২০২৫ সালের সেরা ১০ সিনেমা কোনগুলো

চলতি বছর শেষ হতে আরও দুই মাস বাকি। তবে এর মধ্যেই ২০২৫ সালের সেরা ১৬টি সিনেমার তালিকা প্রকাশ করেছে বিবিসি। বিবিসি অবলম্বনে জেনে নেওয়া যাক সেরা ১০ সিনেমার খবর।

২০২৫ সালের সেরা ১০ সিনেমা কোনগুলো। কোলাজ

১. ‘ওয়েপনস’
এক রাতে ১৭টি শিশু হঠাৎ ঘর ছেড়ে অন্ধকারে হারিয়ে যায়। এরপরই শুরু হয় রহস্য, কোথায় গেল তারা, কেন গেল? ‘বারবারিয়ান’ দিয়ে আলোচনায় আসা পরিচালক জ্যাক ক্রেগার একেবারেই ভিন্নভাবে এই ভৌতিক কাহিনি বুনেছেন। শিশুদের শিক্ষক, প্রধান শিক্ষক, অভিভাবক, পুলিশ—প্রত্যেকের দৃষ্টিকোণ থেকে ধাপে ধাপে এগোতে থাকে কাহিনি। নীরবতা, গা শিউরে ওঠা ভয়ের মুহূর্ত, রক্তাক্ত দৃশ্য, অদ্ভুত হাস্যরস—সবকিছুর অনন্য মিশ্রণে ছবিটি হয়ে উঠেছে ভিন্নধর্মী হরর। ৮ আগস্ট মুক্তির পর জ্যাক ক্রেগারের সাইকোলজিক্যাল হরর ও ডার্ক কমেডি ঘরানার সিনেমাটি সমালোচকদের ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছে। বক্স অফিসেও পেয়েছে ঈর্ষণীয় সাফল্য। ৩৮ মিলিয়ন বাজেটের সিনেমাটি বিশ্বব্যাপী আয় করেছে ২৬৭ মিলিয়ন ডলারের বেশি।

‘ওয়েপনস’ সিনেমার দৃশ্য। আইএমডিবি

২. ‘হায়েস্ট টু লোয়েস্ট’
স্পাইক লি পরিচালিত এই থ্রিলারে অভিনয় করেছেন ডেনজেল ওয়াশিংটন ও জেফরি রাইট। আকিরা কুরোসাওয়ার ‘হাই অ্যান্ড লো’ থেকে অনুপ্রাণিত হলেও সিনেমাটিজুড়ে স্পাইক লির ছাপ স্পষ্ট। একজন সংগীত ব্যবসায়ীর ছেলেকে অপহরণ ঘিরে কাহিনি, যেখানে বর্ণ, শ্রেণি, নৈতিক দ্বন্দ্ব—সব একসঙ্গে মিশে গেছে তীব্র ভিজ্যুয়াল ও প্রাণবন্ত সংগীতে। ডেনজেল ওয়াশিংটন এখানে ডেভিড কিং নামের এক মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির বড় ব্যবসায়ীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন, যাঁর কিশোর ছেলে অপহরণের শিকার হয়, যদিও পরে জানা যায় যে অপহরণকারী ভুলবশত কিং-এর সহকারীর (জেফ্রি রাইট) ছেলেকে নিয়ে গেছে।

‘হায়েস্ট টু লোয়েস্ট’ সিনেমার দৃশ্য। আইএমডিবি

সে অর্থে, আর্থিক সমস্যায় থাকা কিং কি অন্য কারও সন্তানের জন্য টাকা দেবে? এই নৈতিক দ্বিধা স্পাইক লি ফুটিয়ে তুলেছেন। লির সিনেমায় যেমন থাকে, এখানে বর্ণ ও শ্রেণি বৈষম্যকে সামাজিক সমস্যা হিসেবে গভীরভাবে তুলে ধরা হয়েছে।

৩. ‘ব্রিং হার ব্যাক’
অস্ট্রেলিয়ার যমজ পরিচালক ড্যানি ও মাইকেল ফিলিপো আবারও দেখালেন তাঁদের প্রতিভা। ইউটিউবে হরর ভিডিও বানিয়ে দুনিয়াজুড়ে শোরগোল ফেলে দিয়েছেন। জিতেছেন বহু পুরস্কার। ২০২৩ সালে তাঁরা সুপারন্যাচারাল হরর সিনেমা ‘টক টু মি’ বানিয়ে চমকে দেন। সানড্যান্স উৎসবে প্রিমিয়ারের পর দুনিয়াজুড়ে হইচই পড়ে যায়। দুই বছরের বিরতির পর এবার তাঁরা হাজির ‘ব্রিং হার ব্যাক’ নিয়ে।

‘ব্রিং হার ব্যাক’ সিনেমার দৃশ্য। আইএমডিবি

ঘটনাস্থল দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার শহরতলি অ্যাডিলেড। আলো–ছায়া বুঝতে পারলেও আইনগতভাবে অন্ধ পাইপার (সোরা ওং) ও তার বড় ভাই অ্যান্ডি (বিলি ব্যারেট) একদিন বাড়ি ফিরে দেখে, তাদের বাবা বাথরুমে পড়ে আছেন কোনো একধরনের খিঁচুনিতে আক্রান্ত হয়ে। মারা গেছেন অনেকক্ষণ আগেই। দুই ভাই–বোন এতিম হয়। বয়সে প্রায় ১৮ ছোঁয়া অ্যান্ডি ঠিক করে, যত দিন না সে পাইপারের অভিভাবকত্ব আইনিভাবে নিতে পারছে, একসঙ্গেই থাকবে। কিন্তু অ্যান্ডির ১৮ বছর হওয়ার আগপর্যন্ত সরকারি নিয়মে তাদের একজন পালক মা প্রয়োজন। সেই পালক মা লরা (স্যালি হকিন্স)। অভিজ্ঞ শিশু মনোরোগবিশেষজ্ঞ ও সমাজকর্মী। তার বড় নির্জন বাড়িতে দুই ভাই–বোন হাজির হয়।
শুরু থেকেই লরা যেন অদ্ভুত রকম আনন্দিত। হাসিমুখ, অতিরিক্ত আদর—যা অদ্ভুত ঠেকে। লরার একটি কন্যা ছিল, অন্ধ। যে রহস্যজনকভাবে মারা গেছে। বোঝা যায়, সে জন্যই হয়তো পাইপারকে নিয়ে অতি উচ্ছ্বসিত। পাইপারকে পেয়ে নিজের মেয়েকে হারানোর কষ্ট ভুলতে চাইছে। লরা ছাড়াও বাড়িতে আছে তার দত্তক নেওয়া সন্তান অলিভার (জোনা রেন ফিলিপস)। কিন্তু এই অলিভারের কী যেন ঝামেলা আছে। নিঃশব্দ, সাদা চোখ, গালের নিচে দাগ আর এক অন্ধকার গহ্বরের মতো দৃষ্টিভঙ্গি। কী চায় সে? বোনকে নিয়ে অ্যান্ডি এ কোথায় এসে হাজির হলো? ধীরে ধীরে খোলাসা হতে থাকে রহস্য।

৪. ‘ম্যাটেরিয়ালিস্টস’
সেলিন সংয়ের এই চলচ্চিত্র আধুনিক যুগে টাকার সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্ককে নতুনভাবে তুলে ধরেছে। ডাকোটা জনসন এক পেশাদার ম্যাচমেকারের চরিত্রে, যিনি নিজের জীবনে দুই পুরুষের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। একদিকে ক্রিস ইভানস-সংগ্রামী অভিনেতা; অন্যদিকে পেদ্রো প্যাসকলকে দেখা গেছে এক ধনকুবের চরিত্রে। ২০২৩ সালে এই নির্মাতার সিনেমা ‘পাস্ট লাইভস’ ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়।

‘ম্যাটেরিয়ালিস্টস’ সিনেমার দৃশ্য। আইএমডিবি

এবারেরটি ততটা না হলেও মোটাদাগে পছন্দ করেছেন বেশির ভাগ দর্শক-সমালোচক।
অর্থ সম্পর্কের ক্ষেত্রে কতটা প্রভাব ফেলে, তা নিয়ে নির্মাতা সংয়ের বাস্তবমুখী, ন্যায়পরায়ণ দৃষ্টিভঙ্গি থাকলেও তিনি কখনো প্রেমকে নিয়ে কুণ্ঠিত হননি। সেটারই প্রতিফল ঘটেছে পর্দায়।

‘দ্য ব্যালেড অব ওয়েলেস আইল্যান্ড’ সিনেমার দৃশ্য। আইএমডিবি

৫. ‘দ্য ব্যালেড অব ওয়েলেস আইল্যান্ড’
ব্রিটিশ কমেডি, যেখানে এক লটারিজয়ী তাঁর প্রিয় ফোক ব্যান্ডকে আবার একত্র করতে চান। টম বাসডেন, টিম কি ও ক্যারি মালিগান অভিনীত ছবিটি আবেগ, নস্টালজিয়া আর হাস্যরসে ভরপুর। জেমস গ্রিফিতের সিনেমাটি চলতি বছরের জানুয়ারিতে সানড্যান্স উৎসবে প্রিমিয়ারের পর ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়।

৬. ‘লারকার’
সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে ভক্তি থেকে অন্ধভক্তি, সেখান থেকে বিপজ্জনক আসক্তি—এই মনস্তাত্ত্বিক থ্রিলার সেই সম্পর্ককে চমৎকারভাবে বিশ্লেষণ করেছে। একজন দোকানকর্মী হঠাৎ এক পপস্টারের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন আর তারপরই শুরু হয় ভয়ংকর পরিণতি। এ ছবিও সানড্যান্সের প্রিমিয়ারের পর আলোচনায় আসে। অ্যালেক্স রাসেল পরিচালিত এ সিনেমায় অভিনয় করেছেন থিওডোর পেলেরিন ও আচি মেডেকোয়ে।

‘লারকার’ সিনেমার দৃশ্য। আইএমডিবি

৭. ‘কম্প্যানিয়ন’
আপনার পার্টনারের মধ্যে কোনো ঝুট-ঝামেলা নেই। সে আপনার সব কথা শোনে, ঝগড়া করে না, আর যখন ইচ্ছা তাকে ‘মিউট’ করে রাখা যায়। স্বপ্নের মতো লাগছে? সিনেমাটি আপনাকে এই স্বপ্ন দেখাবে, আর তারপর এমন দুঃস্বপ্ন দেবে যে আপনি আপনার সাধারণ, ঝগড়াটে পার্টনারকেই জড়িয়ে ধরতে চাইবেন! গল্পটা শুরু হয় খুবই সাধারণ এক দম্পতি আইরিস আর জশকে নিয়ে। বন্ধুদের সঙ্গে এক নির্জন কেবিনে ছুটি কাটাতে যায় তারা।

‘কম্প্যানিয়ন’ সিনেমার দৃশ্য। আইএমডিবি

প্রথম দেখায় মনে হবে, আহা! কী মিষ্টি প্রেম। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই বুঝতে পারবেন, এই ‘প্রেমের’ ভেতরে একটা বড়সড় ‘টেকনিক্যাল’ গলদ আছে। এমন গল্প নিয়ে ড্রু হ্যানককের প্রথম সিনেমা, যা একই সঙ্গে সায়েন্স–ফিকশন, কমেডি ও থ্রিলারের মিশেল। টেক-স্যাটায়ারের জন্য প্রশংসিত হয়েছে সিনেমাটি। এতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন সোফি থ্যাকচার। এ বছরের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত মার্কিন ইন্ডি সিনেমার একটি ‘কম্প্যানিয়ন’।

আরও পড়ুন

৮. ‘সিনার্স’
রায়ান কুগলারের নতুন চলচ্চিত্র, যেখানে মাইকেল বি জর্ডান অভিনয় করেছেন যুগল চরিত্রে। ১৯৩২ সালের মিসিসিপিকে পটভূমি করে এটি একদিকে যুগান্তকারী ভ্যাম্পায়ার ফিল্ম, অন্যদিকে বর্ণবাদ, পরিবার, কুসংস্কার আর ব্লুজ সংগীতের আখ্যান। চলতি বছরের অন্যতম আলোচিত এই হরর সিনেমায় বাণিজ্যিকভাবেও সফল হয়েছে। ১০০ মিলিয়ন ডলার বাজেটের সিনেমাটি বক্স অফিস থেকে ৩৬৭ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে।

‘সিনার্স’ সিনেমার দৃশ্য। আইএমডিবি

৯. ‘আর্ট ফর এভরিবডি’
শিল্পী টমাস কিনকেডের জীবন ও ক্যারিয়ার ঘিরে নির্মিত এই তথ্যচিত্রে উঠে এসেছে ‘শিল্প’ বলতে কী বোঝায় সেই বিতর্ক। একজন ধর্মভীরু পারিবারিক মানুষ হিসেবে নিজের ইমেজ ধরে রাখলেও তথ্যচিত্রটিতে কিনকেডের অন্ধকার দিকও উঠে এসেছে।

‘ওয়ারফেয়ার’ সিনেমার দৃশ্য। আইএমডিবি

১০. ‘ওয়ারফেয়ার’
অ্যালেক্স গারল্যান্ড ও রে মেনডোজার যৌথ নির্মাণে তৈরি হয়েছে যুদ্ধনির্ভর ড্রামা সিনেমাটি। যুক্তরাষ্ট্রের নেভি সিলস ও আল-কায়েদার মধ্যে এক যুদ্ধের পটভূমিতে তৈরি ছবিটি দর্শককে একেবারে যুদ্ধক্ষেত্রের ভেতরে নিয়ে যায়। কোনো প্রেক্ষাপট বা রাজনৈতিক বক্তব্য নয়, এখানে শুধু যুদ্ধের ভয়াবহতা, যন্ত্রণার আর্তনাদ আর টিকে থাকার লড়াই দেখানো হয়েছে।