যেভাবে আবেদনময়ী অভিনেত্রী হয়ে উঠেছিলেন তিনি

রাকুয়েল ওয়েলচ
টুইটার

কারও কাছে তিনি ষাট ও সত্তরের দশকের সবচেয়ে আবেদনময়ী অভিনেত্রী। কেউ বলেন, তিনি ছিলেন বলেই মেরিলিন মনরোর মৃত্যুর পর আবেদনময়ী অভিনেত্রীর তকমা যোগ্য ব্যক্তির হাতে পড়েছিল। তবে নিজেকে ‘আবেদনময়ী’ তারকার চেয়ে বেশি কিছু মনে করতেন তিনি। সেই রাকুয়েল ওয়েলচ আর নেই। গত বুধবার ৮২ বছর বয়সে মারা গেছেন এই মার্কিন অভিনেত্রী।

তবে তাঁর ক্যারিয়ারের গতিপথ বদলে যায় ১৯৬৬ সালের সিনেমা ‘ওয়ান মিলিয়ন ইয়ারস বিসি’র পোস্টার মুক্তির পর
ছবি : সংগৃহীত

রাকুয়েল ওয়েলচকে বাংলাদেশের মানুষের ভালোই চেনার কথা। কারণ, তাঁর সেই বিখ্যাত সিনেমা ‘ওয়ান মিলিয়ন ইয়ারস বিসি’ প্রদর্শিত হয়েছে ঢাকার মধুমিতা হলেও। অনেক সমালোচকের মতে, সিনেমা হিসেবে ‘ওয়ান মিলিয়ন ইয়ারস বিসি’ নেহাত সাদামাটা। তবে ছবির পোস্টারে হরিণের চামড়ার বিকিনি পরে ঝড় তুলেছিলেন অভিনেত্রী। তখন ইন্টারনেটের বিস্তার ছিল না, তারপরও রাতারাতি রাকুয়েলের বৈশ্বিক তারকা হয়ে ওঠা আটকায়নি। সম্ভবত তিনিই প্রথম অভিনেত্রী, যিনি কেবল সিনেমার পোস্টার দিয়েই রাতারাতি তারকাখ্যাতি পান। পোস্টারটি দ্রুতই পরিণত হয় সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া পোস্টারে। পরে যা হয়ে ওঠে সিনেমার ইতিহাসেরই অংশ। ১৯৬৬ সালে মুক্তি পাওয়া সিনেমাটি যে তাঁর ক্যারিয়ারের গতিপথ বদলে দেয়, বলা বাহুল্য।

রাকুয়েল ওয়েলচ
রয়টার্স ফাইল ছবি

আবেদনময়ী তকমা সেঁটে যাওয়ায় একই ধরনের বহু চরিত্রই করেন রাকুয়েল। তবে এগুলোর মধ্যেও কিছু ছিল ব্যতিক্রম। এই যেমন বলা যায় হানড্রেড রাইফেলস-এর কথা। ছবিটিতে জিম ব্রাউনের সঙ্গে একটি অন্তরঙ্গ দৃশ্য করেন তিনি, যা ছিল হলিউডে দুই বর্ণের দুই অভিনয়শিল্পীর মধ্যে প্রথম কোনো ঘনিষ্ঠ দৃশ্য। একইভাবে বলা যায় ময়রা ব্রেকিনরিজ-এর কথাও, ছবিটিতে ট্রান্সজেন্ডার নায়িকার চরিত্র করেন তিনি।

রাকুয়েল ওয়েলচ
এএফপি ফাইল ছবি

পাঁচ দশকের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ৩০টি সিনেমা ও ৫০টি টিভি শো করেন রাকুয়েল ওয়েলচ। এর মধ্যে ‘লেডি ইন সিমেন্ট’ সিনেমায় ফ্রাঙ্ক সিনাত্রার প্রেমিকার চরিত্রে অভিনয়ের কথা উল্লেখ করা যায়। ১৯৭৩ সালে মুক্তি পাওয়া ‘দ্য থ্রি মাস্কেটিয়ার্স’ও তাঁর ক্যারিয়ারের উল্লেখযোগ্য সিনেমা, ছবিটির জন্য গোল্ডেন গ্লোব জেতেন তিনি। টিভি সিরিজ ‘রাইট টু ডাই’ তাঁর আরেকটি উল্লেখযোগ্য কাজ, যেটির জন্য গোল্ডেন গ্লোবে মনোনয়ন পান।

আরও পড়ুন

ষাট ও সত্তরের দশকের দর্শকের কাছে আবেদনময়ী তারকা বলতে রাকুয়েল ওয়েলচের নামই প্রথম মাথায় আসে। তবে এই আবেদনময়ী পরিচয় নিয়ে আক্ষেপ ছিল অভিনেত্রীর। সেটা কতটা, তা বোঝা যায় ২০১০ সালে প্রকাশিত তাঁর আত্মজীবনী ‘বিয়ন্ড দ্য ক্লিভেজ’ পড়লেই। ‘সেই বিখ্যাত পোস্টারটি মুক্তির পর একঝটকায় আমার জীবনটা বদলে গেল। আমার ভেতরের সত্যিকারের আমিটা হারিয়ে গেল। সেক্স সিম্বল তকমাটি যেন সব আড়াল করে দিল,’ লিখেছেন রাকুয়েল।

রাকুয়েল ওয়েলচ
এএফপি ফাইল ছবি

১৯৪০ সালের ৫ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে জন্ম রাকুয়েল ওয়েলচের। বড় হয়েছেন ক্যালিফোর্নিয়ায়। টিনএজ বয়সেই মডেল হিসেবে নাম কামিয়েছিলেন। অভিনয় ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে অবশ্য যেনতেন ধরনের চরিত্র করেছেন। ১৯৬৬ সালে টোয়েন্টিথ সেঞ্চুরি ফক্সের ‘ফ্যান্টাস্টিক ভয়েজ’ মুক্তির পর পরিচিতি পান। তাঁর অভিনীত সর্বশেষ সিনেমা ২০১৭ সালে মুক্তি পাওয়া ‘হাউ টু বি আ লাতিন লাভার’।

ক্যারিয়ারের পরের দিকে পরচুলা, গয়না, প্রসাধনসহ নানা ধরনের ব্যবসায় জড়িয়েছেন রাকুয়েল ওয়েলচ। তাঁর দাম্পত্য জীবন খুব একটা সুখের হয়নি। ২০০৮ সালে চতুর্থ স্বামী রিচি পালমারের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর আর বিয়ে করেননি তিনি। ছেলে ড্যামন ওয়েলচ ও কন্যা তাহনি ওয়েলচকে রেখে গেছেন রাকুয়েল।

আরও পড়ুন