মনস্তাত্ত্বিক ও ভালোবাসার গল্প ‘ক্যাফে ডিজায়ার’

বছর শেষে নতুন চমক নিয়ে আসছে চরকি। আজ রাত আটটায় চরকি অরিজিনাল ফিল্ম ‘ক্যাফে ডিজায়ার’ মুক্তি পাবে। এটি নির্মাণ করেছেন গত বছরের আলোচিত ‘ঊনলৌকিক’ সিরিজের পরিচালক রবিউল আলম রবি। শিবব্রত বর্মনের মনস্তাত্ত্বিক সম্পর্কের গল্প ‘ক্যাফে ডিজায়ার’ তারকাভরপুর। পরিচালক ও লেখক মিলে এর চিত্রনাট্য লিখেছেন।
‘দুধকলা দিয়ে বুকে কালসাপ পুষি, রোজ রাতে তোমার বিষে নীল হয়ে খুশি...’। চরকির ফেসবুক পেজে একটি গানের এই কথা এবং এর সঙ্গে স্থিরচিত্রগুলো দেখে ধারণা করা যায়, ব্যতিক্রম কিছু হতে চলেছে সিনেমাটি। এই শহরের নানা রকম মানুষের কামনা-বাসনার মনস্তাত্ত্বিক গল্প এটি। যেখানে পুরো শহর অন্ধকার করে প্রতি রাতে অভিসারে বের হয় বিদ্যুৎ অফিসের এক কর্মকর্তা। এক উঠতি ব্যবসায়ী নিজের বিবেকের বিরুদ্ধে গিয়ে ক্লায়েন্টের মন রক্ষা করে। এক ট্রাভেল এজেন্ট কৌশলে দেরি করিয়ে দেয় তারই গ্রাহকের ভিসা। এলাকার সবচেয়ে সুন্দর ছেলের মন পেতে গোপনে দৌড় শেখে এক তরুণী।

বাথটাব সারাই করতে এক কলের মিস্ত্রি ঢুকে পড়ে তারই প্রিয় নায়িকার বাসায়। এসব মানুষ সবাই যুক্ত বাসনার অভিন্ন সুতায়—এমনটাই বলতে চেয়েছেন গল্পকার।
এই ওয়েব ফিল্মে অভিনয় করেছেন আজাদ আবুল কালাম, ইন্তেখাব দিনার, সোহেল মণ্ডল, তমা মির্জা, খাইরুল বাসার, শ্যামল মাওলা, সানজিদা প্রীতি, সারিকা সাবরিন, আইশা খান, ফারহানা হামিদ, প্রিয়ন্তী উর্বী, প্রিয়াম অর্চি, বায়েজিদ হক জোয়ারদারস প্রমুখ।

চরকির একাধিক কনটেন্টের সফল অভিনেত্রী তমা মির্জা এবারের ওয়েব ফিল্ম নিয়ে আশাবাদী। তিনি বলেন, ‘এখন আমাদের এখানে বিভিন্ন রকম গল্পের সিনেমা, সিরিজ, কনটেন্ট হচ্ছে। দর্শকদের দেখার ধরন, চাহিদাও পরিবর্তন হয়েছে।’ সহশিল্পীদের নিয়েও উচ্ছ্বসিত তমা মির্জা। বললেন, ‘এই গল্পে সোহেল মণ্ডলের সঙ্গে কাজ করে বেশ মজা পেয়েছি। সহশিল্পী যদি খুব ভালো অভিনেতা হন, তাহলে কাজটা খুব সহজ হয়ে যায়।’ ‘ঊনলৌকিক’–এ সোহেল মণ্ডলের অভিনয় প্রসংশিত হয়েছে। ক্যাফে ডিজায়ার-এ অন্যতম একটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন এ তরুণ অভিনেতা। এবারের অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি বলেন, ‘ঊনলৌকিক-এর পর আবার রবি ভাইয়ের পরিচালনায় কাজ করাটাও খুব আনন্দের ছিল আমার জন্য। সেই সঙ্গে শিবু দাদার মজার গল্প থাকলে আর কী লাগে।’

আরেক তরুণ অভিনেতা খাইরুল বাসারের মতে, ‘“ক্যাফে ডিজায়ার”–এর গল্পটা চাওয়া, না পাওয়ার কানামাছি। রবি ভাই এই গল্পের মধ্য আমাদের মধ্যে খুবই সাধারণ কিন্তু আড়ালে থেকে যায় বা নীরবে ঘটে যায়—এমন সব বিচিত্র ঘটনা বলতে যাচ্ছেন। সহশিল্পী হিসেবে সারিকার সঙ্গে আমার এর আগেও বেশ কিছু কাজ হয়েছে। শুরু থেকেই তাঁকে খুবই সহযোগিতাপূর্ণ মনে হয়েছে আমার। দর্শকের ভালোবাসা আর উৎসাহেই ভালো কিছু ঘটানোর আর তাঁদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা দ্বিগুণ হয়ে ওঠে। “ক্যাফে ডিজায়ার” এমনই এক চেষ্টা।’

ইন্তেখাব দিনারকে এই ছবিতে বিদ্যুৎ অফিসের এক কর্মকর্তার চরিত্রে দেখা যাবে। ইন্তেখাব দিনার জানান, পুরো দুই রাত জেগে তাঁদের কাজটা করতে হয়েছে। তিনি বলেন, ‘কষ্ট হলেও কাজটা উপভোগ্য ছিল। গল্পটা মূলত মানুষের ছয় রিপুর গল্প। আশা করছি, ভিন্নধর্মী এই সিনেমা দর্শকের জন্যও উপভোগ্য হবে।’
চরকির পর্দায় প্রথমবারের মতো দেখা যাবে অভিনেত্রী সারিকা সাবরিনকে। তিনি কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে বলেন, ‘এই গল্পে আমার চরিত্রটাও বেশ মজার। সব মিলিয়ে খুব ভালোবাসা দিয়ে কাজটা করেছি। আশা করি, দর্শকেরাও সেই ভালোবাসা আমাদের “ক্যাফে ডিজায়ার”-এর মাধ্যমে ফেরত দেবেন।’ এই সিনেমায় আছেন শ্যামল মাওলাও। তিনি বলেন, ‘ক্যাফে ডিজায়ার-এর গল্পটা উপলব্ধি করতে হবে। এটা না দেখা পর্যন্ত দর্শককে বলে বোঝানোও যাবে না।’

‘ঘটনাচক্রে পেশাগত গন্তব্যের যাত্রাপথে কিছু সময়ের জন্য সহযাত্রী হয় দুজন। ক্ষণিকের এই যাত্রায় দুই অপরিচিত মানুষের ভেতরের কথোপকথন, তাদের জীবন সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি, চাওয়া-পাওয়া, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির ফারাক, আকাঙ্ক্ষা ও চাহিদা পূরণের যুদ্ধ, ভালোবাসা, বাসনা বা কামনা সম্পর্কে বিপরীতমুখী ভাবনা—এই সবকিছুর এক বিচিত্র মেলবন্ধন ঘটে। দর্শকদের উদ্দেশে বলতে চাই, এভাবেই আমাদের চলার পথে সঙ্গে থাকবেন, আরও ভালো কাজের অনুপ্রেরণা জোগাবেন,’ বলেন সানজিদা প্রীতি।

পরিচালক রবিউল আলম রবি
ছবি: সংগৃহীত

সিরিজের পর এবার সিনেমা নিয়ে ফেরার প্রস্তুতি নিয়ে পরিচালক রবিউল আলম রবি বলেন, ‘ঊনলৌকিক–পরবর্তী কাজে গল্প বলার ধরন ও বিষয়ে পরিবর্তন আনতে চাইছিলাম আমরা। স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে বহুল প্রচলিত সাসপেন্স-থ্রিলার, মার্ডার মিস্ট্রি ইত্যাদির বাইরে আর কী করা যায়, ভাবছিলাম। দৈনন্দিন প্রাত্যহিকতা, অস্তিত্বের সংকট, নর-নারীর সম্পর্ক, মানুষের মনস্তত্ত্ব, বাস্তববাদী শৈলী ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আমরা আলোচনা করি। সেই প্রেক্ষাপটে শিবুদা (শিবব্রত বর্মন) কিছু চরিত্রের খসড়া তৈরি করেন, যেখানে সব কটি চরিত্র ও তাদের কেন্দ্র করে তৈরি করা প্লটগুলো মূলত প্রেম, কামনা ও বাসনার অভিন্ন সুতায় গাঁথা।’

দর্শকদের উদ্দেশে পরিচালক বলেন, ‘যাঁরা চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন, আর যাঁরা সেটা দেখেন—দুই পক্ষ ভিন্ন জগতের বাসিন্দা। চলচ্চিত্রটা তাঁদের মধ্যে এক যোগাযোগের মাধ্যম। ফলে প্রতিবার কিছু বানানোর পর আমি উদ্বেগে থাকি, দর্শকেরা এটা কীভাবে নেবেন, কতটা যোগাযোগ তৈরি করা সম্ভব হবে। এবার দ্বিগুণ উদ্বেগে আছি। কেননা এ ছবিতে আমরা গল্প বলা নিয়ে কিছু নিরীক্ষা করেছি।’

আরও পড়ুন