অডিশনে বাদ পড়া শফিউলই হলেন সেরা

শফিউল বাদশা
ছবি : সংগৃহীত

অডিশনেই বাদ পড়েছিলেন শফিউল বাদশা। পরে ‘ওয়াইল্ড কার্ড’-এ যখন ফেরেন, তখনই ভেবেছিলেন ফেরাটা স্মরণীয় করে রাখতে হবে। রেখেছেনও। ‘ম্যাজিক বাউলিয়ানা’র চতুর্থ আয়োজনে প্রথম স্থান অর্জন করেছেন ঢাকার ঢাকার কেরানীগঞ্জের এই তরুণ। দ্বিতীয় হয়েছেন নেত্রকোনার ফকির চান ও তৃতীয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অর্ণব ভট্টাচার্য। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অর্জনকারী পেয়েছেন যথাক্রমে পাঁচ লাখ, তিন লাখ ও দুই লাখ টাকা। গতকাল হয়ে গেল বাউলগানের সবচেয়ে বড় রিয়েলিটি শো ‘ম্যাজিক বাউলিয়ানা ২০২২’-এর গ্র্যান্ড ফিনালে। রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের বলরুমে বসেছিল ঝলমলে আসর।

প্রতিযোগিতায় শেষ পর্যন্ত সেরা হয়ে ভীষণ খুশি শফিউল। নিজের প্রতিভা তুলে ধরার সুযোগ পাওয়ার জন্য ‘ম্যাজিক বাউলিয়ানা’র আয়োজক, অনুষ্ঠানের বিচারকসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।

‘ম্যাজিক বাউলিয়ানা–২০২২’ পুরস্কার বিতরণ পর্বে (বাঁ থেকে) তৃতীয় স্থান অধিকারী অর্ণব ভট্টাচার্য্য, প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী রুনা লায়লা, প্রথম শফিউল বাদশা, স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেডের হেড অব অপারেশনস মালিক মোহাম্মদ সাঈদ এবং প্রতিযোগীতায় দ্বিতীয় হওয়া ফকির চান
ছবি: সংগৃহীত

নেত্রকোনার নুরুল ইসলাম ফকির গানপাগল মানুষ। তাঁকে দেখেই ছেলে ফকির চানের গানে আসা। বয়স যখন ১৪, স্থানীয় বাউল কিতাব আলীর কাছে গানে হাতেখড়ি। এরপর থেকেই লোকগান গাইতেন। ২০১৯ সালেও ‘ম্যাজিক বাউলিয়ানা’য় অংশ নেন, কিন্তু সেবার সেরা ১৮ থেকেই বাদ পড়েন। তখন থেকেই মনে জেদ, যেভাবেই হোক ভালো করতে হবে। সে চ্যালেঞ্জ থেকেই নিজেকে প্রস্তুত করে নাম লিখিয়েছিলেন।

সহপ্রতিযোগী, পরামর্শক, বিচারক মিলিয়ে এ প্রতিযোগিতা থেকে অনেক কিছুই শিখেছেন ফকির চান। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘গানের সবচেয়ে বড় বিষয় তাল ও লয়। এ ছাড়া গানের বাণী যেন স্পষ্ট হয়, সেটিও খুব গুরুত্বপূর্ণ। অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে এ বিষয়গুলো সম্পর্কে অনেক কিছুই জেনেছি।’ ভবিষ্যতে নিজের অঞ্চল নেত্রকোনাসহ সারা দেশের যেসব বাউলশিল্পী আড়ালে রয়ে গেছেন, তাঁদের নিয়ে কাজ করতে চান ফকির চান।

তৃতীয় হওয়া অর্ণব ভট্টাচার্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীতের বিভাগের ছাত্র। এত বড় প্ল্যাটফর্মে অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতা জানালেন তিনি, ‘বড় মঞ্চে কাজের অভিজ্ঞতা হয়েছে, এটাই সবচেয়ে বড় পাওয়া। এ ছাড়া ক্যাম্পে সব প্রতিযোগী প্রায় এক মাস ছিলাম—এটাও দারুণ অভিজ্ঞতা। সহপ্রতিযোগীদের কাছ থেকে অনেক নতুন নতুন গান সম্পর্কেও জানতে পরেছি।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অর্ণব ছোটবেলা থেকে গান শিখতে পারেননি। তবে এলাকার পালাগানের আসরে ঢুঁ মারতেন নিয়মিত। এভাবেই গানের প্রতি আগ্রহ। ভবিষ্যতে গাওয়ার পাশাপাশি সুরও দিতে চান। ঝোঁক আছে বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র শেখারও।
এ ছাড়া প্রতিযোগিতার সেরা ৬-এ আরও ছিলেন জামালপুরের সাইফুল ইসলাম, কুষ্টিয়ার অর্পা খন্দকার ও জয়পুরহাটের ঐশী রানী।

প্রায় সাত মাস ধরে চলা প্রতিযোগিতাটিতে অংশগ্রহণ করেছিলেন সারা দেশের ৫০ হাজারের বেশি প্রতিযোগী। তাল-সুর-লয়, উচ্চারণ ও গায়কি—এই পাঁচ বিষয়ে মার্কিং করে বিচারকেরা সেরা প্রতিযোগী নির্বাচিত করেন। বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন লোকগানের শিল্পী বাউল শফি মন্ডল, শাহনাজ বেলী ও আরিফ দেওয়ান।
গ্র্যান্ড ফিনালেতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সঙ্গে বাউলগানের সংযোগ আরও দৃঢ় করতে ম্যাজিক বাউলিয়ানায় পরিবেশিত ‘লোকগানের শুদ্ধ সংকলন-১’ বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি শিল্পী রুনা লায়লা, স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেডের হেড অব অপারেশনস মালিক মোহাম্মদ সাঈদ ও বইটির গবেষক ও সম্পাদক, বাংলা একাডেমির উপপরিচালক তপন বাগচী।

আরও পড়ুন

অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশন করেন মডেল ও নৃত্যশিল্পী সাদিয়া ইসলাম মৌ। সঙ্গে ছিল ম্যাজিক বাউলিয়ানার সেরা ছয় প্রতিযোগীর সঙ্গে চঞ্চল চৌধুরীর গান। এ ছাড়া ছিলেন স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেড, মিডিয়াকম, সান কমিউনিকেশনস ও স্কয়ার গ্রুপের অন্যান্য কর্মকর্তা।

সান ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ও স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেডের পৃষ্ঠপোষকতায় মাছরাঙা টেলিভিশনে সম্প্রচারিত হয় ম্যাজিক বাউলিয়ানার গ্র্যান্ড ফিনালে।

আরও পড়ুন