কনসার্ট আয়োজনে বাড়ছে জটিলতা

গত দুই মাসে ৪০টির বেশি শো করেছে ব্যান্ডটি, এর মধ্যে দু–একটি শো বাতিল হয়েছেফেসবুক থেকে

এ বছরের শুরুতে ঢাকায় এসেছিল পাকিস্তানি ব্যান্ড কাবিশ, ‘ঢাকা ড্রিমস’ কনসার্টে গেয়েছিল ব্যান্ডটি। ১০ মাসের ব্যবধানে ডিসেম্বরেও ঢাকায় এসেছিলেন ব্যান্ডের সদস্য জাফর জাইদি ও মাজ মওদুদ। ৫ ডিসেম্বর ঢাকায় ‘ওয়েভফেস্ট: ফিল দিস উইন্টার’ কনসার্টে গাওয়ার কথা ছিল কাবিশের, তবে কনসার্টের অনুমতি না পাওয়ায় না গেয়েই ফিরতে হয়েছে ব্যান্ডটিকে।

এর মধ্যে পাকিস্তানি সংগীতশিল্পী আলী আজমত, আতিফ আসলাম, জাল ব্যান্ড থেকে থেকে ভারতীয় সংগীতশিল্পী অনুব জৈন—কোনো কনসার্টেরই অনুমতি দেয়নি সরকার। ফলে কোনো কনসার্ট বাতিল, কোনোটি স্থগিত ঘোষণা করেছেন আয়োজকেরা। বাতিল হয়েছে স্থানীয় শিল্পীদের নিয়ে কিছু কনসার্টও। শীতের মৌসুমেও কনসার্ট আয়োজনে নানান জটিলতা দেখা যাচ্ছে, যে কারণে কমছে উদ্যোগ।

মিলছে না অনুমতি

গত বছরের শুরুতে ভারতীয় র‍্যাপার বাদশা, সংগীতশিল্পী কিং ঢাকায় গেয়েছেন। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর পাকিস্তানের রাহাত ফতেহ আলী খান, আতিফ আসলাম, আইমা বেগ, জাল ও কাবিশ ঢাকায় শো করেছে।

বছরের শেষভাগেও (নভেম্বর ও ডিসেম্বর) পাকিস্তান ও ভারতের শিল্পীদের নিয়ে বেশ কয়েকটি কনসার্টের আবেদন করেছেন আয়োজকেরা, তবে এসব আবেদনে সায় দেয়নি সরকার।

অনুমতি না দেওয়ার কারণ হিসেবে নির্বাচনকে সামনে রেখে নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামনে আসছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা অনুবিভাগের এক কর্মকর্তা গত সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্বাচনকে সামনে রেখে নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে এখন কোনো কনসার্টের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না।’

বিদেশি শিল্পীদের নিয়ে কনসার্টের অনুমতি পেতে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে হয়, পরে আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যায়। গোয়েন্দা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে কোনো কনসার্টের অনুমতি দেয় সরকার।

১৩ ডিসেম্বর ‘আতিফ আসলাম অ্যাট মেইন স্টেজ’ শোতে আতিফ আসলামের গাওয়ার কথা ছিল, তবে আয়োজনটি স্থগিত হয়
ইনস্টাগ্রাম থেকে
আরও পড়ুন

নির্বাচনের আগে বিদেশি শিল্পীদের অনুমতি না দেওয়ার ক্ষেত্রে শিল্পীর নিরাপত্তার বিষয়টিও সামনে আসছে। বিষয়টি নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে ব্যান্ডশিল্পী হামিন আহমেদ সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাইরের শিল্পীকে যখন কোনো পাবলিক শোতে আনা হচ্ছে, তখন তাঁর নিরাপত্তার বিষয়টিও প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায়। শোতে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা হলে তিনিও (শিল্পী) আক্রান্ত হতে পারেন।’

কনসার্ট বিশ্লেষকেরা বলছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের পর নিরাপত্তা পরিস্থিতি বদলাতে পারে, তখন আবার নিয়মিত বাইরের শিল্পীদের শো হতে পারে।

আরও পড়ুন

অনুমতি ছাড়াই টিকিট বিক্রি নিয়ে প্রশ্ন

১৪ নভেম্বর আলী আজমতের ‘লেজেন্ডস লাইভ ইন ঢাকা’, ২৮ নভেম্বর জাল ব্যান্ডের ‘সাউন্ড অব সোল’, ৫ ডিসেম্বর কাবিশ ব্যান্ডের ‘ওয়েভফেস্ট: ফিল দিস উইন্টার’, ১৩ ডিসেম্বর আতিফ আসলামের ‘আতিফ আসলাম অ্যাট মেইন স্টেজ’ ও ১২ ডিসেম্বর অনুব জৈনর শো ছিল। একই অনুষ্ঠানে গাওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশের ফুয়াদ আল মুক্তাদিরেরও। তিনি সব প্রস্তুতি ও মহড়া করেই শোতে অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুত ছিলেন। আলী আজমত, আতিফ আসলাম ও কাবিশ ঢাকায় হাজির হয়েছিল; তবে অনুমতি না মেলায় শেষ মুহূর্তে শো স্থগিত করা হয়।

সরকারের অনুমতি পাওয়ার আগেই কনসার্টের টিকিট বিক্রি নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। হামিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনুমতি না নিয়ে কনসার্টের টিকিট বিক্রি করা অবৈধ। আয়োজকেরা অনুমতি ছাড়া কেন টিকিট বিক্রি করেছে!’

টিকিট কেটেও কনসার্ট দেখতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে। আতিয়া ইসলাম নামের এক দর্শক প্রথম আলোকে জানান, আতিফ আসলামের শোর টিকিট কেটেছিলেন তিনি, শো স্থগিতের পর এখনো টিকিটের টাকা ফেরত পাননি। টিকিটের অর্থ ফেরত না পাওয়ায় প্রতারণার অভিযোগে আতিফ আসলামের কনসার্টের মূল আয়োজক প্রতিষ্ঠান মেইন স্টেজসহ পাঁচ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নালিশি মামলা করেছেন আহসান হাবীব নামের এক দর্শক।

আরও পড়ুন

টিকিটের অর্থ ফেরতের প্রশ্নে মেইন স্টেজের প্রতিষ্ঠাতা কাজী রাফসান প্রথম আলোকে জানান, নির্বাচনের পর আতিফ আসলামের শোটি করবেন তাঁরা। আগের টিকিট দেখিয়েই শোতে যেতে পারবেন দর্শকেরা। কেউ টিকিটের অর্থ ফেরতে চাইলে আগামী ১০ কর্মদিবসের মধ্যে দেওয়া হবে।

মেইন স্টেজ ছাড়াও প্রাইম ওয়েভ কমিউনিকেশনস (ওয়েভফেস্ট: ফিল দিস উইন্টার), অ্যাসেন কমিউনিকেশন (লেজেন্ডস লাইভ ইন ঢাকা), স্টেইজ কো (সাউন্ড অব সোল), হাইপনেশনসহ (অনুব জৈন) বেশ কয়েকটি আয়োজক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কনসার্টের অনুমতি পাওয়ার আগেই টিকিট বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে।

অনুমতি ছাড়া টিকিট বিক্রির অভিযোগের বিষয়ে কাজী রাফসান প্রথম আলোকে জানান, কনসার্টের এক দিন আগে চূড়ান্ত অনুমতি মেলে। শোর এক দিন আগে টিকিট শেষ করা দুরূহ। এর আগে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে অনাপত্তিপত্র পাওয়ার পর টিকিট বিক্রি শুরু করেছেন তাঁরা।

মেইন স্টেজ ছাড়াও বাকি আয়োজক প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, তারা টিকিটের অর্থ ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কেউ কেউ লিখছেন, তাঁরা এখনো টিকিটের অর্থ ফেরত পাননি।

আরও পড়ুন
‘বিজয় দিবস কনসার্ট’-এ গাইছে শিরোনামহীন
আয়োজকদের সৌজন্যে

দেশি শিল্পীদের কনসার্ট হচ্ছে

মহান বিজয় দিবসে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘বিজয় দিবস কনসার্ট’-এ দর্শকের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। এতে শিরোনামহীন, লালন, বাংলা ফাইভসহ বেশ কয়েকটি ব্যান্ড গেয়েছে।

ঢাকার বেশ কয়েকটি ব্যান্ড ও শিল্পীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁরা ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়মিত শো করছেন। তবে বেশ কয়েকটি শো বাতিল হওয়ারও খবর মিলেছে।
এ মাসে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে ২০টির মতো শো করেছে শিরোনামহীন, এর মধ্যে দু–একটি শো বাতিল হয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহীর বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে গাওয়ার কথা ছিল শিরোনামহীনের। তবে নিরাপত্তার কারণে শেষ মুহূর্তে শো বাতিল করা হয়।

আরেক ব্যান্ড অ্যাশেজ জানিয়েছে, গত দুই মাসে ৪০টির বেশি শো করেছে ব্যান্ডটি। ব্যান্ডের এক সদস্য প্রথম আলোকে জানান, এর মধ্যে দু–একটি শো বাতিল হয়েছে। জটিলতা ছাড়াই বাকি শো করেছেন তাঁরা।

জেমসও কয়েকটি শো করেছেন। এর বাইরে গত ১০ অক্টোবর মেহেরপুর জেলা স্টেডিয়ামে কনসার্টে জেমসের গাওয়ার কথা ছিল, তবে সেই কনসার্টের অনুমতি দেয়নি প্রশাসন।

২ ডিসেম্বর পাবনায় একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অ্যাভয়েড রাফার শো ছিল। কনসার্ট শুরুও হয়েছিল, মাঝপথে অনুমতি বাতিল করে প্রশাসন।