ইউটিউবে একের পর এক হিট গান, কে এই তরুণ গায়ক
নতুন প্রজন্মের সংগীতশিল্পীদের মধ্যে সম্প্রতি আলোচিত নাম সৈয়দ অমি। ইউটিউব ঘিরেই তাঁর উত্থান, তাঁর গান এখন ছড়িয়ে পড়েছে দেশের সীমানা ছাড়িয়ে। তাঁর গল্প শুনেছেন নাজমুল হক
কুমিল্লার ছেলে সৈয়দ অমি ছোটবেলা থেকেই গানটাকে আপন করে নিয়েছেন। আনুষ্ঠানিকভাবে গান শেখা হয়নি; তবে মা ভালো গজল গাইতেন। অমির ভাষ্যে, ‘আজ মা বেঁচে নেই। হতে পারে, মায়ের থেকে আমার মধ্যে কিছুটা গানের প্রতিভা এসেছে।’ এলাকার বিভিন্ন অনুষ্ঠান থেকে আড্ডায় গলা ছেড়ে গান গাইতেন অমি। ২০১৬ সালে সুযোগ আসে। প্রথমবার ‘বুকের ভিতর’ মিক্সড অ্যালবামে ‘অবুঝ মন’ গানে কণ্ঠ দেন তিনি। গানের ভিডিও চিত্রেও দেখা যায় তাঁকে।
ইউটিউব থেকে তারকাখ্যাতি
‘অবুঝ মন’ প্রথম গান হলেও অমির সাফল্যের শুরু ‘ঘুম না আসা রাতে’ গান দিয়ে; ইউটিউবে গানটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। ২০১৮ সালে মুক্তি পাওয়া গানটির ভিউ এখন ৪ কোটি ৪৫ লাখ পেরিয়েছে। এরপর মুক্তি পায় ‘মন কান্দে’; এ গানের পর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। এখন পর্যন্ত ৭ কোটি ৮৫ লাখ ভিউ! গানটি ছিল তাঁর ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট। ভিউর দিক থেকে ২০২৪ সালের সেরা ১০ গানের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছিল সৈয়দ অমির ‘মাতাল’। গানটি দেখা হয়েছে আড়াই কোটি বারের বেশি। আলোচনায় ছিল তাঁর আরেক গান ‘দুই চাক্কার সাইকেল’, ভিউ ছাড়িয়েছে ২ কোটি ৮৬ লাখ। চলতি বছরের সাড়া পাওয়া ‘পরী পাইছি রে’ গানটির ভিউ প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ। অন্তর্জালেও গানটি সাড়া ফেলে। গানটির মিউজিক ভিডিও ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে ১ নম্বরে ছিল দুই সপ্তাহের বেশি সময়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও জনপ্রিয় হয়। একইভাবে ‘গোপনে গোপনে প্রেম’, ‘বেবী রিলস বানারে’, ‘মানুষ চিনবা দুদিন আগে–পরে’ গানও তরুণ প্রজন্ম পছন্দ করে। গত ছয় মাসে প্রকাশ পেয়েছে তাঁর ছয়টি গান। এর মধ্যে ‘মাটির একখান ঘর’ ও সর্বশেষ ‘আখেরাতে বিচার হবে’ শোতৃপ্রিয়তা পেয়েছে। অমি বলেন, ‘অডিও ইন্ডাস্ট্রির সেই রমরমা বাজার তো আমি পাইনি, ডিজিটাল মাধ্যমই পেয়েছি। সব সময় চেষ্টা করি গানকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করতে। শ্রোতারা যাতে বিনোদন পায়, গানটাও যেন যুগের পরে যুগ বেঁচে থাকে।’
জনপ্রিয়তার রহস্য
গত দুই বছরে মুক্তি পাওয়া অমির সিংহভাগ গানই মিলিয়ন ভিউ পার হয়েছে। টিকটক থেকে ফেসবুক রিলসে ভিউ হয়েছে লাখ লাখ। টানা সাফল্যের রহস্য কী? অমি বলেন, ‘খুব বেছে কাজ করি। যে গানই নির্বাচন করি, তা আগে আমার কাছে “হিট” হতে হয়। গান তৈরির পর ইন্ডাস্ট্রির বন্ধু, ভাইদের শোনাই। সবার পরামর্শ নিয়েই গান তৈরি করি। আর কোন গান হিট হবে, তা তো কেউ বলতে পারে না। তবে আমার কাছে মনে হয়, ইন্ডাস্ট্রিতে যে আমি এত পরিমাণ সংগ্রাম করেছি, এ অভিজ্ঞতাই আমার সফলতার রহস্য।’
বিয়ে নিয়ে নতুন গান
‘আসসালামু আলাইকুম বিয়াইন সাব’, আবুল কালাম আজাদ পরিচালিত ২০০২ সালে মুক্তি পাওয়া প্রেমের জ্বালা ছবির জনপ্রিয় গানটিতে পর্দায় ঠোঁট মিলিয়েছিলেন শাবনূর ও ফেরদৌস। কণ্ঠ দিয়েছিলেন খালিদ হাসান মিলু ও কনকচাঁপা। আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের লেখা ও সুরে গানটি আবারও ফিরে আসছে নতুন রূপে, ‘আসসালামু আলাইকুম বিয়াইন সাব ২.০’ শিরোনামে। তবে পুরোনো গানটির কেবল প্রথম দুই লাইন রাখা হয়েছে ব্রিজ হিসেবে, বাকি অংশ নতুন কথা ও সুরে। এতে কণ্ঠ দিয়েছেন সৈয়দ অমি ও দিলশাদ নাহার কনা। কথা লিখেছেন স্নেহাশীষ ঘোষ, সুর করেছেন সৈয়দ অমি আর সংগীতায়োজন করেছেন এ এন ফরহাদ। অমির সঙ্গে মডেল হয়েছেন তাঁর স্ত্রী চিত্রনায়িকা আঁচল আঁখি।
চলতি মাসেই অনুপম মিউজিকের ইউটিউব চ্যানেলে মুক্তি পাবে গানটি। ‘বিয়েতে আমাদের দেশে সাধারণত বাইরের দেশের গান বাজানো হয়। তাই ভাবলাম, বিয়েকে কেন্দ্র করে একেবারেই নতুন একটা গান করা যায় কি না। সেখান থেকেই পরিকল্পনার শুরু। বিয়ের প্রসঙ্গ এলেই আমাদের দেশে বিয়াই-বিয়াইনের খুনসুটি সামনে আসে। বিয়েতে তাদের মধ্যে ঠাট্টা-তামাশা ও রসিকতা চলে। এসব মজাই আসর জমিয়ে তোলে। নতুন এই গানে সেই পুরো পরিবেশই জীবন্তভাবে ফুটে উঠবে,’ বলেন অমি।
নানা পরিচয়ে অমি
একই সঙ্গে গাওয়া, অভিনয় ও নির্দেশনা—সবই করেন অমি। নিজের বেশির ভাগ ভিডিও চিত্র পরিচালনা করেন। এত চাপ সামলান কীভাবে? অমি বলেন, ‘যখন কোনো গান মাথায় আসে, চোখ বন্ধ করলেই ভিজ্যুয়াল সামনে ভেসে ওঠে। কোন দৃশ্য কেমন হবে, কোন লোকেশন মানাবে—সবই কল্পনায় থাকে। তাই ভিডিও চিত্র নির্মাণ আমার কাছে সহজ হয়ে যায়। অন্য কাউকে দায়িত্ব দিলে মনে হয়, আমার কল্পনা ফুটে উঠবে না।’ ভিডিওতে অভিনয়ের কৃতিত্ব অবশ্য দিতে চান সহশিল্পীদের। বিশেষ করে আঁচল আঁখিকে উল্লেখ করলেন তিনি। ‘অভিনয়ের কৃতিত্ব আমি নিতে চাই না। সেটি পুরোপুরি আঁচল (আঁখি) সামলান। আমি শুধু তাঁর নির্দেশনা মেনে যতটা সম্ভব অভিনয় ও নাচের চেষ্টা করি,’ বললেন অমি।
টালিউডে প্রথম অভিজ্ঞতা
পশ্চিমবঙ্গের ছবিতেও গান গেয়েছেন অমি। জিৎ চক্রবর্তী পরিচালিত আড়ি সিনেমায় তাঁর কণ্ঠে ‘মরুভূমি’ গানটি প্রশংসিত হয়েছে। গানটির কথা-সুর করেছেন লিংকন রায় চৌধুরী, সংগীত প্রোগ্রামিং করেছেন কেডি। ছবির প্রধান দুই চরিত্রে অভিনয় করেছেন যশ ও নুসরাত জাহান, গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে আছেন মৌসুমী চ্যাটার্জি। ছবিটি মুক্তি পেয়েছে গত ২৫ এপ্রিল। টালিউড প্লেব্যাকে অভিষেক নিয়ে অমি বলেন, ‘গত ১৮ মার্চ গানটির ভয়েস পাঠাই। কাউকে বলিনি। ট্রেলার প্রকাশের পর ব্যাকগ্রাউন্ডে গান শুনে নিশ্চিত হই যে গানটি সিনেমায় আসছে। টিমের সবাই গানটি পছন্দ করেছেন। টালিউডের দর্শকেরাও গানটি পছন্দ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনুভূতি জানিয়েছেন।’ এরই মধ্যে আরও কয়েকটি ছবির কথা চলছে অমির। সব ঠিক থাকলে চলতি বছর আবারও টালিউডে দেখা যাবে তাঁকে। অমি বলেন, ‘এরই মধ্যে একটি ছবিতে গান করেছি। ভয়েস পাঠানো হয়েছে, তবে এখনই ছবির নাম বলতে পারছি না।’
সামনে কী আসছে
নতুন কিছু কাজ শেষ করেছেন অমি। পুরোনো কয়েকটি প্রকল্পও চলছে; সেগুলো একে একে মুক্তি পাবে। নায়ক জসিম অভিনীত আরেকটি জনপ্রিয় গানের আবহ নিয়ে কাজ করছেন। যুক্তরাষ্ট্রে কয়েকটি গানের ভিডিও চিত্রের কাজ শেষ করে এসেছেন, সেগুলো চলতি বছরই আসবে। অমি বলেন, ‘জমানো কাজগুলো বছরজুড়েই আসতে থাকবে। এর বাইরে নতুন কিছু পরিকল্পনা নিয়ে ইন্দোনেশিয়ায় যাব। ভিডিও চিত্রে ভিন্ন কিছু পাবেন দর্শক। সব মিলিয়ে গানগুলোতে আয়োজনে কমতি রাখতে চাইছি না।’