>মানুষের সব থেকে আবেগময় সম্পর্কটি সম্ভবত বন্ধুত্বের। এ নিয়ে বহু গান হয়েছে পৃথিবীতে। বন্ধুত্ব নিয়ে বাংলা গানও রয়েছে অনেক। সারা বছর সেসব গান শোনা হয়, গুনগুন করে গাওয়া হয়। আজ বন্ধু দিবসে সে রকম কয়েকটি গানের পেছনের গল্প প্রথম আলোর পাঠকদের জন্য বললেন গানগুলোর শিল্পীরা।
পার্থ বড়ুয়া
পার্থ বড়ুয়া

দেখা হবে বন্ধু
পার্থ বড়ুয়া

গানটির রেকর্ডিংয়ের দিনের কথা আজও মনে পড়ে পার্থ বড়ুয়ার। বললেন, ‘তখন কি–বোর্ড বাজাতাম। যখন রেকর্ডিং করে বের হচ্ছিলাম, মানাম (আহমেদ) ভাই বললেন, “কাজটা তুই ভালো করছিস। আমি ভাবি নাই এভাবে টিউন করা যাবে। কি–বোর্ড বাদ দে। তুই গানই কর।”’

গানটি লিখেছিলেন বেল নূর। পার্থ বলেন, ‘ও একটু অন্য রকম মানুষ। গানটা বিখ্যাত হওয়ার পর একদিন দেখা হয়েছে। ও বলে, গানটা কিছুই হয়নি! আপনাকে গান দেব না আর—এমন একটা ব্যাপার। আর যোগাযোগ করেনি কখনো।’ পার্থ বড়ুয়ার আরেকটি জনপ্রিয় গান ‘ও বন্ধু, তোকে মিস করছি ভীষণ’।

চিরকুট ব্যান্ডের সুমী
চিরকুট ব্যান্ডের সুমী

বন্ধু গো...

চিরকুট ব্যান্ড

চিরকুট ব্যান্ডের দ্বিতীয় অ্যালবাম জাদুর শহর-এর গান ‘বন্ধু গো...’। বন্ধু দিবসে গানটির পেছনের গল্প বললেন চিরকুটের অন্যতম সদস্য সুমী। তখন অ্যালবামের কাজ চলছে। একসঙ্গে সবাই স্টুডিওতে পড়ে থাকেন। দিন-রাত কাজ। গান লেখা, সুর করা, রেকর্ডিং, দুষ্টুমি, ঝগড়া—কত কিছু! নিজেদের ব্যান্ডের মধ্যের এই বন্ধুত্বই গানটি লেখার মূল প্রেরণা। সুমী বললেন, ‘বন্ধুত্বটা সবচেয়ে নির্ভেজাল সম্পর্ক। ব্যান্ডের সবাই খুব বন্ধু নিয়ে থাকতে পছন্দ করি। সবার মধ্যেও বন্ধুত্বপূর্ণ একটা সম্পর্ক। সবাই মিলে ভাবলাম, বন্ধুত্ব নিয়েই একটি গান করি।’ দলটির আরেকটি জনপ্রিয় গান ‘বন্ধু, তুই আমার ঘোরে আয়’।

তপু
তপু

বন্ধু বোঝে আমাকে

তপু

তপু এই গান লেখেন ২০০৯ সালে। এই শিল্পী বললেন, ‘আমার সব গান ছিল প্রেম নিয়ে। বন্ধুরা বলত, “তুই সব সময় মেয়েদের নিয়ে গান করিস। আমাদের নিয়ে গান করিস না।” তো এই ভাবনাটা আমাকে খুব স্ট্রাইক করে।’ এভাবেই ‘বন্ধু’ গানটি লেখা হয়।

গানটি লিখতে অনেক সময় লেগেছিল। বন্ধুত্বের মধ্যে কী কী থাকে, কোন কাজগুলো করে বন্ধুরা—এসব নিয়ে ভাবতে ভাবতেই অনেক সময় চলে যায়।

বন্ধুরা কী বলেছিলেন পরে? তপু বলেন, ‘ওরা খুবই অ্যাপ্রিশিয়েট করে। বন্ধুত্বের উদাহরণ দিতে গেলে গানটার কথা বলে। এটাই বড় পাওয়া।’

সায়ান
সায়ান

এক হারিয়ে যাওয়া বন্ধুর সাথে

সায়ান

গানটি সায়ান লিখেছিলেন ১৯৯৯ সালে। মুক্তি পায় ১০ বছর পর। গানটির পেছনে আছে সায়ানের জীবনের সত্যিকার গল্প। তখন ক্লাস সেভেনে পড়েন। বন্ধুত্ব হয় একজনের সঙ্গে। তার সঙ্গেই সুখ-দুঃখের ভাগাভাগি। সায়ান বললেন, ‘আমরা রিকশায় ঘুরতাম। যে যার মতো গান গাইতাম। একজন গাইলে আরেকজন সেটাই গুনগুন করতাম। আবার দেখা গেল যে দুজন অনেকক্ষণ চুপচাপ। কিন্তু সঙ্গেই আছি। এমনই ছিল আমাদের বোঝাপড়া।’

সেই বন্ধুর সঙ্গে হয়ে গেল ঝগড়া। এক বছর ধরে কথা নেই! কথাগুলো জমে থাকে, বলা হয় না। কিন্তু প্রতিদিনই মিস করছেন বন্ধুকে। এই সময়ের মনের কথা নিয়ে লিখে ফেলেন গানটি। খুশির খবর হলো, গানটি লেখার আট-নয় মাস পরে ঝগড়াঝাঁটি মিটে যায়। আবার তাঁরা হয়ে যান বন্ধু।

গ্রন্থনা: শরীফ নাসরুল্লাহ