অনেকেই বলছেন, ওসি হারুন ফেরত আসবেন...
মঞ্চ ও টিভি নাটক মিলিয়ে তিন দশকের অভিনয়জীবনে মোশাররফ করিমকে নানারূপে দেখেছেন দর্শক। জনপ্রিয় হয়েছে তাঁর অনেক সংলাপ। ‘মহানগর ২’ দিয়ে আবারও বাজিমাত করলেন মোশাররফ করিম। তাঁকে ঘিরে আলোচনা চলছে সর্বত্র।
কারও মতে, ওসি হারুন চরিত্রটি মোশাররফ করিমের মতো জাত অভিনেতা ছাড়া সম্ভব হতো না। চঞ্চল চৌধুরীর কথায়ও তা–ই যেন উঠে এল। তিনি অকপটে বললেন, ‘মোশাররফ করিমকে নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। সে সত্যিকারের জাত অভিনেতা।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে মহানগর নিয়ে অনেক রিভিউ হয়েছে। ওসি হারুন চরিত্রে মোশাররফ করিমের অনবদ্য অভিনয় কমবেশি সবারই মন জয় করেছে। কারও মতে, ওসি হারুন চরিত্রে তাঁর কোনো বিকল্প নেই।
তবে মোশাররফ করিম মনে করছেন, এই চরিত্র অন্য কাউকে দিয়েও হতো। তিনি বললেন, ‘অনেককে দিয়েই হতো বলে বিশ্বাস করি। সেটা হয়তো অন্য রকম হতো। একেকজনের অভিনয়ের ধরন ও দর্শন তো আলাদা। আমি করলাম, দর্শক পছন্দ করলেন। প্রসেনজিৎদাও প্রশংসা করেছেন। আসলে একজন অভিনেতা তো চাওয়া–পাওয়ার ভেতরে থাকেন। সব সময় চেষ্টা থাকে ভালো অভিনয় করার, দর্শকের ভালোবাসা পাওয়ার এবং কিছু আয়রোজগার আর পুরস্কার অর্জন। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে বিস্মিত হয়েছি, যখন কাজের ভক্ত হিসেবে জয় গোস্বামীকে পেয়েছি।’
মোশাররফ করিমের কাছে প্রশ্ন ছিল, ওসি হারুন চরিত্রটি তাঁর অভিনয়জীবনে কী হিসেবে দেখেন?
প্রথম আলোকে তিনি বললেন, ‘শিল্পের ক্ষেত্রে বিষয়টা তো এন্ডলেস। তবে এ পর্যন্ত যে কটি চরিত্র করেছি, এর মধ্যে ওসি হারুন অন্যতম একটি চরিত্র অবশ্যই। মানুষ অন্যান্য নাটকের ক্ষেত্রেও বলে, এই ওয়েব সিরিজের ক্ষেত্রেও বলেছে। আমরা যে কাজগুলো করি, সেখানে তো সমাজের একটা প্রতিফলন থাকে। ফিকশনের ব্যাপারটা কল্পনা মিশ্রিত থাকে। বহু কিছুই মিশ্রিত থাকে। কারণ, যা বাস্তব, তা তো শিল্প নয় আসলে। বাস্তবকে আশ্রয় করে শিল্প হতে পারে। কিন্তু বাস্তবকে আশ্রয় করে যদি শিল্প হয়, সেখানে নির্মাতার নিজস্ব অনেক ভাবনা মিলে বিষয়টা আসলে শিল্পমণ্ডিত হয়ে ওঠে। সে জায়গা থেকে দর্শক ভীষণ পছন্দ করছেন।’
কথায় কথায় মোশাররফ করিম বললেন, ‘যেকোনো জিনিসের তীব্রতাটা ঠিক থাকলে, সেটা যদি রিয়েলিস্টিক না–ও হয়, সেটার অভিনয়শৈলী ঠিকঠাকমতো থাকে, শৈল্পিক ইনটেনসিটি ঠিক থাকে, তাহলে মানুষের দেখতে ভালো লাগে। আমরা কার্টুন ছবি কেন দেখি? এটা রিয়েলিস্টিক কিছু নয়। আমরা এটা এনজয় করি। দ্যাটস ইট।’
এবারের ঈদে টেলিভিশনেও দুই ডজনের মতো নাটক প্রচারিত হয়েছে মোশাররফ করিমের। তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে গেছে ‘মহানগর ২’–এর ওসি হারুন।
অনেক দর্শক চাচ্ছেন, ওসি হারুন বেঁচে উঠুন। এটা চেনা অন্যায়ের বিরুদ্ধে একটা নীরব প্রতিবাদ। আমাদের ঘুণে ধরা পচে যাওয়া সমাজের গালে ঠাস করে চপেটাঘাত।
ওসি হারুনকে অমানবিক ও মানবিক—দুই রূপেই দেখিয়েছেন পরিচালক। ‘মহানগর ২’–এর শেষে হারুনকে যখন ভালো হতে দেখা গেল, তখনই তাঁকে গুলি করা হয়। তৈরি হয় রহস্য
এই রহস্য বিষয়ে পরিচালক আশফাক নিপুন বলেন, ‘ওসি হারুনেরও কিছু সীমাবদ্ধতা আছে, আমরা বলি যে চূড়ান্ত মাত্রায় অসৎ; কিন্তু আবার একই সঙ্গে মানবিক। এখন হারুন যে গুলি খেল, এটা আসলে কেন, তা দেখা যাবে “মহানগর ৩”-এ। কী বোঝাতে চেয়েছি, এটা পুরোপুরি দর্শকের ওপর ছেড়ে দিয়েছি, তারা যা বোঝার বুঝুক। আমি বলে দিলে জিনিসটা বলে দেওয়া হবে। আমি নিজেই সোশ্যাল মিডিয়াতে দেখছি যে অনেকেই বলছেন, ওসি হারুন ফেরত আসবেন। অনেকে বলছেন, তাঁকে নিয়ে হয়তো এসআই মলয় আবার হাসাপাতালে নিয়ে যাবেন। অনেকে বলছেন, হারুনদের পরিণতি এ রকমই হয়, মানবিক হতে চাইলেও হওয়া যায় না। আমি আসলে উপভোগ করছি দর্শকের কল্পনা। সবাই যার যার মতো করে ভাবুক।’