চার্চে পাদরি খুন! হত্যারহস্য নিয়ে জমজমাট এক সিনেমা

‘ওয়েক আপ ডেড ম্যান’–এর দৃশ্য। নেটফ্লিক্স

মার্ডার-মিস্ট্রি পছন্দ করেন? আগাথা ক্রিস্টি প্রিয়? তাহলে এই সিনেমা আপনার জন্যই। ২০১৯ সালে নাইভস আউট দিয়ে শুরু হয় এই ফ্র্যাঞ্চাইজির যাত্রা, ২০২২ সালে আসা ‘গ্লাস অনিয়ন’-এর পর এবার এসেছে তৃতীয়টি—‘ওয়েক আপ ডেড ম্যান’। ১২ ডিসেম্বর নেটফ্লিক্সে মুক্তির পর থেকেই সাড়া ফেলেছে রিয়ান জনসনের সিনেমাটি। প্ল্যাটফর্মটির বৈশ্বিক টপ চার্টেরও শীর্ষে আছে এটি।

একনজরে
সিনেমা: ‘ওয়েক আপ ডেড ম্যান’
ধরন: মার্ডার-মিস্ট্রি
পরিচালনা: রিয়ান জনসন
অভিনয়: ড্যানিয়েল ক্রেগ, জশ ওকনর, গ্লেন ক্লোজ, জশ ব্রোলিন, মিলা কুনিস, জেরেমি রেনার, কেরি ওয়াশিংটন, অ্যান্ড্রু স্কট
স্ট্রিমিং: নেটফ্লিক্স
দৈর্ঘ্য: ২ ঘণ্টা ২৪ মিনিট

নিউইয়র্কের আপস্টেট অঞ্চলের এক ছোট শহর। সেখানকার এক চার্চের পাদরি জেফারসন উইক্স (জশ ব্রোলিন)। ইয়া লম্বা, ধূসর চুল আর দাঁড়িতে বেশ গম্ভীর দেখতে। জেফারসন স্বভাবে ডানপন্থী কর্তৃত্বপরায়ণ এক ধর্মযাজক; মঞ্চে দাঁড়িয়ে বজ্রকণ্ঠে নিজের রক্ষণশীল মতাদর্শ প্রচার করেন। এই চার্চেই হাজির হন জাড ডুপেন্টিসি (জশ ওকনর), এক তরুণ যাজক। জাড আগে ছিলেন বক্সার, বক্সিং রিংয়ে একজনকে ঘুষিতে মেরে ফেলার পর আত্মদহনে পুড়ছিলেন।

‘ওয়েক আপ ডেড ম্যান’–এর দৃশ্য। নেটফ্লিক্স

নিউইয়র্ক থেকে এই বিরান অঞ্চলে আসেন নতুন শুরুর আসায়। কিন্তু জেফারসনের সঙ্গে তাঁর দর্শন মেলে না, দ্বন্দ্ব যখন চরমে, তখনই এক ইস্টার সানডের দিন খুন হন জেফারসন। মার্ডার-মিস্ট্রির নিয়ম মেনে জাডকেই প্রধান সন্দেহভাজন হিসেবে দেখানো হয়। হঠাৎই দৃশ্যপটে হাজির হন এই ফ্র্যাঞ্চাইজির প্রাণভোমরা প্রাইভেট ডিটেকটিভ বেনোয়া ব্লাঙ্ক (ড্যানিয়েল ক্রেগ)।

ছবির প্রথম অংশ জেফারসনের ডানপন্থী দর্শনের বিস্তারিত দেখানো হয় কিন্তু তিনি মারা যাওয়ার পরই (বড় কোনো স্পয়লার নয়) তাঁর ছয়-সাতজন ঘনিষ্ঠই হয়ে ওঠেন সন্দেহভাজন। তখনই ছবিটি নতুন মাত্রা পায়, নির্মাতার দর্শনও প্রতিষ্ঠিত হয়

‘ওয়েক আপ ডেড ম্যান’–এর দৃশ্য। নেটফ্লিক্স

হত্যারহস্যে সন্দেহভাজনের তালিকায় আরও আছেন হুইলচেয়ারে বসা সেলোবাদক সিমোন ভিভানে (কেইলি স্পেনি), ব্যর্থ সাই-ফাই লেখক লি রস (অ্যান্ড্রু স্কট), আইনজীবী ভেরা ড্রাভেন (কেরি ওয়াশিংটন), ট্রাম্পপন্থী ইনফ্লুয়েন্সার সাই ড্রাভেন (ড্যারিল ম্যাককরম্যাক), চিকিৎসক ন্যাট শার্প (জেরেমি রেনার), চার্চের গৃহপরিচারিকা মার্থা ডেলাক্রোয়া (গ্লেন ক্লোজ) আর চার্চের আরেক বাসিন্দা স্যামসন হল্ট (থমাস হেডেন চার্চ)।

তাঁদের অনেকেরই জেফারসনকে হত্যার মোটিফ আছে, কিন্তু খুনি কে?
রিয়ান জনসনের ‘নাইভস আউট’ ফ্র্যাঞ্চাইজির নতুন সিনেমাটি যেন এক বাক্স চকলেট—প্রথম স্তরটি মুখে জল এনে দেওয়ার মতো সুস্বাদু, আর দ্বিতীয় স্তরটিও উপভোগ্য। প্রাইভেট ডিটেকটিভ বেনোয়া ব্লাঙ্ক চরিত্রে ড্যানিয়েল ক্রেগ আবার ফিরেছেন, আগের তুলনায় খানিকটা বেশি গম্ভীর মেজাজে। এবার কৌতুকপূর্ণ সংলাপ আর কৃত্রিম সরলতার ভঙ্গি কম; তবে লম্বা চুল আর নিখুঁতভাবে কাটা থ্রি-পিস স্যুটে তিনি দারুণ মানানসই।

‘ওয়েক আপ ডেড ম্যান’–এর দৃশ্য। নেটফ্লিক্স

প্রধান সন্দেহভাজন শান্ত, সংবেদনশীল তরুণ যাজক ফাদার জাড ডুপ্লেন্টিসির চরিত্রে জশ ওকনরের অভিনয় বিশেষভাবে মনে দাগ কাটে, ক্রেগের কথা মনে রেখেও এ সিনেমায় পারফরম্যান্সের বিচারে সম্ভবত তিনিই সেরা। মার্ডার-মিস্ট্রি হলেও এ সিনেমার মেজাজ বাডি মুভির মতোই; যেখানে ব্লাঙ্ক ও জাড একসঙ্গে কাজ করে রহস্য সমাধান করেন।

‘ওয়েক আপ ডেড ম্যান’–এর দৃশ্য। নেটফ্লিক্স

অন্য চরিত্রের শিল্পীরাও ছিলেন নিজেদের সেরা ফর্মে। রিয়ান জনসনের নিয়মিত চিত্রগ্রাহক স্টিভ ইয়েডলিনের কাজও ভালো, পুরোনো নিউইয়র্কের চার্চের নিরুত্তাপ পরিবেশকে দারুণভাবে তুলে এনেছেন। ছবিটি দেখতে সুন্দর লাগে। বব ডুসের সম্পাদনা আর নাথান জনসনের আবহসংগীতও মানানসই।

আরও পড়ুন

নির্মাতা রিয়ান জনসন আগাথা ক্রিস্টির মতো দর্শকদের সামনে ছুড়ে দেন এক ক্ল্যাসিক ‘লকড রুম হু ডান ইট কেস’। তবে এখানে একের পর এক টুইস্টে সন্দেহের আঙুল ঘোরে না। গল্পটি ক্রমেই আরও অদ্ভুত ও জটিল হয়ে ওঠে। আগের ছবিগুলোর মতোই, সব চরিত্র সমান গুরুত্বপূর্ণ বা সমানভাবে হত্যার মোটিভ আছে—এমন নয়।

শেষ দিকে ধীরে ধীরে এর ভেতরের সন্দেহভাজনেরা সামনে আসে, তাদের অপরাধও ধাপে ধাপে প্রকাশ পায়; শেষের চমক দিয়ে পূর্ণতা পায় সিনেমাটি।

‘ওয়েক আপ ডেড ম্যান’–এর দৃশ্য। নেটফ্লিক্স

‘ওয়েক আপ ডেড ম্যান’-এর মূল থিম হলো, কেবল নিজের দলকে রক্ষা করার চেষ্টা করলে আমরা বাঁচতে পারব না; একমাত্র উপায় হলো বাইরে থেকে আগত মানুষদের স্বাগত জানানো। ধারালো চিত্রনাট্য আর দুর্দান্ত নির্মাণে এটি তাই হয়ে উঠেছে চলতি বছর মুক্তি পাওয়া এই ঘরানার অন্যতম সেরা সিনেমা। প্রশ্ন একটাই, পরের কিস্তিগুলোতে নির্মাতা কি এ সিনেমাকে ছাড়িয়ে যেতে পারবেন?