চুরি করে ধরা পড়েছিলেন এই অভিনেত্রী

সিনেমার দৃশ্যে মেগান ফক্স। আইএমডিবি

তখন মাত্র তিন বছরের শিশু। বুঝতে শেখার আগেই সে বয়সেই মা-বাবার বিচ্ছেদ দেখেছেন। কিছুদিন পরেই মা আবার বিয়ে করেন। পরে মা ও সৎ বাবার সঙ্গে বেড়ে ওঠার দিনগুলো ছিল অসহনীয়। কারণ, বাবার কাছ থেকে মানসিকভাবে নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। কঠিন শাসনে শৈশবের দিনগুলো ভয়ংকর দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। হচ্ছিল অভিনেত্রী মেগান ফক্সের শৈশবের কথা। কিশোরী বয়সেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। এই জীবন থেকে মুক্তি পেতে আয়ের পথ খুঁজতে থাকেন। সেই পথই তাঁকে নিয়ে আসে অভিনয়ে। মডেলিং দিয়ে ক্যারিয়ার গড়া সেই মেগান ফক্সের আজ জন্মদিন। ১৯৮৬ সালের ১৬ মে যুক্তরাষ্ট্রের টেনেসি অঙ্গরাজ্যে তাঁর জন্ম।
এই অভিনেত্রীর শৈশবের স্মৃতি এতটাই দুর্বিষহ যে তিনি দীর্ঘদিন বিষণ্নতায় ভুগছিলেন। পরিবার, সহপাঠীদের কাছ থেকে তিনি দূরে সরে যান। দীর্ঘ সময় তাঁর জীবনটাই ছিল বন্ধুহীন। সাক্ষাৎকারে এই অভিনেত্রী নিজেই এসব কথা স্বীকার করেছিলেন।

মেগান মাত্র পাঁচ বছর বয়স থেকেই নাচের ওপর প্রশিক্ষণ নেন। টানা নাচ শেখার পরে তিনি নিজে উপার্জন করার জন্য মডেলিং শুরু করেন। একের পর এক পুরস্কারও পেতে থাকেন। মডেলিংয়ের জীবনে চাকচিক্য থাকলেও তাঁর মানসিক স্বাস্থ্য ভালো ছিল না। স্কুলে কাটানো দিনগুলো প্রসঙ্গে তিনি জানিয়েছিলেন, স্কুলে প্রায়ই বুলিংয়ের শিকার হতেন। নিজের খাবারটাও ক্লাসরুমে খেতে পারতেন না।

মেগান ফক্স। রয়টার্স

কসমোপলিটন ম্যাগাজিনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মেগান বলেন, ‘আমি হাইস্কুলে কখনোই জনপ্রিয় ছিলাম না। স্কুলে সবাই আমাকে ঘৃণা করত। মনে হতো, আমি পরিত্যক্ত। আমি সব সময় কিছু বন্ধুর সঙ্গে চলতাম। আক্রমণাত্মক ব্যক্তিত্ব ছিল আমার। এ কারণেই মেয়েরা আমাকে পছন্দ করত না। আমার স্কুলজীবনে একটামাত্র বান্ধবী ছিল। এসব কারণেই স্কুলের ওপর থেকে আমার মনটাই উঠে গিয়েছিল। পড়াশোনায় কখনোই সেভাবে মনোযোগ দিতে পারিনি।’

অর্থ উপার্জনের জন্য তিনি মডেলিংয়ে নাম লেখান। চলে আসেন টেনেসি থেকে লস অ্যাঞ্জেলসে। সেই সময় তাঁর হাতে কোনো টাকা ছিল না। মাত্র ১৫ বছর বয়সে তিনি চুরি করে ধরা পড়েন।

মেগান ফক্স। এএফপি

মেগান অনেক চেষ্টার পরে সুযোগ পান সিনেমায় নাম লেখানোর। ‘হলিডে ইন দ্য সান’ নামের সেই সিনেমা ২০০১ সালে ডিভিডিতে মুক্তি পায়। পরে কিছু কাজ করলেও সেগুলোতে তাঁর ছিল খুবই স্বল্প উপস্থিতি, অনেক সময়ই সিনেমার ক্রেডিট লাইনে নামও থাকত না। হাল না ছেড়ে মিউজিক ভিডিও, সিরিজে কাজ করতে থাকেন। এভাবে ২০০৭ সালে ‘ট্রান্সফরমারস’ সিনেমায় অভিনয়ের সুযোগ পান। এই সিনেমার সিকুয়েলের জন্য তাঁকে ৩০ পাউন্ড পর্যন্ত ওজন কমাতে হয়েছিল। সিনেমাটিই তাঁর ভাগ্য বদলে দেয়। এই সিনেমার সিকুয়েলে অভিনয় করে তাঁর নামের আগে যোগ হয় ‘ট্রান্সফরমারস অভিনেত্রী’। পরবর্তী সময় তিনি হয়ে ওঠেন জনপ্রিয় হলিউড অভিনেত্রী। সেই সময় তাঁকে তুলনা করা হতো অ্যাঞ্জেলিনা জোলি সঙ্গে।

শৈশব থেকে নানা জটিলতায় বেড়ে ওঠা এই অভিনেত্রীর ব্যক্তিগত জীবনটাও সুবিধার ছিল না। ১৮ বছর বয়সেই তিনি অভিনেতা ব্রায়ান অস্টিন গ্রিনের প্রেমে পড়েন।

আরও পড়ুন

ক্যারিয়ার পাকাপোক্ত না হওয়ার আগেই প্রেম, বিয়ে, বিচ্ছেদ নিয়ে খবরের শিরোনাম হন, যা তাঁর ক্যারিয়ারকে বাধাগ্রস্ত করে। বাধা–বিপত্তি আর সমালোচনা পেরিয়ে তাঁরা ২০১০ সালে বিয়ে করেন। পরে একের পর এক এই বিবাহবিচ্ছেদ ঘিরে খবরে আসেন তাঁরা। এভাবে সংসারের তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে ১০ বছর সংসার করেন। ২০২০ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়।

সূত্র: ভ্যারাইটি, কসমোপলিটন ম্যাগাজিন ও আইএমডিবি।