শাকিব ভাইয়ের সঙ্গে কাজ করে খুব মজা লাগে

মাহিয়া মাহিখালেদ সরকার
এক সপ্তাহের ব্যবধানে দুটি নতুন সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন মাহিয়া মাহি। আরও কয়েকটি ছবিতে কাজ করার ব্যাপারে আলাপ চলছে। ব্যক্তিগত পছন্দ কোন তারকাকে, কার সঙ্গে কাজ করতে ভালো লাগে তাঁর? নানা বিষয় নিয়ে কথা বললেন তিনি।

প্রশ্ন :

করোনাকালে কেমন আছেন?


এত দিন ভালোই ছিলাম। করোনার আগে সিনেমার শুটিং নিয়ে মানসিক চাপে থাকতাম। আরও চাই, আরও চাই! আল্লাহ, জীবনে তো কিছুই হলো না—এমনটাই ভাবতাম। করোনা বুঝিয়ে দিয়েছে, আমাদের অল্প হলেও চলে। জীবন তো অনেক অল্প দিনের। আমরা চাইলে অনেক অল্পতেও ভালো থাকতে পারি।

মাহিয়া মাহি
খালেদ সরকার

প্রশ্ন :

এই উপলব্ধির পর কী কী করলেন?

পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো বাড়িয়ে দিয়েছি। সময়গুলো খুব উপভোগ করছি। করোনার শুরুর দিকে মনে হতো, আমার তো আর অভিনয় ক্যারিয়ার থাকবে না। আব্বু-আম্মু আর অপুকে (মাহির স্বামী) প্রায়ই বলতাম, সবকিছু তো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তখন তারা বলত, আমরা আছি, কেন চিন্তা করছ। এই যে সাপোর্ট, কেয়ার—এসব আমার ভেতরে নতুন উপলব্ধির জন্ম দিয়েছে। এমনও ভেবেছি, আজকের পর যদি আমার ক্যারিয়ার না–ও থাকে, তাহলেও কোনো আফসোস করব না।

মাহিয়া মাহি
প্রথম আলো

প্রশ্ন :

আপনার কি মনে হয়েছিল, সবকিছু বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, সিনেমাও শেষ?

শুরুর দিকে তেমনটাই মনে হতো। আমাদের তো একমাত্র কাজই ছিল সিনেমায় অভিনয় করা, স্টেজ শো করা। কেন যেন মনে হচ্ছিল, করোনায় এবং করোনার পর মানুষ খেয়ে-পরে বেঁচে থাকা নিয়ে ভাববে। এন্টারটেইনমেন্ট নিয়ে ভাববে না। করোনা চলে যাওয়ার পর সিনেমা হলে যাওয়ার মতো পরিবেশ থাকবে কি না, তা নিয়ে চিন্তা ছিল।

প্রশ্ন :

এক সপ্তাহের ব্যবধানে পরপর দুটি ছবি সাইন করলেন। তার মানে তো চলচ্চিত্র আবার চাঙা হতে যাচ্ছে, তাই না?

যখন ভাবছিলাম আর বুঝি সিনেমার শুটিং করা হবে না, তার কিছুদিন পর ভালো ভালো অনেক ছবির গল্প শুনলাম। কথাবার্তা হচ্ছে অনেকগুলো সিনেমার। ‘নবাব এলএলবি’ ও ‘আশীর্বাদ’ ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পর সত্যি সত্যি ভাবছি, আবার চাঙা হচ্ছে আমাদের চলচ্চিত্র। সবকিছু কাটিয়ে আবার সবাই কাজে মুখর হবে।

প্রশ্ন :

ছবি দুটোতে অভিনয়ের প্রস্তুতি কেমন?

এরই মধ্যে খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে দিয়েছি। কারণ, প্রথমে আমাকে আরও চিকন হতে হবে।

প্রশ্ন :

ওজন বেড়েছে নাকি? কত কেজি কমাতে হবে?

আমি আসলে ওভারওয়েট না। কিন্তু দেখতে মোটা হয়ে গেছি। সেটাই ঠিক করতে হবে। এ রকম মোটা হয়ে দর্শকের সামনে এলে তাঁরা আহত হতে পারেন। নিজেকে নায়িকা করে উপস্থাপন করতে চাইছি।

প্রশ্ন :

করোনায় কি খাওয়াদাওয়ায় বেহিসাবি ছিলেন?

খুব খেয়েছি। ভেবেছি, মরেই তো যাব। ভালোমতো খাওয়াদাওয়া করে নিই। সব সময় আমি ভাত খেতে খুব পছন্দ করি। ভাতের সঙ্গে গরুর মাংস, নানা রকম শাক, শুঁটকি ভর্তা। এ ছাড়াও বিরিয়ানি ও তেহারি খুব পছন্দ।

প্রশ্ন :

এখন তো এসব খাবার বাদ দিতে হচ্ছে?

কদিন ধরে ভাত খাওয়া একদম বাদ দিয়েছি। আপাতত শুটিং যত দিন শেষ না হয়, তত দিন ভাত খাব না। শুটিং শেষ হলে সপ্তাহে এক দিন করে ভাত খাব। নানা রকম জুস খাচ্ছি। ডিমের সাদা অংশ খাচ্ছি।

মাহিয়া মাহি
খালেদ সরকার

প্রশ্ন :

‘নবাব এলএলবি’ ছবিতে আপনি শাকিব খানের বিপরীতে অভিনয় করবেন। এর আগে তাঁর সঙ্গে ‘ভালোবাসা আজকাল’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। শাকিবের সঙ্গে দ্বিতীয় ছবির জন্য এত সময় নিলেন কেন?

করা হয়ে ওঠেনি। আমি সব সময় আমিকেন্দ্রিক ছিলাম। চেষ্টা করতাম আমাকে প্রাধান্য দেওয়া গল্পের ছবিতে কাজ করতে। অন্যদিকে শাকিব ভাইয়ার ছবিগুলোর গল্প তাঁকে ঘিরেই। এ জন্য ব্যাটে-বলে মেলেনি। অনেক দিন পর মনে হলো, সবাই যেহেতু চায়, তাহলে হোক না। সমস্যা কী। করি না। যদিও বোঝা যাচ্ছে এই গল্প নবাবের ওপর, আই মিন শাকিব ভাইকে ঘিরে। তবু এটা করব। ভাবলাম একটা কাজ করা উচিত।

মাহিয়া মাহি
প্রথম আলো

প্রশ্ন :

সহশিল্পী হিসেবে শাকিব খান কেমন?

অভিনয়ের আগে আমি সব সময় দেখি, আমার নায়ক মানুষ হিসেবে কেমন। সেই হিসেবে বলতে পারি, শাকিব ভাই মানুষ হিসেবে সব সময় বেশ মজার, তাঁকে দেখলে সাধারণত সেটা বোঝা যায় না। ‘ভালোবাসা আজকাল’ সিনেমার শুটিংয়ের সময়, আমার আম্মুর সঙ্গে খালি দুষ্টুমি করত। শাকিব ভাইয়ের সঙ্গে কাজ করে খুব মজা লাগে। সবার কাছে তিনি বিগেস্ট স্টার, কিন্তু তাঁর মধ্যে কোনো অহংকার নেই। সব সময় তিনি বেশ সহযোগিতা করেন।

প্রশ্ন :

এবার ভিন্ন প্রসঙ্গে আসি। সিনেমায় অভিনয় করছেন, নিজের উন্নয়নের জন্য কী করছেন?

একটা চরিত্রে কীভাবে নিজেকে দাঁড় করাব নিজেকে, সেই চেষ্টা জরুরি। সেটার জন্য আমাকে পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা বাড়াতে হবে। আমি ‘অক্সিজেন’ নামে একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে কাজ করেছি। এটা দেখে আমি নিজে কেঁদেছি। অথচ নিজের কোনো সিনেমা দেখে কখনো কাঁদিনি। এই এক্সপেরিমেন্টাল কাজ যে করেছি, পরিচালক আমাকে শিখিয়েছেন, কীভাবে চরিত্র হয়ে উঠব। আমার এই ধরনের পরিচালকের সঙ্গে কাজ করা উচিত।

প্রশ্ন :

ছবি দেখেন?

লকডাউনে সারাক্ষণ সিনেমা দেখতাম। ‘মিরাক্যালস ইন সেল নাম্বার সেভেন’ ছবিটি দেখে মুগ্ধ হয়েছি। একটা মানুষ কথা বলতে পারে না, অথচ কীভাবে যে অভিনয় করেছে। ‘গুঞ্জন সাক্সেনা’ ছবিটিও দেখে ভালো লেগেছে। এ রকম সিনেমা দেখলে শরীরের রক্ত টগবগ করে। ভাবতে থাকি, এমন একটা ছবি যদি করতে পারতাম।

মাহিয়া মাহি
খালেদ সরকার

প্রশ্ন :

কিছুদিন পরপর আপনার সংসার ভাঙনের গুঞ্জন উঠছে কেন?

আমার কোনো সমস্যা হয় না। হিরো-হিরোইনদের গসিপ সহ্য করতেই হবে। কিন্তু আমার শ্বশুরবাড়ির লোকজন তো এসবে অভ্যস্ত না। এমন খবর প্রকাশিত হলে তাঁরা একজন আরেকজনের দিকে তাকায়। আর বলে, কী হইছে। তাঁরা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েন। তাঁদের কথা ভেবে খারাপ লাগে।