নেটফ্লিক্সের তালিকার শীর্ষে, কী আছে এই সিনেমায়

‘ক্যারামেলো’র দৃশ্য। নেটফ্লিক্স

মানুষের সঙ্গে তাঁর পোষা প্রাণীর সম্পর্ক নিয়ে বহু সিনেমা হয়েছে। সেসব সিনেমায় সম্ভবত সবচেয়ে বেশিবার এসেছে কুকুরের সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের গল্প। তাই আপনি যদি প্রাণীপ্রেমী হোন, কিংবা মন ভালো করে দেওয়ার মতো কোনো সিনেমা দেখতে চান; তবে দেখতে পারেন নেটফ্লিক্সে ‘ক্যারামেলো’।

একনজরে
সিনেমা: ‘ক্যারামেলো’
ধরন: ড্রামা
স্ট্রিমিং: নেটফ্লিক্স
দৈর্ঘ্য: ১ ঘণ্টা ৪১ মিনিট
পরিচালক: দিয়েগো ফ্রেইতাস
চিত্রনাট্যকার: দিয়েগো ফ্রেইতাস, রড আজেভেদো ও ক্যারোলিনা কাস্ত্রো
অভিনয়: রাফায়েল ভিত্তি, আরিয়ান বোটেলহো, নোমিয়া অলিভেইরা, অ্যাডেমারা, কেলজি ইকার্ড, ব্রুনো ভিনিসিয়াস ও আমেনদোইম (কুকুর)।

ব্রাজিলিয়ান এ চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন পরিচালক ডিয়েগো ফ্রেইতাস। নির্মাতার সঙ্গে যৌথভাবে চিত্রনাট্য লিখেছেন রড আজেভেদো ও ক্যারোলিনা কাস্ত্রো। সিনেমাটি নেটফ্লিক্সে মুক্তি পেয়েছে ৯ অক্টোবর। নেটফ্লিক্স গ্লোবাল টপচার্টের অ-ইংরেজি ভাষার শীর্ষে রয়েছে এটি। কেন দর্শকেরা এত পছন্দ করছেন সিনেমাটি? চলুন দেখা যাক।

রেস্টুরেন্টে কাজ করা এক পরিশ্রমী তরুণ পেদ্রো। তিনি কাজ করেন শেফের সহকারী হিসেবে। স্বপ্ন দেখেন একদিন তিনিও শেফ হবেন। তাঁর বানানো রেসিপি জায়গা করে নেবে রেস্তোরাঁর মেনুতে। একদিন হুট করেই তাঁর রেসিপি পরিবেশন করার সুযোগ আসে। সে রেসিপি প্রশংসিত হয়, জায়গা করে নেয় মূল মেনুতে। কিন্তু সেদিনই রেস্তোরাঁয় ঘটে যায় এক অঘটন। একটি রাস্তার কুকুর ক্যারামেলোকে নিয়ে তুলকালাম বাধে। তবে পেদ্রোর জীবনে কুকুরটি হয়ে ওঠে ত্রাণকর্তা।

‘ক্যারামেলো’র দৃশ্য। নেটফ্লিক্স

তিনি টের পান এমন কিছু, যা বদলে দেয় পেদ্রোর জীবন। পেদ্রো যখন প্রায় সবকিছু হারাতে বসেন, তখন ক্যারামেলো হয়ে ওঠে তাঁর জীবনের আশার আলো, পরম বন্ধু। সেই কুকুর আর পেদ্রোর জীবনের দুর্ঘটনার এক আবেগীয় গল্প দেখানো হয়েছে ‘ক্যারামেলো’ সিনেমায়।

‘ক্যারামেলো’র গল্পটি খুব বাস্তবসম্মত। ডিজনির গল্পের মতো এটি কোনো রূপকথা নয়। তাই এতে অতিরঞ্জিত কিছু দেখানো হয়নি, নাটকীয়তা নেই। বরং পরিচালক ধীরে একটা গল্প বলেছেন। চরিত্রগুলোকে সময় দিয়ে তৈরি করেছেন। তাঁদের মধ্যের টানাপোড়েন, কষ্ট, স্বপ্ন, সংগ্রাম প্রত্যেকটা জিনিসই দেখিয়েছেন যত্ন করে।

‘ক্যারামেলো’র দৃশ্য। নেটফ্লিক্স

এ সিনেমা শুরু হয় একটি পথভ্রষ্ট কুকুরের একাকী জীবনযাপন দেখানোর মাধ্যমে। আর শুরুর দৃশ্য থেকেই কুকুরটি দর্শককে তার দিকে টেনে নেয়। তাই এ কথা বলাই যায়, এ সিনেমার প্রধান চরিত্র মায়াবী কুকুর ক্যারামেলো বললে খুব একটা ভুল হয় না। সিনেমাটিতে ক্যারামেলোর উপস্থিতি এতটাই মন কাড়া যে তাকে সিজিআই-নির্মিত কোনো চরিত্র বললে ভুল হয়। তবে মজার ব্যাপার হলো, ক্যারামেলো চরিত্রে একটি তিন মাস বয়সী কুকুরকে কাস্ট করা হয়, যার আসল নাম আমেনদোইম।

আমেনদোইমকে প্রশিক্ষণ দিয়ে বিশেষভাবে প্রস্তুত করা হয় চরিত্রটির জন্য। এ সিনেমায় তার উপস্থিতি যেমন প্রাণবন্ত, তেমনি সে হাস্যরস, আশাবাদ আর মধুর বিশৃঙ্খলা তৈরি করে পেদ্রোকে তার জীবনের কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি করতে সাহস জোগায়। পরিচালক ডিয়েগো ফ্রেইতাস এ কারণেই বিশেষভাবে প্রশংসা পাওয়ার দাবিদার। তাঁর বাস্তব কুকুরের সঙ্গে কাজ করার সিদ্ধান্তই সিনেমাটিকে করে তুলেছে বাস্তব।

‘ক্যারামেলো’র দৃশ্য। নেটফ্লিক্স

তবে আমেনদোইমকে এ চরিত্রে কাস্ট করার মাধ্যমে নির্মাতা ব্রাজিলের সংস্কৃতিকেও তুলে ধরেছেন। ব্রাজিলে মিশ্র প্রজাতির ক্যারামেলো কুকুর খুব জনপ্রিয়। এমনকি তাদের দেশের জাতীয় প্রতীকে এ কুকুরকে স্থান দেওয়ার দাবি জানানো হয়। এ ছাড়া বংশানুক্রমে নিজেদের পারিবারিক রান্না পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়া, রান্নার সংস্কৃতি, চার্চে প্রার্থনা করা, পশুদের ট্রেনিং দেওয়ার ব্যাপারগুলোও উঠে এসেছে খুব দারুণভাবে।

আরও পড়ুন

পেদ্রোর চরিত্রে রাফায়েল ভিত্তি দারুণ। পেশাদারত্ব, মানবিকতা ও ভেঙে পড়া চরিত্রে তিনি দারুণ অভিনয় করেছেন। ক্যারামেলোর সঙ্গে তাঁর সম্পর্কও ফুটে উঠেছে খুব সুন্দরভাবে। ছোট্ট হলেও রাফায়েলের সঙ্গে আরিয়ান বোটেলহোর রসায়নও মানানসই। দুই বন্ধু চরিত্রে আরিয়ান বোটেলহো ও নোমিয়া অলিভেইরাও ভালো ছিলেন।

আরও পড়ুন

‘ক্যারামেলো’ সিনেমার সিনেমাটোগ্রাফিও চোখ জুড়ানো। মাটির রঙের টোন সিনেমাটিকে শান্ত একটা অনুভূতি দেয়। এ টোন একই সঙ্গে পেদ্রোর অসুস্থতা ও প্রশান্তি, দুটোকেই প্রতিফলিত করে। খাবার খাওয়ার দৃশ্যগুলো নির্মাতা যে বিশেষ দৃষ্টি দিয়েছেন তা বোঝা যায়। যা একই সঙ্গে পেদ্রোর পেশার প্রতি ভালোবাসা ও আন্তরিকতা প্রকাশ করে।

‘ক্যারামেলো’র দৃশ্য। নেটফ্লিক্স

আবহসংগীতের স্নিগ্ধ সুর গল্পের সঙ্গে মানানসই। গল্পকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য গান ব্যবহার করা হয়নি। বরং গল্পের আবহের সঙ্গে মানানসই সুর নির্বাচন করা হয়েছে।
‘ক্যারামেলো’ একটি হালকা, মজার ও আবেগঘন সিনেমা। এখানের চরিত্রটা তাদের জীবন ও সম্পর্ক ফুটিয়ে তুলেছেন দারুণভাবে, যা দর্শকদের মধ্যে গভীর সংযোগ তৈরি করে। সিনেমাটি শেষ পর্যন্ত একটি ইতিবাচক রেশ ধরে রাখে। দেখার পরে আপনি হয়তো একটু হলেও প্রাণীদের প্রতি সহমর্মী হয়ে উঠবেন, কিংবা কুকুর বা বেড়াল দত্তক নেওয়ার কথাও ভাবতে পারেন।

‘ক্যারামেলো’র দৃশ্য। নেটফ্লিক্স

‘ক্যারামেলো’র গল্পের শেষটা সহজেই অনুমান করা যায়, গল্প শেষ হওয়ার আগেই বোঝা যায় এর পরিণতি। এখানে নির্মাতা চমক রাখতে চাননি। কিন্তু সিনেমাটি দেখার পরে মনে হয় এটি নির্মাণের ক্ষেত্রে সব সময় চমক রাখার দরকার পড়ে না। বরং আন্তরিক উপস্থাপন সিনেমাকে করে তোলে দেখার মতো।