পনেরো পেরিয়ে শূন্য

শূন্য ব্যান্ডের শুরুটা হয় ২০০৭ সালে। একসঙ্গে আড্ডা দিতে গিয়ে পরিচয়, বন্ধুত্ব, এরপর ব্যান্ড তৈরি। পপ ও রক ঘরানার গান করে শূন্য

সম্বল ছিল শুধুই স্বপ্ন। অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও স্বপ্নকে পুঁজি করে শুরু হয় শূন্য ব্যান্ডের। দুই বন্ধুর কাঁধে ভর করে ব্যান্ডটি এসে দাঁড়িয়েছে ১৫ বছরে। জায়গা করে নিয়েছে গানপ্রেমীদের মনে। খোলা মাঠ কিংবা মিলনায়তনে—শূন্যর সদস্যরা গলা ছেড়ে গাইতে থাকেন, শ্রোতারাও তাঁদের সঙ্গে আপনমনে গাইতে থাকেন। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় যখন ব্যান্ডটি তার দেড় দশক পূর্তির অনুষ্ঠানে গাইছিল, তখনো এমন দৃশ্যের অবতারণা হয়। মঞ্চের সামনের শ্রোতারাও গলা মিলিয়ে গেয়ে চলছিলে ‘বেহুলা’, ‘শত আশা’, ‘গোধূলির ওপারে’ কিংবা ‘প্রত্যাশা’র মতো গানগুলো।

এদিন সন্ধ্যায় ঢাকার বসুন্ধরা ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে শূন্য ব্যান্ডের ১৫ বছর উপলক্ষে ‘ফিফটিন ইয়ারস অব শূন্য’ কনসার্ট অনুষ্ঠিত হয়। দুই ঘণ্টার অনুষ্ঠানে গানের তালে তালে সুরের মূর্ছনায় দর্শকদের মাতিয়েছে শূন্য। ব্যান্ডটির ১৫ বছর পূর্তি কনসার্টে অংশ নিয়েছেন এলিটা করিম, ঋতু রাজ, মাশা ও শিরোনামহীন ব্যান্ডের ইশতিয়াক।
এমিল ও শাকেরকে দিয়ে যাত্রা শুরু করা এই ব্যান্ডের সদস্য এখন পাঁচজন। ১৫ বছরে তাঁদের এই যাত্রাপথটা দারুণ বলেও জানালেন। ব্যান্ডের ভোকাল এমিল বলেন, ‘যে স্বপ্ন নিয়ে শূন্য যাত্রা শুরু করে, সেই পথেই হাঁটছি আমরা। দারুণ কথা ও সুরের গান শ্রোতাদের কাছে পৌঁছে দেওয়াটাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল। দেশের পাশাপাশি দেশের বাইরের গানপ্রেমীদের কাছে আমরা সেসব গান পৌঁছে দিতে পেরেছি।’

১৫ বছরে শূন্য ব্যান্ডের প্রকাশিত অ্যালবামের সংখ্যা পাঁচ। ৬ নম্বর অ্যালবামের গান একটি একটি করে প্রকাশিত করা হচ্ছে। এরপর সব কটি গান অ্যালবাম আকারে প্রকাশ করা হবে। এমিল বললেন, ‘১৫ বছরে পাঁচটি অ্যালবাম বের হয়েছে, দেশ–বিদেশে একক কনসার্টও করেছি অনেক। শ্রোতাদের কাছে কৃতজ্ঞ, তাঁরা আমাদের সঙ্গে আছেন। শ্রোতাদের এই ভালোবাসা আমাদের এগিয়ে যাওয়ার বড় প্রেরণা।’

শূন্য ব্যান্ডের সদস্যরা

শূন্য ব্যান্ডের শুরুটা হয় ২০০৭ সালে। একসঙ্গে আড্ডা দিতে গিয়ে পরিচয়, বন্ধুত্ব, এরপর ব্যান্ড তৈরি। পপ ও রক ঘরানার গান করে শূন্য। প্রথম গান ‘প্রত্যাশা’ ছিল ফুয়াদ আল মুক্তাদিরের মিক্সড অ্যালবাম বন্যতে। শূন্যর প্রথম একক অ্যালবাম নতুন স্রোত প্রকাশিত হয় ২০০৮ সালে। তবে প্রথম অ্যালবাম প্রকাশের ক্ষেত্রে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। এমনকি দেশের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের কেউ আগ্রহী হয়নি। তাই বলে দমেও যাননি তাঁরা। নিজেদের উদ্যোগেই প্রকাশ করেন। প্রসঙ্গটি মনে করতেই এমিল বললেন, ‘পুরো অ্যালবাম তৈরি করে আমরা বিভিন্ন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের কাছে যাই। কিন্তু নতুন একটি ব্যান্ডের অ্যালবাম বের করার ঝুঁকি নিতে চায়নি কোনো প্রতিষ্ঠান। এরপর নিজেরাই একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান গড়ার সিদ্ধান্ত নিই। নাম দিই মেরুন মিউজিক। এখান থেকে বের হয় নতুন স্রোত। পরে অবশ্য ফাহিম মিউজিক অ্যালবামটি প্রকাশ করে।’

প্রথম অ্যালবামেই সাফল্যের দেখা পায় শূন্য। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। প্রথম অ্যালবাম দিয়েই ২০০৮ সালে ‘মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার’–এ সেরা ব্যান্ড বিভাগের মনোনয়ন পায় ব্যান্ডটি। এরপর ২০০৯ ও ২০১১ সালে দুবার ‘সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ড’–এ সেরা ব্যান্ডের পুরস্কার পায়।

শুন্য ব্যান্ডের সদস্যরা
ছবি : সংগৃহীত

শূন্য ব্যান্ডের আরও চারটি অ্যালবামের মধ্যে আছে—শত আশা (২০০৯), গড়ব বাংলাদেশ (২০১১), ভাগো (২০১৪) ও লটারি (২০১৬)। লটারি প্রকাশের পাঁচ বছরের মাথায় ২০২১ সালে আবার গান প্রকাশে মনোযোগী হয় শূন্য। তবে তখন আর অ্যালবাম নয়, একক গান প্রকাশ করে। ২০২১–এর শুরুতে ব্যান্ডটি প্রকাশ করে ‘বিবিয়া’। এর ঠিক কিছুদিন পর ‘বেহুলা’ শিরোনামে আরেকটি গান প্রকাশ করেন। সব বয়সী মানুষের মধ্যে গানটি বেশ সাড়া ফেলে। প্রশংসা কুড়োতে থাকে শূন্যর গাওয়া লোক ধাঁচের এই গান।

‘বেহুলা’র পর এবার প্রকাশিত হলো ‘ঠিক আছে’ শিরোনামের নতুন আরেকটি গান; ১৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে এটি প্রকাশ করা হয়েছে। ব্যান্ড সদস্যদের সূত্রে জানা গেছে, ভালোবাসা দিবসে ‘ক্লোজআপ কাছে আসার গল্প’র থিম সং হিসেবে এটি ব্যবহৃত হবে। জানা গেছে, এ বছরে আরও একটি বা দুটি গান প্রকাশের পরিকল্পনা রয়েছে ব্যান্ডটির।
কথায় কথায় ব্যান্ডের নাম ‘শূন্য’ কেন জানতে চাইলে এমিল বলেন, ‘আমরা এমন একটি নাম রাখতে চেয়েছিলাম, যে নামটি বাংলায় হবে, উচ্চারণ সহজ ও নামটি শোনার পর যেন সবার মনে থাকে। সেভাবেই শূন্য নামটির কথা প্রথম মাথায় আসে। আর আমাদের সবার যাত্রা তো শূন্য থেকেই শুরু।’

শূন্য ব্যান্ডের সদস্যরা হলেন ইমরুল করিম এমিল (ভোকাল ও গিটার), এন্ড্রু মাইকেল গোমেজ (বেস গিটার), ইশমামুল ফরহাদ (লিড গিটার), রাফাতুল বারী লাবিব (ড্রামস)।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন