শুনছি, অনেকেই এখন গান প্রকাশ করতে চাইছেন না। আবার প্রযোজকও কম...
ইমরান মাহমুদুল : গান কম হচ্ছে, এটা বললে ভুল হবে। আমার কাছে মনে হচ্ছে, এখনো নাটক–সিনেমার জন্য অনেক গান হচ্ছে। তবে প্ল্যাটফর্মটা ভিন্ন হয়ে গেছে। আগে যেমন একটি অডিও গান হতো, সেটার মিউজিক ভিডিও হতো; সেখানে এখন বেশির ভাগ গান নাটক বা সিনেমার জন্যই হচ্ছে। প্রযোজকেরা এখন নাটক, সিনেমার কথা মাথায় রেখেই গানগুলোতে লগ্নি করছেন। আমি এই গানগুলোই করছি। যে কারণে আমার গানের ওপর কোনো প্রভাব ফেলছে না। আমার জায়গা থেকে আমি ভালো আছি। আমি পজিটিভলি দেখতে পাচ্ছি।
প্রথম আলো :
কোন অর্থে পজিটিভ বলছেন?
ইমরান মাহমুদুল : এখন একটি গান অডিও আকারে প্রকাশ করার চেয়ে সিনেমায় গেলে সেটার প্রাধান্যটা বেশি থাকে। অনেক ক্ষেত্রে নাটকের জন্য গান করলে সেটি সিনেমার মতোই জনপ্রিয়তা পায়। আমার কম্পোজিশনে হাবিব ওয়াহিদ ও ন্যান্সির একটি গান গত চার মাসে আড়াই কোটির বেশি ভিউ হয়েছে, শ্রোতাদের মধ্যে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এটা মিউজিক ভিডিও নয়, সিনেমার গানও নয়। এটি নাটকের গান। গান তো হচ্ছেই। সব জায়গাতেই গান করছি। সিনেমা, নাটক, মিউজিক ভিডিও—তিন মাধ্যমেই আমি সরব। এ ছাড়া আমার মিউজিক প্রডিউস করছে ভারতের ‘বিলিভ ইন্ডিয়া’। তাদের সঙ্গে দুই বছরের চুক্তি হয়েছে। আমার কাজের জায়গা থেকে আমি সংগীতের চারপাশটাকে পজিটিভলি দেখি।
আপনার সুর ও সংগীতায়োজনে একসঙ্গে প্রথমবার গাইলেন হাবিব ওয়াহিদ ও ন্যান্সি।
ইমরান মাহমুদুল : নাটকের ডিরেক্টর চেয়েছিলেন, হাবিব ভাইকে দিয়ে একটি গান করাবেন। পরে মনে হয়, হাবিব ভাই ও ন্যান্সি আপু হলে দারুণ হবে। এই জুটি মানেই তো একটা ইমোশন। অনেক দিন পর এই জুটির গান পাবেন দর্শক। হাবিব ভাই আমার গুরু। গুরুর জন্য গান করাটা সব সময়ই স্বপ্নের মতো। কাজটা ছিল চ্যালেঞ্জিং। ‘আমার দিনগুলো সব যায় হারিয়ে আঁধারে’ গানটি পরে শ্রোতৃপ্রিয়তা পেয়েছে।
ফেসবুকে দর্শকদের উদ্দেশে লিখলেন, আপনার সঙ্গে পড়শীর কোন গানগুলো দর্শক বেশি পছন্দ করেন। উল্টো ভক্তরা কেউ কেউ জানতে চেয়েছেন, কোন গানটি আপনার বেশি পছন্দ?
ইমরান মাহমুদুল : সামনে আমাদের একটা গান আসছে। যে কারণে আগেই একটু ভক্তদের জানিয়ে দেওয়া। আমরা বলতে গেলে একই সময়ে ক্যারিয়ার শুরু করেছি। আমাদের গান নিয়ে দর্শকদের আলাদা একটা ভালোবাসা জড়িয়ে রয়েছে। আমাদের জুটির গান পছন্দ করেন দর্শক। যে কারণে আমি আর পড়শী যত গান করেছি, তার প্রায় সবই জনপ্রিয়। এর মধ্যে ‘জনম জনম’ আমার ভালো লাগে। এটি পড়শীরও পছন্দের গান যতটা জানি। পড়শীর গাওয়া সর্বাধিক ভিউর একটি গান। ২০১৩ সালে গানটি প্রকাশ পায়। গানটির মধ্যে আলাদা একটা ইমোশন জড়িয়ে রয়েছে। এটাই পছন্দ হওয়ার কারণ বলে মনে করি।
প্রথম আলো :
গান জনপ্রিয় হতেই হবে, এমন কোনো চাপ কখনো নিজের মধ্যে তৈরি হয়?
ইমরান মাহমুদুল : এমনটা কখনোই ভাবি না। আমি চেষ্টা করি একটি গান থেকে আরেকটি গান বেটার করার। এটাকে চ্যালেঞ্জ মনে হয়। আমার কনফিডেন্স থাকে, গানটি দর্শক পছন্দ করবেন। প্রেশার হিসেবে নিলে গান হয় না। এটা চাপ নয়, দায়িত্ব।
গানের মন্তব্য থাকে হাজার হাজার, পড়ে দেখেন?
ইমরান মাহমুদুল : আমি গানের কমেন্ট পড়ি। কমেন্টস পড়লে বুঝতে পারি, দর্শক কোন জায়গাটায় সমস্যা পাচ্ছেন, কোন জায়গাটা বেশি পছন্দ করছেন। সে হিসাব কষে নিতে হয় পরের গানের জন্য। এটাই আমাকে একটি গান থেকে আরেকটি গানকে বেটার করতে সহায়তা করে।
প্রথম আলো :
শাকিব খানের কণ্ঠে আপনার অনেক গান জনপ্রিয়...
ইমরান মাহমুদুল : শাকিব ভাই আমার সিনেমার গানের জন্য একটা ইমোশন। এ কারণেই বলছি, আমার প্লেব্যাক ক্যারিয়ারের যাত্রাই শুরু হয়েছে শাকিব ভাইয়ের সিনেমা দিয়ে। ২০০৮ সালে ‘ভালোবাসার লাল গোলাপ’ সিনেমা দিয়ে। পরবর্তী সময়ে ‘দিল দিল’, ‘রাত ভোর’, ‘সুরমা সুরমা’, ‘তুমি আমার জীবন’—এমন বহু গান হয়েছে ভাইয়ের সিনেমায়। আর আমি ভাগ্যবান, ক্যারিয়ারের শুরু থেকে এখনো শাকিব ভাইয়ের সিনেমার জন্য গান করে যাচ্ছি।
আগে বলেছিলেন, শাকিব খান আপনাকে পছন্দ করেন। গান নিয়ে কি কখনো কথা হয়?
ইমরান মাহমুদুল : আমি গর্বিত যে ভাইয়া ব্যক্তিগতভাবে আমাকে পছন্দ করেন। ভাইয়ের ভালোবাসার ছায়ায় সব সময় থাকতে চাই। তিনি আমাদের জন্য একটা সম্মানের নাম। তাঁর সঙ্গে গান নিয়ে প্রচুর কথা হয়, তেমন নয়। আমার একটি ভালো গান হলে আমি শাকিব ভাইয়াকে পাঠিয়ে রাখি। ভাই হয়তো শুনে মন্তব্য করেন। কখনো প্রশংসা করেন, কখনো অন্য রকম কিছু চাইলে বলেন, ‘আরেকটু বেটার করার চেষ্টা করো।’ গান নিয়ে গঠনমূলক কথাই বেশি হয়।
প্রথম আলো :
কখনো মনে হয়, গান একঘেয়েমি তৈরি করছে?
ইমরান মাহমুদুল : গান কখনোই আমার মধ্যে একঘেয়েমি তৈরি করতে পারে না। গানকে আমি ভালোবাসি। গান আমাকে সব সময়ই আনন্দ দেয়। তবে একের পর এক গান করলে একটু রিফ্রেশ হতে চাই। তখন আলাদাভাবে একটু সময় কাটাতে চাই। দেখা যায়, তখন সিনেমা দেখা হয়। আমি প্রচুর সিনেমা দেখি। এ ছাড়া ঘুরতে যাই। পরিবারকে সময় দিই। তবে গান নিয়ে কখনোই বিরক্তি আসে না।
সংগীতাঙ্গনের ভবিষ্যৎ নিয়ে নানা কথা শোনা যায়, কেউ কেউ শঙ্কার কথাও বলেন...
ইমরান মাহমুদুল : ব্যক্তিগতভাবে আমি শঙ্কিত হওয়ার মতো কিছু দেখছি না। গান তো নিয়মিতই হচ্ছে। সিনেমাও হচ্ছে, নাটক হচ্ছে। সেখানে গান নিয়ে আলাদা করে শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। গান বেঁচে থাকবে। দেশের গান নিয়ে আমি আশাবাদী।
প্রথম আলো :
অভিনেত্রী নাজনীন নীহার সঙ্গে ফেসবুকে ছবি পোস্ট করেছেন। আপনাদের পরিচয় কীভাবে?
ইমরান মাহমুদুল : নীহার প্রথম মিউজিক ভিডিও আমার সঙ্গে করা। গানটি ছিল ‘ওরে জান’। পরে আরও গানের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু কাজগুলো হয়ে উঠছিল না। এবার আমরা নতুন গান নিয়ে আসছি। শিরোনাম ‘শুধু তোমাকে ছাড়া’। এর মিউজিক ভিডিওর পরিকল্পনা চলছে। আর নীহা মিডিয়াতে আসার আগেই আমাদের পরিচয়। এখন তো নিয়মিত অভিনয় করছে। ভালোই অভিনয় করে। আমি বরাবর একটা কথাই বলি, নতুন প্রজন্মের মধ্যে নীহা বেশ ভালো করছে, ওর ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী।