নব্বইয়ের পর মনে রাখার মতো গান হচ্ছে না

নব্বইয়ের দশকে ‘চাঁদের ঈর্ষা হবে তোমায় দেখে’ গান গেয়ে সাড়া ফেলেছিলেন সংগীতশিল্পী আরিফুল ইসলাম মিঠু। আধুনিক গানকে গজলের ঢঙে পরিবেশন করে পরিচিত পাওয়া এই শিল্পীকে এবার প্রথম দেশাত্মবোধক গানে পাওয়া গেল। গানটিসহ নানা বিষয়ে গতকাল শনিবার মিঠুর সঙ্গে কথা বলল ‘বিনোদন’

প্রথম আলো:

এর আগে কোনো দেশাত্মবোধক গান গাইতে দেখা যায়নি আপনাকে। ‘মাগো পুনর্জনম থাকে যদি’ গানটি কোন ভাবনা থেকে করলেন?

দেশাত্মবোধক গানে সুর করেছি, তবে কখনোই গাওয়া হয়নি। এটিই আমার গাওয়া প্রথম দেশাত্মবোধক গান। দিবস উপক্ষে গানটি করেছি। আমার গাওয়া বেশ কিছু জনপ্রিয় আধুনিক গান রয়েছে, সেগুলো এই প্রজন্মের শিল্পীরা টেলিভিশনে নিয়মিত গাইছে। তবে আমার নিজের কোনো দেশের গান ছিল না, অন্যের গান গাইতাম। দেশাত্মবোধক গানটি লিখেছেন হুমায়ুন কবির, নিজের সুরেই গানটি গেয়েছি। সংগীতায়োজন করেছেন মো. রাশেদ। সপ্তাহ দুয়েক আগে গানটি রেকর্ড করা হয়েছে, স্টুডিওতেই গানের ভিডিও চিত্র ধারণ করা হয়েছে। গানের স্থায়ীটা চারুকেশী রাগের ওপর করা হয়েছে। গানে বৈচিত্র্য আনতে অন্তরাটুকু কাহারবা ও ঝুমুর তালে করেছি।

প্রথম আলো:

আপনি মাঝে গান থেকে দূরে ছিলেন?

মাঝেমধ্যে একটু বিরতি দিই। আমি মিডিয়াতে কম এলেও নিজে নিজে গান চর্চা করে গেছি। আমি বাংলা আধুনিক গানকে গজলের রূপে প্রকাশ করেছি। এর জন্য দুই যুগের বেশি সময় ধরে আমি লড়াই করে গেছি।

প্রথম আলো:

কী ধরনের লড়াই করতে হয়েছে?

ব্যান্ড সংগীতের ডামাডোলের মধ্যে আমি এ ধরনের গান করতে থাকি। নব্বইয়ের দশকে ‘চাঁদের ঈর্ষা হবে তোমায় দেখে’ প্রকাশের পর গানটি বিখ্যাত হয়ে গেল। তখন টিভিতে গান গাইতাম, টিভিতে হারমোনিয়ামের ওপর মাইক্রোফোন দিতে চাইত না, আমি ফাইট করে মাইক্রোফোন দেওয়ার চর্চাটা শিখিয়েছি। আমাকে তখন বলা হয়েছিল, অন্যরা মাইক্রোফোন চাইছে না, আমি কেন চাইছি? আমি বলেছি, সেমিক্ল্যাসিক্যাল গজল গাইতে মাইক্রোফোনের প্রয়োজন। ধীরে ধীরে জায়গাটা বদলে গেছে, এখন তো হারমোনিয়ামের ওপর মাইক্রোফোন দেওয়া হয়।

আরিফুল ইসলাম মিঠু
ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে
প্রথম আলো:

আপনি এখনো মাইক্রোফোনে গান করেন, তবে হালের শিল্পীদের অটো টিউনে নির্ভরতা বেড়েছে। বিষয়টিকে কীভাবে দেখেন?

হ্যাঁ, আমি এখনো সাধারণ মাইক্রোফোনে গান করছি। অটো টিউন ব্যবহারের ফলে শিল্পীরা গানের মূল জায়গা থেকে দূরে যাচ্ছে। এই গানগুলো বছরের পর বছর ধরে থাকে না, হয়তো ক্ষণিকের জন্য ‘ভাইরাল’ হয়, তবে টেকে না। এখন অনেকে মনে করেন, গানবাজনা শেখার দরকার নেই, যন্ত্রের মাধ্যমেই গান করা যায়।

প্রথম আলো:

সংগীতে কাকে আদর্শ মানেন?

ওস্তাদ মেহেদি হাসানকে। আট বছর বয়স থেকে আমি গজল শুনতাম। তাঁর গজল শুনে আমার লোম দাঁড়িয়ে যেত। আমাদের বাড়িতে ওনার একটা ছবি ছিল। আরেকজনকেও আদর্শ মানি, ওস্তাদ বড়ে গুলাম আলী।

প্রথম আলো:

দেশে তো গজলের ঢঙে গানের চর্চা খুব বেশি নেই।

দেশে পিওর গজলটা ছিল না বললেই চলে। তবলা ও হারমোনিয়ামে করেছি, এখনো করে যাচ্ছি।

প্রথম আলো:

কবে থেকে এমন প্রবণতা দেখছেন?

ষাট, সত্তর থেকে আশির দশকে বাংলা সিনেমায় অসাধারণ সব সুর, গান হয়েছে। সেসব গানের কোনো জবাব নেই। মূলত নব্বইয়ের পর মনে রাখার মতো গান হচ্ছে না। হালের শিল্পীরা এখনো সেই গানগুলোই গাইছে, নতুন গান নেই কেন?

প্রথম আলো:

সামনে আপনার কী গান আসছে?

স্বপন হালদারের কথায় ‘আষাঢ়ের বৃষ্টি তুমি’সহ একাধিক গান রেকর্ড করে প্রকাশ করব। গানগুলো আমার ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত হবে।

আরিফুল ইসলাম মিঠু
ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে
প্রথম আলো:

এখন তো আর অ্যালবামের যুগ নেই, সেই দিনগুলো কতটা মিস করেন?

ছয়টা বা আটটা গান অ্যালবাম আকারে বের হতো। ওটার আনন্দ আলাদা ছিল। নতুন অ্যালবাম আমার জন্য উৎসবের মতো ছিল। অ্যালবামের প্রচ্ছদ, গান রেডি করা নিয়ে একধরনের উত্তেজনা কাজ করত। এখন মোবাইলের যুগে হাতে হাতে পাচ্ছে। ক্যাসেট প্লেয়ারে যেতে হচ্ছে না। এটার একটা সুবিধাও হয়েছে, তবে ওই আনন্দটা পাচ্ছি না।

প্রথম আলো:

আপনি গানে এলেন কীভাবে?

শৈশব থেকেই গান শিখেছি। ১৯৮৭ সাল থেকে নিয়মিত গান করছি। ১৯৯২ সালে শিল্পী হিসেবে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) তালিকাভুক্ত হই। ১৯৯৩ সালে মিল্টন খন্দকারের কথায় ও শহীদুর রহমানের সুরে বিটিভিতে উন্মেষ অনুষ্ঠানে ‘চাঁদের ঈর্ষা হবে’ গানটি গাই। পরে গানটি অ্যালবামেও প্রকাশিত হয়। সংগীতা, সাউন্ডটেক থেকে আমার কয়েকটি অ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে।

আরও পড়ুন