‘কারার ঐ লৌহ-কবাট’ বিতর্ক, সাংস্কৃতিক কর্মীদের পর এবার মুখ খুলেছেন রাজনৈতিক নেতারাও

‘পিপ্পা’য় ব্যবহৃত হয় কাজী নজরুল ইসলামের ‘কারার ঐ লৌহকপাট’ গানটিকোলাজ

‘দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের কারাবরণের পরে ১৯২১ সালে তাঁর পত্রিকা “বাঙ্গলার কথা”র জন্য “কারার ঐ লৌহ–কবাট” কবিতা হিসেবে লেখেন নজরুল। মজফফর আহমেদের স্মৃতিকথায় আছে, চিত্তরঞ্জন-পুত্র লেখা চাইতে এলে কয়েক মিনিটে কবিতাটি লিখে দেন নজরুল। এরপর হুগলি জেলে বন্দিদশায় সুর বসিয়ে অমর গানটির সৃষ্টি নজরুলের। ১৯২৪ সালে “ভাঙার গান” বইটিতে “কারার ঐ লৌহ–কবাট”-এর প্রকাশ। ১৯২৪-এর ১১ নভেম্বর বইটি নিষিদ্ধ করে ব্রিটিশ সরকার। তা আবার প্রকাশিত হয় স্বাধীন ভারতে, বিদ্রোহী কবি যখন রুদ্ধবাক, অসুস্থ!’

আরও পড়ুন

এ গান বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে বলিউডে তৈরি হিন্দি ছবি ‘পিপ্পা’য় ব্যবহৃত হয়। গানটির রিমেকে সুর দেন অস্কারজয়ী ভারতীয় সুরকার এ আর রাহমান। কিন্তু সেই গানের সুর বিকৃত করে সুরারোপ করায় ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে নজরুলভক্তদের মাঝে। দাবি ওঠে, অবিলম্বে চলচ্চিত্রটি থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে ‘কারার ঐ লৌহ–কবাট’ গানটি।

শিল্পী, সুরকার, সাংস্কৃতিক কর্মীদের পর এবার মুখ খুলেছেন রাজনৈতিক নেতারাও। তাঁরাও চলচ্চিত্রের কর্মকর্তাদের বলেছেন, অবিলম্বে এই গান ছবি থেকে সরিয়ে দিতে হবে। ‘কারার ঐ লৌহ–কবাট’ গানটির যে প্রথম রেকর্ডিং করেছিলেন, সেই সংগীতশিল্পী গিরীন চক্রবর্তীর মেয়ে চন্দা চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, ‘আমার বাবা সেদিন দেশপ্রেমের আবেগকণ্ঠে এই গান গেয়েছিলেন। এ গানের ইতিহাস জানলে অস্কারজয়ী শিল্পী এভাবে সুর দিতেন না।’

বর্ধমানের নজরুলসংগীতশিল্পী চন্দা বলেছেন, ‘আমিও এ ঘটনায় ব্যথিত। দাবি করছি, গানটি ছবি থেকে সরিয়ে নেওয়ার।

রোববার এক্স প্ল্যাটফর্মে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ লিখেছেন, ‘গানটির বিকৃতি মেনে নেওয়া যায় না। সুরকার যতই প্রতিষ্ঠিত হোন না কেন, সংশ্লিষ্ট ছবির প্রযোজক ও কর্মকর্তারা অবিলম্বে সরিয়ে নিক। এই ছেলেখেলা অসহ্য।’
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য শমীক লাহিড়ী বলেছেন, গানটির এভাবে বিকৃতরূপকে আমরা সমর্থন করি না। দাবি করছি, অবিলম্বে সিনেমা থেকে সরিয়ে দেওয়া হোক গানটি।

কংগ্রেস নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় লেখা নজরুলের ওই গানের সুর বদল করা যায় না। আমরা নিন্দা জানাই। কারাগারে বন্দী স্বাধীনতা সংগ্রামীরা এই গানে উজ্জীবিত হয়েছেন, তাই এ গানের সুর পরিবর্তন এক অবাঞ্ছিত ঘটনা। প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিজেপি নেতা ও দলের রাজ্য মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যও। তিনি বলেন, নজরুলের সুরের বিবৃত রূপ অনাকাঙ্ক্ষিত, অবাঞ্ছিত ঘটনা।