প্রীতম, তিশা, পারশার ‘ঘুমপরী’ কতটা জমল

‘ঘুমপরী’তে প্রীতম হাসান, তানজিনা তিশা ও পারশা মাহজাবীন। ছবি: চরকির সৌজন্যে

‘মানুষ অপেক্ষায় বাঁচে, আর অপেক্ষা বাঁচে আশায়’—‘ঘুমপরী’র বহুল চর্চিত সংলাপ। ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে চরকিতে মুক্তি পেয়েছে জাহিদ প্রীতমের সিনেমাটি। মুক্তির আগে থেকেই টিজার, ট্রেলার আর প্রচারজুড়ে এই ‘অপেক্ষা’। বোঝাই যাচ্ছিল, সিনেমায় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়জুড়ে আছে ‘অপেক্ষা’। দেখার পর এ অপেক্ষা কতটা সার্থক হলো?

একনজরে
সিনেমা: ঘুমপরী
ধরন: রোমান্টিক ড্রামা
নির্মাতা: জাহিদ প্রীতম
অভিনয়: প্রীতম হাসান, তানজিন তিশা, পারশা মাহজাবীন
দৈর্ঘ্য: ১ ঘটনা ৫৩ মিনিট
স্ট্রিমিং: চরকি

প্রেম, বন্ধুত্ব, নস্টালজিয়ার মোড়কে আবেগের গল্প বলেন জাহিদ প্রীতম। ‘বুকপকেটের গল্প, ‘তিলোত্তমা’ থেকে ‘ফ্রেঞ্জি’—নির্মাতার এসব কাজ দেখা দর্শকমাত্রই সেটা জানেন। ‘ঘুমপরী’তেও এসবই আছে।

গল্পটা মেঘ, উষা আর জ্যোতির। কারও সঙ্গেই কারও ঠিক প্রেম ছিল না, তবু তাঁদের ঘিরে তৈরি হয় ভালোবাসার এক অদৃশ্য ত্রিকোণ। মেঘ বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া যুবক, জ্যোতি পাহাড়প্রেমী তরুণী। ভালোবাসে স্কেচ করতে। দুজন একই বিভাগে পড়ে। একদিন দূর থেকে মেঘকে দেখে জ্যোতির ভালো লেগে যায়। মুঠোফোনে মেসেজ পাঠায় জ্যোতি, কিন্তু পরিচয় খোলাসা করে না।

‘ঘুমপরী’র দৃশ্য। চরকির সৌজন্যে

অন্যদিকে উষা কলেজছাত্রী, মেঘের কাছে টিউশন পড়ে। মনে মনে মেঘকে পছন্দ করে, কিন্তু পাত্তা পায় না। মেঘকে চমকে দিয়ে উষা মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পায়, হয়তো মেঘের জীবনে প্রবেশেরও। জ্যোতি তখন বুঝতে পারে, এবার সামনে আসার সময় হয়েছে। দেখা করার দিন–তারিখও ঠিক হয়। কিন্তু স্কুটি দুর্ঘটনায় কোমায় চলে যায় জ্যোতি। হাসপাতালে সারাক্ষণ তাঁকে সঙ্গ দেয় মেঘ। অন্যদিকে সে হাসপাতালেই নবীন চিকিৎসক হিসেবে আসে উষা! জ্যোতি কি আর কোমা থেকে ফিরবে? উষাকে কীভাবে নেবে মেঘ আর জ্যোতি?

‘ঘুমপরী’ আসলে অনুভবের। সংলাপ, আবহ আর বিষণ্নতার দৃশ্যকল্প নির্মাণ করে মেঘ, জ্যোতি আর উষার প্লেটোনিক প্রেমের দুনিয়ায় আবেগের মাধ্যমেই দর্শককে আটকে রাখতে চেয়েছেন নির্মাতা। এ ধরনের কাজ জাহিদ প্রীতম ভালো করেন, এ সিনেমায়ও সেটার ব্যতিক্রম হয়নি।

‘ঘুমপরী’তে তিশা ও প্রীতম। চরকির সৌজন্যে

‘ঘুমপরী’তে মেঘ, জ্যোতি আর উষা চরিত্রে অভিনয় করেছেন প্রীতম হাসান, তানজিন তিশা আর পারশা মাহজাবীন। প্রীতম হাসানের মধ্যে একটা অনায়াস ব্যাপার আছে। বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া যুবকের চরিত্রে তিনি দারুণভাবে মানিয়ে যান। সংলাপ বলা, আবেগের দৃশ্যগুলোতে এক্সপ্রেশন মিলিয়ে পর্দায় তিনি বিশ্বাসযোগ্য হয়ে ওঠেন। গত বছরের ভালোবাসা দিবসে চরকিতেই এসেছিল শিহাব শাহীনের সিনেমা কাছের ‘মানুষ দূরে থুইয়া’, সে সিনেমায়ও প্রায় একই ধরনের চরিত্রে দেখা যায় প্রীতমকে।

সিনেমার সবচেয়ে বড় চমক তানজিন তিশা। দর্শকেরা ছোট পর্দার জনপ্রিয় এই অভিনেত্রীকে বরাবরই গ্ল্যামারাস চরিত্রে দেখে অভ্যস্ত। সেখান থেকে বেরিয়ে তিনি একেবারেই ভিন্নধর্মী চরিত্র করেছেন।

‘ঘুমপরী’তে তানজিন তিশা। চরকির সৌজন্যে

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া উচ্ছল তরুণীর চরিত্রে তিনি ভালো করবেন জানা কথা, কিন্তু হাসপাতালের দৃশ্যগুলোতে তাঁর এক্সপ্রেশন, কথা না বলেও অনেক কিছু বলা ছিল তারিফ করার মতো। তবে হালের আলোচিত গায়িকা-অভিনেত্রী পারশা মাহজাবীন উষা চরিত্রে আরও ভালো করতে পারতেন। কিছু কিছু জায়গায় তাঁর অভিনয় ছিল দুর্বল।

‘ঘুমপরী’ দেখতে বসলে আপনার অক্টোবর-এর কথা মনে পড়বে। মুক্তির পর সেভাবে ব্যবসা করেনি, কিন্তু ২০১৮ সালে মুক্তি পাওয়া সুজিত সরকারের সিনেমাটির আলাদা ভক্তশ্রেণি আছে। সেই সিনেমার কিছু প্রভাব নিশ্চিতভাবেই ‘ঘুমপরী’তে আছে।

‘ঘুমপরী’র দৃশ্য। চরকির সৌজন্যে

তবে নির্মাতা সেই প্রেরণাকে ইতিবাচকভাবেই ব্যবহার করেছেন। জাহিদ প্রীতমের কাজে গান বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এবারও ব্যতিক্রম নয়, ‘প্রেমেরই জখম’ গানটি সিনেমা শেষ হওয়ার পরও মনে থাকে।

আরও পড়ুন

‘ঘুমপরী’ ধীরগতির সিনেমা; কিছুটা দেখার, কিছুটা অনুভবের। ওটিটিতে ফি সপ্তাহে মুক্তি পাওয়া এন্তার থ্রিলার দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে গেলে একবার দেখতে মন্দ লাগবে না।