ফিরে এল আন্দিজের স্মৃতি

‘সোসাইটি অব দ্য স্নো’ সিনেমার দৃশ্য। ছবি : নেটফ্লিক্স

উরুগুয়ের বিমানবাহিনীর ‘ফ্লাইট ৫৭১’ দুর্ঘটনা নিয়ে নির্মিত হয়েছে অনেক তথ্যচিত্র, সিনেমা ও সিরিজ। যার সর্বশেষ সংযোজন ‘সোসাইটি অব দ্য স্নো’। ৪ জানুয়ারি নেটফ্লিক্সে মুক্তির পর প্ল্যাটফর্মটির তালিকার শীর্ষে উঠে এসেছে সারভাইভাল থ্রিলার সিনেমাটি।

আরও পড়ুন

১৯৭২ সালের ১৩ অক্টোবর আন্দিজ পর্বতমালায় ঘটেছিল ভয়াবহ দুর্ঘটনাটি। সে দুর্ঘটনায় উড়োজাহাজের ৪২ যাত্রী নিহত হন, দুর্ঘটনার দিনই প্রাণ যায় ২৯ জনের। এরপর ৩ সপ্তাহের কম সময়ের মধ্যে তুষারধসে আরও ১৩ জনের মৃত্যু হয়।

সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যান ১৬ যাত্রী। তবে বেঁচে ফেরা ১৬ যাত্রীর সবাই ছিলেন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। বেঁচে যাওয়া সেই ১৬ যাত্রী ৭২ দিন পাহাড়ের খাঁজে আটকা পড়ে ছিলেন। খাবার ও পানি ছিল না। দুর্গম পর্বতে আটকা এসব যাত্রী বেঁচে থাকার জন্য ‘নরখাদক’ হিসেবে আবির্ভূত হন। বাধ্য হয়ে একসময় সহযাত্রীদের মাংস আগুনে ঝলসে খান। এ ঘটনা নিয়েই বিশ্বজুড়ে লেখা হয়েছে উপন্যাস, নির্মিত হয়েছে তথ্যচিত্র ও সিনেমা।

‘সোসাইটি অব দ্য স্নো’ সিনেমার দৃশ্য। ছবি : নেটফ্লিক্স

১৯৭৬ সালের এ ঘটনা নিয়ে প্রথম সিনেমা নির্মিত হয় মেক্সিকোয় ‘সারভাইভ!’ নামে। এরপর দেশে দেশে আরও কাজ হয়েছে। বছর তিনেক আগে একই ঘটনার প্রেক্ষাপটে লেখা মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনের উপন্যাস থেকে ওয়েব সিরিজ ‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনো খেতে আসেননি’ নির্মাণ করেন সৃজিত মুখার্জি। যে সিরিজের প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন বাংলাদেশি অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন।

তবে এবারের ‘সোসাইটি অব দ্য স্নো’ অনেক দিক থেকেই ব্যতিক্রম। জে এ বায়োনা পরিচালিত সিনেমাটি নির্মিত হয়েছে লেখক পাবলো ভিয়েরসির একই নামের উপন্যাস অবলম্বনে। ছয় কোটি ইউরোতে নির্মিত এ ছবি সবচেয়ে ব্যয়বহুল স্প্যানিশ সিনেমা।

‘সোসাইটি অব দ্য স্নো’ সিনেমার দৃশ্য। ছবি : নেটফ্লিক্স

গত বছর ৮০তম ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবের আউট অব কম্পিটিশন বিভাগে প্রথমবার সিনেমাটির প্রিমিয়ার হয়, গত ডিসেম্বরে মুক্তি পায় স্পেন, উরুগুয়ে ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেক্ষাগৃহে। এরপর ৪ জানুয়ারি এসেছে নেটফ্লিক্সে। প্ল্যাটফর্মটিতে মুক্তির পর থেকেই সারা দুনিয়ার দর্শক, সমালোচকদের প্রশংসা পাচ্ছে এই সিনেমা, অস্কারে সেরা আন্তর্জাতিক সিনেমার তালিকার সেরা ১৫–তেও আছে এটি।

‘সোসাইটি অব দ্য স্নো’তে যেভাবে বিমান দুর্ঘটনার চিত্রটি তুলে ধরা হয়েছে, সেটি প্রশংসিত হয়েছে। এ ছাড়া পাত্রপাত্রীদের অভিনয়েও মুগ্ধ দর্শক। সিনেমাটিতে পরিচিত কোনো তারকা নেই, বেশির ভাগই উরুগুয়ে ও আর্জেন্টিনার নতুন অভিনয়শিল্পী। আন্দিজ পর্বতমালার যেখানে উড়োজাহাজটি দুর্ঘটনায় পড়েছিল, সে জায়গাতেও হয়েছে শুটিং; স্পেন, আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ে ও চিলিতে হয়েছে শুটিং, যা ছিল বেশ সময়সাপেক্ষ।

‘সোসাইটি অব দ্য স্নো’ সিনেমার দৃশ্য। ছবি : নেটফ্লিক্স

গল্পটি বাস্তবসম্মতভাবে পর্দায় তুলে ধরতে চেষ্টার কমতি রাখেননি নির্মাতা, রূপসজ্জার দায়িত্বে ছিলেন অস্কারজয়ী স্পেশাল ইফেক্ট রূপসজ্জাশিল্পী ডেভিড মারতি ও মনতসে রিবে। ফার্নান্দো প্যারাদো, রবার্তো ক্যানেসা, কার্লোজ পেয়েজ—আন্দিজ উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া সত্যিকারের তিনজনকে দেখা গেছে এই সিনেমায়।