‘গানটি শুনে কান্না পেয়েছে তাঁদের’

সাব্বির নাসির

টাকা দিয়ে কি সুখ কেনা যায়? বহুল চর্চিত এ প্রশ্নের উত্তর এককথায় হয় না। প্রশ্নটির উত্তর দেওয়া যে কতটা কঠিন, ভালোই বোঝেন প্রবাসীরা। ভিনদেশে অর্থ উপার্জন ভালো করলেও অনেকের মনে শান্তি নেই। পরিবারের থেকে দূরে থেকে শান্তি পাওয়া যায় নাকি! ‘কেমন আছেন’ জানতে চাইলে অনেকেই এমন উত্তর দেন। প্রিয়জন থেকে দূরে থাকা প্রবাসীদের এই কষ্টের গল্প গানের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন এ প্রজন্মের শিল্পী সাব্বির নাসির। ‘নাইয়া’ শিরোনামের এই গানে উঠে এসেছে তাঁদের এই কষ্টের কথা।

সারা দিন হাড়ভাঙা খাটুনির পর ঘরে ফিরে অনেক প্রবাসীরই মনখারাপ হয় প্রিয়জনদের না দেখে। এমনকি প্রিয়জনের শেষ মুহূর্তেও তাঁকে একপলক দেখার সুযোগ হয় না তাঁদের। ‘নাইয়া’ শিরোনামের গানটিতে প্রবাসীদের এমন অনেক চেনা গল্পই উঠে এসেছে।

আরও পড়ুন

গতকাল গানটি প্রকাশ পেয়েছে সাব্বির নাসিরের ইউটিউব চ্যানেলে। গানটি যে প্রবাসীদের মনে ধরেছে, তা এই গানের মন্তব্যের ঘরে চোখ বোলালেই বোঝা যায়। সাধারণ শ্রোতাদেরও মন ছুঁয়ে গেছে গানটি। এ প্রসঙ্গে শিল্পী সাব্বির নাসির বলেন, ‘“নাইয়া” অসাধারণ একটি সৃষ্টি। আমার মনে হয়েছে, তামজিদের ফিচারিং ও সালমানের মিক্সিংয়ে আমার অন্যান্য গান থেকে এই গানটিকে আমি ভিন্ন মাত্রার গায়কি দিতে পেরেছি। বাকিটা শ্রোতাদের ওপর। অনেক শ্রোতাই বলছেন, বুকের গভীর থেকে গানটি শুনে কান্না পেয়েছে তাঁদের। অশ্রু আত্মার স্নানের জল। আসুক অশ্রু বানের মতো, এ কামনা রইল।’

‘নাইয়া’ গানে উঠে এসেছে প্রবাসীদের কষ্টের কথা

মেহেদি তামজীদের লেখা এই গানের সুর করেছেন তামজীদ নিজেই। গানটি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘গানটি প্রবাসীদের নিয়ে লেখা। করোনা মহামারির সময় দেখেছি, অনেকে কষ্ট করে টাকা আয় করে দেশে পরিবারের কাছে টাকা পাঠান। তবু তাঁরা সুখের মুখ দেখতে পান না। অনেক সময় মা–বাবাকেও শেষ সময়ে দেখতে দেশে আসতে পারেন না। এরপর গানটি লেখা। আশা করি, গানটি সবার ভালো লাগবে।’

আরও পড়ুন

গানের ভিডিও নির্মাণ করেছেন শাহরিয়ার পলক। তিনি বলেন, ‘গানের বিষয়বস্তু শোনার পর আমার কাছে মনে হয়েছে, একটা চর লাগবে, যেখানে আছে ভাঙা-গড়ার খেলা। আমার দাদার বাড়ি শরীয়তপুরে হওয়ার কারণে চরের মানুষদের কষ্টটা কাছ থেকে দেখেছি আমি। এই মিউজিক ভিডিওর বিষয়বস্তু আমাকে বেশ আকর্ষণ করেছে। ভিডিওতে একটা নৌকা প্রতীকী অর্থে দেখানো হয়েছে, যেখানে একটি বাচ্চা ভাসছে। মা মারা গেলেও আমরা সারাটি জীবন নৌকার মতো ভাসতে থাকি। ভিডিওটি তৈরি করায় অনেক চ্যালেঞ্জ ছিল। এখন দর্শকের রায়ের অপেক্ষা।’

সাব্বির নাসির
ছবি: সংগৃহীত

সাব্বির নাসির নব্বই দশকের শিল্পী। গানে সাব্বির নাসিরের হাতেখড়ি ছোটবেলায়। একসময় খ্যাতিমান ওস্তাদদের কাছ থেকে তালিম নিয়েছেন। গান গাওয়ার পাশাপাশি তিনি লিড গিটার বাজান। ১৯৮৫ সাল থেকে তিনি ব্লুজ মিউজিক নিয়ে কাজ করছেন। অসংখ্য গানের সঙ্গে গিটার বাজিয়েছেন। সুফিবাদ নিয়েও আগ্রহ ছিল তাঁর। ১৯৯৮ সালে মেটামরফোসিস ব্যান্ডের সঙ্গে ‘জীর্ণ শহরে বৃষ্টি নামে’ অ্যালবামে কাজ করেছেন। জিম মরিসন আর মার্ক নফলারের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন সব সময়। একসময় কিছু আক্ষেপ আর গানের জগতের কিছু খামতি দেখে নিভৃতে চলে যান। এরপর নিজেকে প্রতিষ্ঠা করছেন করপোরেট ব্যক্তিত্ব হিসেবে। তবে ২০ বছর পর বদলে যাওয়া সময়ে তরুণদের অনুপ্রেরণা তাঁকে গানে ফিরিয়ে এনেছে। ১৯৯৮ সালের পর সাব্বির নাসির ২০১৮ সালে ‘তুমি যদি বলো’ গান দিয়ে ফেরেন সংগীতজগতে।

শিল্পী সাব্বির নাসির সংগীতাঙ্গনকে দিয়েছেন বেশ কিছু নতুন গান। গত কয়েক বছরে বেশ কিছু নতুন গান নিয়ে আসে। ২০২০ সালে ‘আবোল তাবোল’ গানটি প্রকাশের পর বেশ প্রশংসা কুড়ান তিনি। তাঁর ব্যক্তিগত ইউটিউব চ্যানেলে গানটির সংগীতচিত্র প্রকাশ পায়। এর আগে ‘হর্ষ’, ‘ফুল ফোটাব’, ‘ফাগুন আসছে’, ‘জল জোছনা’, ‘পোকা’, ‘আমারে দিয়া দিলাম তোমারে’, ‘মৃত জোনাকি’, ‘তুমি দমে দম’সহ বেশ কয়েকটি গান বেরিয়েছিল সংগীতচিত্রসহ। সাব্বির নাসির এবং ‘সারেগামাপা’খ্যাত কলকাতার কণ্ঠশিল্পী সম্পা বিশ্বাসের প্রথম দ্বৈত গান ‘বিনোদিনী রাই’ দুই বাংলায় জনপ্রিয়তা পায়।

আরও পড়ুন