গ্রেগরি পেক: হলিউডের স্বর্ণযুগের ‘বিজ্ঞাপন’

গ্রেগরি পেক (৫ এপ্রিল ১৯১৬–১২ জুন ২০০৩)

১৯৪১ সালে ‘দ্য ডক্টরস ডিলেমা’ দিয়ে শুরু হয় পেকের মঞ্চ ক্যারিয়ার। ব্রডওয়ে অভিনয়ের সূচনা হয় ১৯৪২ সালে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলার সময় পেকের ব্যাপক চাহিদা। কারণ, নাচের প্রশিক্ষণের সময় পিঠে ব্যথা পাওয়ায় সেনাবাহিনী থেকে অব্যাহতি পান। সিনেমায় আসার আগে ৫০টি মঞ্চনাটকে অভিনয় করেন পেক।

প্রায় পূর্ণ এক জীবন কাটিয়েছেন। ২০০৩ সালের এই ১২ জুন ৮৭ বছর বয়সে ঘুমের মধ্যে চিরঘুমে চলে গিয়েছেন তিনি। দিনপঞ্জিকার হিসাবে দুই দশকও পূর্ণ হয়নি। তবে দুই দশক তো ছাড়, দশকের পর দশক পেরিয়ে গেলেও গ্রেগরি পেককে ভোলে কার সাধ্য। একের পর এক ব্যবসাসফল ছবি উপহার দেওয়া, পুরস্কার পাওয়া অভিনেতার সংখ্যা কম নেই। কিন্তু তাঁর মতো হলিউডের স্বর্ণযুগের ‘বিজ্ঞাপন’ হয়ে ওঠার তারকা আর কে আছেন!
ক্যালিফোর্নিয়ার বার্কলি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় গ্রেগরি পেকের জীবন বদলে যায়। ছিলেন ইয়া লম্বা—৬ ফুট ৩ ইঞ্চি। কণ্ঠও ছিল দারুণ। উচ্চতা আর কণ্ঠ দিয়ে মুহূর্তেই নজর কাড়তেন সবার। পাবলিক স্পিকিং কোর্সে অংশ নেওয়ার পর ঠিক করেন, অভিনয় করবেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটারে কাজ করার সময় একজন অভিনয় প্রশিক্ষক তাঁর মধ্যে অভিনয়ের সম্ভাবনা দেখতে পান। এরপর প্রখ্যাত থিয়েটার পরিচালক এডউইন ডুয়ের তাঁকে সুযোগ দেন। নিজের প্রতিভা দেখানোর বড় মঞ্চ পেয়ে যান পেক। ক্যারিয়ারের অনেক পরের দিকে পেছন ফিরে তাকিয়ে বার্কলিতে কাটানো সময়কে জীবনের বিশেষ অভিজ্ঞতা বলে উল্লেখ করেন এই অভিনেতা। ১৯৯৬ সালে বার্কলির সেই অভিনয় প্রশিক্ষকের স্মরণে ২৫ হাজার ডলার অনুদান দেন তিনি।

১৯৪১ সালে ‘দ্য ডক্টরস ডিলেমা’ দিয়ে শুরু হয় পেকের মঞ্চ ক্যারিয়ার
ছবি: সংগৃহীত
আরও পড়ুন
২০০৩ সালের এই ১২ জুন ৮৭ বছর বয়সে ঘুমের মধ্যে চিরঘুমে চলে গিয়েছেন গ্রেগরি পেক
ছবি: সংগৃহীত

নাটকে মজে গিয়ে পড়াশোনা শেষ করতে পারছিলেন না পেক। একটা কোর্সে আটকে ছিলেন। তাঁর স্নাতক শেষ করা নিয়ে বন্ধুরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। পেক অবশ্য এসব পাত্তা না দিয়ে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যা পাওয়ার, আমি পেয়ে গেছি।’

ক্যালিফোর্নিয়ার বার্কলি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় গ্রেগরি পেকের জীবন বদলে যায়
ছবি: সংগৃহীত

মঞ্চে ব্যাপক সাফল্যের পর ১৯৪৪ সালে ওয়ার-রোমান্স ছবি ‘ডেজ অব গ্লোরি’ দিয়ে বড় পর্দায় যাত্রা শুরু হয় পেকের। তখন কে জানত, পরের তিন দশক ধরে হলিউডে রাজত্ব করবেন তিনি। দ্বিতীয় ছবিতেই নিজের অভিনয় প্রতিভার চূড়ান্ত সক্ষমতা দেখান পেক। ১৯৪৪ সালের সেই ছবি ‘দ্য কিজ অব দ্য কিংডম’-এ তাঁকে ২০ থেকে ৮০ বছর পর্যন্ত বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায়। এই সিনেমা দিয়েই প্রথমবার অস্কার মনোনয়ন পান পেক। প্রায় প্রতিটি ছবিতেই ব্যাপক সাফল্য পেলেও পেকের অভিনয় ক্যারিয়ার অন্য মাত্রা পায় আলফ্রেড হিচককের সঙ্গে ‘স্পেলবাউন্ড’ করার পর।

১৯৫০ এর দশকে কেবল হলিউড নয়, পেক হয়ে ওঠেন সেই সময়ের বিশ্ব চলচ্চিত্রের অন্যতম সেরা তারকা
ছবি: সংগৃহীত

ইনগ্রিড বার্গম্যানের সঙ্গে এই কাজ পেকের ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা। তবে এই হিচককের সঙ্গে কাজ করে মুদ্রার উল্টো পিঠও দেখেন পেক। ১৯৪৭ সালে মুক্তি পাওয়া পরিচালকের সঙ্গে দ্বিতীয় ও শেষ কাজ ‘দ্য প্যারাডাইন কেস’ বক্স অফিসে ততটা সাফল্য পাননি। কেবল এই ছবিই নয়, পরপর তিনটি ছবি ফ্লপ হয়। তবে পেক ঘুরে দাঁড়ান দ্রুতই। কেবল হলিউড নয়, হয়ে ওঠেন সেই সময়ের বিশ্ব চলচ্চিত্রের অন্যতম সেরা তারকা।

স্বীকৃতি আর পুরস্কার দিয়ে গ্রেগরি পেককে বোঝানো যাবে না
ছবি: সংগৃহীত
১৯৯৯ সালে আমেরিকান ফিল্ম ইনস্টিটিউট পেককে হলিউডের স্বর্ণযুগের সেরা ২৫ অভিনেতার তালিকায় রাখে
ছবি: সংগৃহীত

একে একে ‘দ্য গানফাইটার’, ‘দ্য শোজ অব কিলিমানজারো’, ‘রোমান হলিডে’, ‘কেপ ফিয়ার’, ‘টু কিল আ মকিংবার্ড’ সিনেমায় দেখা যায় গ্রেগরি পেককে।
অভিনয়ের সঙ্গে রাজনীতিতেও সরব ছিলেন পেক। জীবনভর ছিলেন ডেমোক্রেট সমর্থক। এর বাইরে জড়িত ছিলেন নানা সামাজিক কর্মকাণ্ডেও। কিংবদন্তি পপ গায়ক মাইকেল জ্যাকসন ছিলেন তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু। মাইকেলের বিখ্যাত র‍্যাঞ্চে দুই বন্ধু একসঙ্গে ঘুরে বেড়াতেন ঘোড়ায় চড়ে।
১৯৯৯ সালে আমেরিকান ফিল্ম ইনস্টিটিউট পেককে হলিউডের স্বর্ণযুগের সেরা ২৫ অভিনেতার তালিকায় রাখে, যার মধ্যে তিনি ছিলেন ১২তম। তবে স্বীকৃতি আর পুরস্কার দিয়ে গ্রেগরি পেককে বোঝানো যাবে না। তিনি এমন একজন, যাঁকে ভুলে যাওয়া সিনেমাপ্রেমীদের জন্য প্রায় অসম্ভব।