মরমি গায়ক আবদুল আলীমের সন্তানেরা কে কোথায়
‘নাইয়া রে, নায়ের বাদাম তুইলা’, ‘সর্বনাশা পদ্মা নদী’, ‘হলুদিয়া পাখি’, ‘এই যে দুনিয়া’—এর মতো কালজয়ী গানে যুগ যুগ ধরে শ্রোতাদের হৃদয়ে অমলিন রয়েছেন মরমি গায়ক আবদুল আলীম। ১৯৭৪ সালের ৫ সেপ্টেম্বর মারা যান আবদুল আলীম, আজ তাঁর প্রয়াণ দিবস।
আবদুল আলীমের সাত সন্তান। তাঁদের মধ্যে আজগর আলীম, জহির আলীম ও নূরজাহান আলীম পেশাদার সংগীতশিল্পী; শ্রোতামহলে পরিচিতি রয়েছে তাঁদের। বাকি চারজনের মধ্যে আক্তার জাহান আলীম, আছিয়া আলীম বাংলাদেশ বেতার ও বিটিভির তালিকাভুক্ত শিল্পী, তবে গানকে পেশা হিসেবে নেননি। আরেক ছেলে হায়দার আলীম বেসরকারি চাকরিজীবী।
ছয়জন দেশেই থাকেন, বেশির ভাগই ঢাকার বাসিন্দা। আবদুল আলীমের আরেক মেয়ে জোহরা আলীম থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে, সেখানে নিয়মিত গান করেন তিনি।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের তালিবপুর গ্রামের সম্ভ্রান্ত পরিবারে ১৯৩১ সালের ২৭ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন আবদুল আলীম। ছোটবেলায় তাঁর সংগীতগুরু ছিলেন সৈয়দ গোলাম আলী। অল্প বয়স থেকেই বাংলার লোকসংগীতের এই অমর শিল্পী গান গেয়ে নাম করেন। আর বিভিন্ন পালাপার্বণে সেগুলো গাইতেন। এভাবে পালাপার্বণে গান গেয়ে তিনি জনপ্রিয় হন। মাত্র ১৩ বছর বয়সে তাঁর গানের প্রথম রেকর্ড বের হয়। রেকর্ড করা গান দুটি হলো ‘তোর মোস্তফাকে দে না মাগো’ এবং ‘আফতাব আলী বসল পথে’। এত অল্প বয়সে গান রেকর্ড হওয়া সত্যিই বিস্ময়কর। অবশ্য পরে তা আর বিস্ময় হয়ে থাকেনি, তিনি হয়ে ওঠেন বাংলার লোকসংগীতের প্রথিতযশা শিল্পী।
দেশভাগের পরে আবদুল আলীম ঢাকায় চলে আসেন এবং রেডিওতে স্টাফ আর্টিস্ট হিসেবে গান গাইতে শুরু করেন। টেলিভিশন সেন্টার চালু হলে সেখানেও তিনি সংগীত পরিবেশন শুরু করেন। এ ছাড়া তৎকালীন বাংলাদেশের প্রথম চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’সহ বিভিন্ন বাংলা চলচ্চিত্রে আবদুল আলীম গান করেন। আবদুল আলীমের উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র হলো ‘লালন ফকির’। আবদুল আলীম তাঁর আধ্যাত্মিক, মরমি ও মুর্শিদি গানের জন্য অমর হয়ে থাকবেন। পেশাগত জীবনে আবদুল আলীম ছিলেন ঢাকা সংগীত কলেজের লোকগীতি বিভাগের অধ্যাপক।
আবদুল আলীম বাংলাদেশ টেলিভিশন ও রেডিও ছাড়া দেশের বিভিন্ন চলচ্চিত্রে অসংখ্য গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। শিল্পীর ৫০০ গান রেকর্ড হয়েছে, এ ছাড়া স্টুডিও রেকর্ডেও রয়েছে অসংখ্য গান।
বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৭ সালে তাঁকে মরণোত্তর একুশে পদক প্রদান করেছে।