :
অভিনয় শুরুর দুই বছরের মাথায় চলচ্চিত্র পরিচালনাও করলেন। ছবিটির কী অবস্থা?
অবস্থা ভালো। শুটিং-পরবর্তী কাজ চলছে। কালার ও আবহ সংগীতের কাজ শেষ। ডি-ঢাকা ড্রাগ ডিলারস নামের এই ছবির ২৬ দিন শুটিং করেছি। অ্যাকশন-ক্রাইম থ্রিলার ধাঁচের ছবিটি ২ ঘণ্টা ৪০ মিনিটের। এটা হলের জন্য বানিয়েছি। এরই মধ্যে আমি একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রও পরিচালনা করেছি। সেটাও আমার খুব পছন্দের একটা কাজ। চিড় নামে ছবিটির অভিনয়শিল্পী ও কলাকুশলী সবাই নারী। আমার নিজেরই প্রতিষ্ঠান স্টার বক্স প্রোডাকশন থেকে বানিয়েছি। ছবিটির দুটি কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন সামিরা খান মাহি ও সেমন্তী। শুরুতে এটি উৎসবে পাঠাব। এরপর ওটিটিতে মুক্তি দেব।
প্রশ্ন :
পরিচালক হতে কেন চেয়েছেন?
আমার মনে হয়, ডিরেক্টরস আর লাইক ম্যাজিশিয়ান। দর্শককে দুই-আড়াই ঘণ্টা বসিয়ে রাখেন। একটা চরিত্র, সেটা কিন্তু বাস্তব নয়, পর্দার ওই আবেগের সঙ্গে দর্শককে ভ্রমণ করানো, চরিত্রের মধ্যে ঢোকানোর বিষয়টা সত্যিই ম্যাজিক। তাই আমি শুরু থেকেই এই ম্যাজিক দেখাতে চেয়েছি।
প্রশ্ন :
পরিচালক হওয়ার পেছনে আপনার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা কে?
আমি একমাত্র সত্যজিৎ রায় দ্বারা অনুপ্রাণিত ও প্রভাবিত। ছোটবেলা থেকে তাঁর সিনেমা দেখে আর বই পড়ে বেড়ে ওঠা। ফেলুদা পড়ার সময় ভাবতাম, ইশ্ আমি যদি ফেলুদার সঙ্গে দার্জিলিং চলে যেতে পারতাম, যদি কাঠমান্ডু চলে যেতে পারতাম। বাংলাদেশে যদি বলি, হুমায়ূন আহমেদের নির্মাণের চেয়ে তাঁর লেখা আমাকে বেশি প্রভাবিত করত। শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যোমকেশও আমার খুব পছন্দের।
প্রশ্ন :
চমক নামটি নিজের দেওয়া নাকি পরিবার থেকে রেখেছে?
আমার বড় মামা জন্মের পর বলেছিলেন, এই মেয়ে চমক দেখাবে। তাই চমক নামটা তিনিই রেখেছেন। সত্যি বলতে কি, আমার জন্ম হয়েছিল সোনার চামচ মুখে দিয়ে। আমার জন্মের পর নানাভাই হাসপাতালে সোনার চামচ এনে মুখে মধু দিয়েছিলেন (হাসি)। মানুষ বলে না, ‘সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্ম হয়েছে’, আমার ক্ষেত্রে সত্যি সত্যিই তা হয়েছিল। (হাসি) আমার মায়ের বংশের প্রথম নাতনি ছিলাম তো, তাই সবার ভীষণ আদরের ছিলাম।
প্রশ্ন :
আপনার জন্ম হয়েছে কোথায়?
আম্মু যখন প্রেগন্যান্ট, তখন নানাভাইয়ের বরিশালের বাড়িতে চলে যায়। বরিশাল সদর হাসপাতালে আমার জন্ম। তবে আমার বেড়ে ওঠা ও পড়াশোনা ঢাকায়। শুরুতে ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে ছিলাম। ক্লাস সেভেনে শিফট হয়ে উত্তরায় চলে আসি। এর পর থেকে সেখানেই আছি।
প্রশ্ন :
চিকিৎসাশাস্ত্রে পড়ে অভিনয়ে আগ্রহী হলেন কীভাবে?
আমি মানিকগঞ্জ সরকারি মেডিকেল কলেজ (বর্তমান নাম কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজ মানিকগঞ্জ) থেকে এমবিবিএস ফাইনাল দিয়েছি। কিন্তু ইন্টার্নশিপ করা হয়নি। এমনিতে আমার লেখালেখির ঝোঁক ছিল। প্রচুর বই পড়তাম। আমি কিন্তু মেডিকেলে পড়ার সময় চিত্রনাট্যও লিখতাম। আস্তে আস্তে লেখালেখিতে আগ্রহ বাড়ে। এরপর উপস্থাপনা করি। তারপর অভিনয়।
প্রশ্ন :
আপনার প্রিয় লেখক কারা?
সত্যজিৎ রায়, হুমায়ূন আহমেদ, স্যার আর্থার কোনান ডয়েল ও অগাথা ক্রিস্টি আমার প্রিয় লেখক।
প্রশ্ন :
দুই বছরে আপনার অভিনীত কাজের সংখ্যা কত?
এখন পর্যন্ত ১০০-এর বেশি নাটক করেছি। এই সময়ে দর্শক ও পরিচালকদের এত ভালোবাসা পেয়েছি, প্রত্যাশা করিনি। ভাবিনি, সবাই এত দ্রুত আপন করে নেবেন।
প্রশ্ন :
কোন কাজটি আপনার পরিচিতি বাড়িয়ে দিয়েছে বলে মনে করেন?
অবশ্যই ‘মহানগর’। অভিনয়জীবনের শুরুতে মহানগর-এর মতো কাজের অংশ হওয়ায় আমাকে কষ্টটাও ওভাবে করতে হয়নি। মহানগর মুক্তির পরই সবাই আমাকে দ্রুত গ্রহণ করেছেন। শুধু বাংলাদেশ নয়, কলকাতা থেকেও অনেকে এই সিরিজের কথা বলেন। কলকাতার মানুষও আমাকে মহানগর দিয়ে চেনেন, নাটক দিয়ে নয়।
প্রশ্ন :
অথচ ‘মহানগর’-এ অল্প সময়ের উপস্থিতি ছিল।
আমার মনে হয়, অভিনয়শিল্পীদের নিজেকে প্রমাণের জন্য একটামাত্র দৃশ্যই যথেষ্ট। সেখানে তো আমার ১০-১২টা দৃশ্য ছিল। (হাসি)। আমার মনে হয়, সঠিকভাবে অভিনয় করতে পারলে, একটা দৃশ্যই সবার মনে গেঁথে যায়। সবাই মনে রাখেন।