সাক্ষাৎকারে শিরোনামহীন

‘বাতিঘর’ অ্যালবামের বেশির ভাগ গানেই একাকিত্ব আছে

‘বাতিঘর’ অ্যালবামের শিরোনাম সংগীত ‘বাতিঘর’ প্রকাশ করেছে জনপ্রিয় ব্যান্ড শিরোনামহীন। গানটি নিয়ে আলোচনার মধ্যে গত শনিবার সন্ধ্যায় প্রথম আলো কার্যালয়ে জমাটি আড্ডা দিলেন ব্যান্ডটির দলনেতা, বেজ গিটারিস্ট ও গীতিকার জিয়াউর রহমান, ড্রামার কাজী আহমেদ শাফিন, ভোকালিস্ট শেখ ইশতিয়াক ও গিটারিস্ট দীপু সিনহা; ব্যান্ডের কি–বোর্ডিস্ট সাইমন চৌধুরী আড্ডায় অংশ নিতে পারেননি। আড্ডার সূত্রধর ছিলেন মকফুল হোসেন

প্রথম আলো:

বাতিঘরের মেটাফোর হিসেবে বাবা কিংবা শিক্ষকের পাশাপাশি শিরোনামহীনেরও তো তুলনা টানা যায়।

প্রথম আলো কার্যালয়ে আড্ডায় ‘শিরোনামহীন’–এর জিয়াউর রহমান, কাজী আহমেদ শাফিন, শেখ ইশতিয়াক ও দীপু সিনহা
ছবি: আশরাফুল আলম

জিয়াউর রহমান: একদম তাই। বাবা ও শিক্ষককে আদর্শ হিসেবে দেখতে পারি। আমার মেয়ে আছে, তার জন্য আমি নিজেও তো বাতিঘর হতে পারি। যে আপনাকে দেখে অনুপ্রাণিত হয় তার কাছে আপনি নিজেই বাতিঘর। বহু অভিযোগ শুনেও একটা বাতিঘর দাঁড়িয়ে থাকে। বাতিঘর সবাইকে পথ দেখাবে; আমরাও তেমনটাই করছি। কেউ যাতে হারিয়ে না যাই, সেটা নিশ্চিত করব আমরা, আবার দিন শেষে আমরা একাই থাকব।

কাজী আহমেদ শাফিন: আমার মনে হয়, আসলে আমিই বাতিঘর। রাতে জাহাজকে আমি আলো দেখাচ্ছি, কিন্তু দিন শেষে আমার কথা শোনার কেউ নেই। সংসারে সবাই আপনাকে বলছে, এটা লাগবে, ওটা লাগবে। কিন্তু আমার অভিযোগ করার কোনো জায়গা নেই। গানটা শুনে অনেকেই অনুভব করছেন, বাতিঘর আসলে সে নিজেই।

‘শিরোনামহীন’ ব্যান্ডের দলনেতা, বেজ গিটারিস্ট ও গীতিকার জিয়াউর রহমান
ছবি: ব্যান্ডের সৌজন্যে
প্রথম আলো:

এই গানের অন্তর্নিহিত চরিত্রের মধ্যে শ্রোতারা নিজেদের খুঁজে পাচ্ছেন, ফলে গানটা প্রকাশের অল্প সময়ের ব্যবধানে ছড়িয়ে পড়েছে।

দীপু সিনহা: ইউটিউবে শ্রোতাদের প্রতিক্রিয়া দেখে বোঝা যাচ্ছে, গানের কথার সঙ্গে শ্রোতারা নিজেদের রিলেট করতে পেরেছেন। অনেকে লিখছেন, আমি নিজেই বাতিঘর। আবার কেউ কেউ বাবার সঙ্গে বাতিঘরের তুলনা করছেন।

অনেকে লিখছেন, আমি নিজেই বাতিঘর। আবার কেউ কেউ বাবার সঙ্গে বাতিঘরের তুলনা করছেন।
দীপু সিনহা, গিটারিস্ট
শিরোনামহীন ব্যান্ডের দলনেতা, বেজ গিটারিস্ট ও গীতিকার জিয়াউর রহমান, ড্রামার কাজী আহমেদ শাফিন, ভোকালিস্ট শেখ ইশতিয়াক. গিটারিস্ট দীপু সিনহা ও কি –বোর্ডিস্ট সাইমন চৌধুরী
ছবি: ব্যান্ডের সৌজন্যে
প্রথম আলো:

‘বাতিঘর’ গানে একাকিত্ব আছে, বিষাদ আছে। অ্যালবামের বাকি ৯টি গানেও একাকিত্বের ছায়া থাকবে?

জিয়াউর রহমান: অবশ্যই। অ্যালবামের ১০টি গানে ১০ রকম অনুভূতি থাকবে। এতে জন্মদিন উদ্‌যাপন নিয়ে একটি গান থাকছে। এটা আনপ্লাগড অ্যালবাম, এতে সব অরিজিনাল ইনস্ট্রুমেন্ট বাজছে। এমনকি এই অ্যালবামে কি-বোর্ডে যদি কোনো কাজ করেও থাকি, সেখানে বাজছে শুধু পিয়ানো; এই অ্যালবামে কি-বোর্ড নেই। সিনথ প্লেয়িংয়ের জায়গা থেকে এই অ্যালবামকে সরিয়ে রেখেছি। ফলে এতে একাকিত্ব বেশি আসাটাই স্বাভাবিক। আমরা যখন ব্যালাডে যাচ্ছি, তখন অন্য অনুভূতির চেয়ে একাকিত্বকে তুলে আনা অপেক্ষাকৃত সহজ। তারপরও জন্মদিন নিয়ে একটা গান করেছি; ওটা উদ্‌যাপন করার মতো একটা গান।

কাজী আহমেদ শাফিন: আগের অ্যালবামের ‘জাদুকর’, ‘এ রাতে’ ও ‘এই অবেলায়’ ছাড়া বাকি গানগুলো হেভি ট্র্যাক। তখন আমাদের বন্ধুরা বলল, ‘এমন কিছু গান করো, সেগুলো রাতে ঘুমানোর সময় শোনা যায়।’ সেই ভাবনা থেকেই ‘বাতিঘর’ অ্যালবামে এ ধরনের গান করেছি। এই অ্যালবামের ৬০ শতাংশ গানেই একাকিত্ব, দুঃখবোধ থাকবে। পরের অ্যালবামটা আবার হেভি ট্র্যাকে করব।

আমাদের বন্ধুরা বলল, ‘এমন কিছু গান করো, সেগুলো রাতে ঘুমানোর সময় শোনা যায়।’ সেই ভাবনা থেকেই বাতিঘর অ্যালবামে এ ধরনের গান করেছি। এই অ্যালবামের ৬০ শতাংশ গানেই একাকিত্ব, দুঃখবোধ থাকবে।
কাজী আহমেদ শাফিন, ড্রামার
প্রথম আলো:

‘বাতিঘর’ গানে সুরারোপ করেছেন আপনি। এই গান নিয়ে অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?

দীপু সিনহা: এই গানের দ্বিতীয় অংশটা আগে তৈরি করি; তখন কোভিডের লকডাউন চলছিল। বাসায় খুব একা লাগছিল। রাত দেড়টা-দুইটার দিকে বাইরে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছিল। তখন গিটার নিয়ে বসি, হঠাৎ একটা টিউন ভালো লাগে, সেটা রেকর্ড করে রেখেছিলাম। এর প্রায় এক বছর পর গানের প্রথম অংশ তৈরি করি। এর মাঝে শিরোনামহীনে যোগ দিই। ২০২২ সালে আমরা প্যারিসে শো করতে গিয়েছিলাম। ফ্রান্সের ডুভিল লাইট হাউসের সামনে গিয়ে মিউজিকটা বাজাচ্ছিলাম।

কাজী আহমেদ শাফিন: সেবার ফ্রান্সে শো শেষ করে ১৫ দিনের মতো ঘোরাঘুরি করেছি। ডুভিল লাইট হাউসে ঘুরতে গিয়েছিলাম। ওখানে যখন দীপু (সিনহা) মিউজিকটা বাজাচ্ছিল, মিউজিকের সমুদ্রের শব্দ মিলিয়ে শূন্য একটা অনুভূতি তৈরি হয়েছিল। তখনই ‘বাতিঘর’ গানটার পরিকল্পনা করি। ডুভিল লাইট হাউস দেখেই ‘বাতিঘর’ গানটা লিখেছেন জিয়া ভাই।

দীপু সিনহা
ছবি: ব্যান্ডের সৌজন্যে
প্রথম আলো:

অ্যালবামের বাকি ৯টি গান কবে আসবে?

কাজী আহমেদ শাফিন: প্রতি মাসেই একটা করে গান প্রকাশিত হবে। ১০টি গানের মধ্যে ৮টি গানের ভিডিও চিত্র ধারণ করা হয়েছে। ভারতের হিমাচল প্রদেশে বাকি দুই গানেরও ভিডিও চিত্র করা হবে।

জিয়াউর রহমান: এই অ্যালবাম ডিস্ট্রিবিউশনের দায়িত্ব নিয়েছে ফ্রান্সের প্রতিষ্ঠান বিলিভ আর্টিস্ট সার্ভিস। দক্ষিণ এশিয়ার কনটেন্টগুলো মুম্বাই থেকে ম্যানেজ করে কোম্পানিটি। ওরাই এই অ্যালবামকে সবার কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। ওরা প্রতি মাসে একটা করে গান রিলিজ করতে চায়। বিলিভ আর্টিস্ট সার্ভিস জানিয়েছে, একটা গানের একাধিক ভার্সন থাকবে। এর মধ্যে একটা হলো মিউজিক ভিডিও। পাশাপাশি কোনো গানের শুধু পারফরম্যান্সের ভিডিও করা যায়। এর বাইরে আরেকটা ভার্সন হলো, লিরিক্যাল ভিডিও। বিশেষ করে গাড়ি চালানোর ভিডিও দেখার সুযোগ থাকে না, শুধু শুনতে হয়। সেটা মাথায় রেখে লিরিক্যাল ভিডিও করা যায়। আন্তর্জাতিক আঙ্গিক আনার জন্য ইংরেজি ভার্সনেও কিছু গান করতে পারি। সব গানের ইংরেজি ভার্সন করা কঠিন। আমরা বাতিঘর অ্যালবামের দুটি গানের ইংরেজি ভার্সন করছি। আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে অনেকে মন্তব্য করে, সুরটা খুব ভালো লেগেছে, কিন্তু গানের কথা বুঝতে পারছি না। দুটি গান আমাদের বিদেশি বন্ধুদের জন্য করছি।

কাজী আহমেদ শাফিন
ছবি: ব্যান্ডের সৌজন্যে
প্রথম আলো:

শিরোনামহীন তাহলে এবারই প্রথম ইংরেজি ভার্সনে গান করছে?

কাজী আহমেদ শাফিন: হ্যাঁ। এটা কোনো ইংরেজি গান নয়। এটা মূলত বাংলা গান, আমরা শুধু ইংরেজি ভার্সনটা করছি।

প্রথম আলো:

‘বাতিঘর’ গানে কণ্ঠ দিয়েছেন আপনি; গায়কির প্রশংসাও করছেন শ্রোতারা। এই অ্যালবামে আপনার কাজের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?

শেখ ইশতিয়াক: এই গানের সুরটা একটু আলাদা। এ ধরনের সুরে আমার কখনো গান করা হয়নি। এই নোটেশনে গান করাটা একটু চ্যালেঞ্জিং ছিল, আইডিয়াটাও আলাদা ছিল। শব্দগুলো সুরের সঙ্গে ভালোভাবে বসলে গাওয়াটা আরও সহজ হয়। এই জিনিসগুলো খাপে খাপে মিলে গেছে, সবকিছু দারুণ ছিল।

ভোকালিস্ট শেখ ইশতিয়াক
ছবি: ব্যান্ডের সৌজন্যে
আরও চার-পাঁচটা অ্যালবাম করতে পারলে ভালো হতো। নিজেদের সৃষ্টিকে মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে আরও অনেক গান করতে চাই।
শেখ ইশতিয়াক, ভোকালিস্ট
প্রথম আলো:

২০১৭ সালে শিরোনামহীনে যোগ দিয়েছেন আপনি; এই বছর পথচলার সাত বছর পূর্ণ হবে। আপনার এই যাত্রা কেমন ছিল?

শেখ ইশতিয়াক: ২০১৭ সাল থেকে শিরোনামহীনের সঙ্গে একটার পর একটা গান করছি, শো করছি। এখনো বিশ্রাম আসেনি, বিশ্রাম চাইও না। আমরা চাই, এভাবেই যেন কাজটা করে যেতে পারি। আরও চার-পাঁচটা অ্যালবাম করতে পারলে ভালো হতো। নিজেদের সৃষ্টিকে মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে আরও অনেক গান করতে চাই।

প্রথম আলো:

গানের কথায় শিরোনামহীনকে আলাদা করেছে। শিরোনামহীনের গানে নাগরিক জীবনকে খুব কাছ থেকে অনুভব করা যায়। বেশির ভাগ গান তো আপনি লিখেছেন। আপনার বেড়ে ওঠা নগরে, বেড়ে ওঠার প্রভাবটা তো গানের কথায় এসেছে।

জিয়াউর রহমান: অবশ্যই। আমার জন্ম পুরান ঢাকায়। আমি ঢাকার মানুষ, সেন্ট গেগরিজ স্কুলে পড়েছি। ছোটবেলায় ঢাকাকে একদম আলাদা দেখেছি। তখন নাগরিক জীবনের বাইরে দেশটাকে দেখার সুযোগ হয়নি। শিরোনামহীনের কনসার্টের জন্য দেশের অনেক জায়গায় ঘুরে জেনেছি, দেশটা কত সুন্দর। এর আগপর্যন্ত শহুরে একটা স্কুলের গণ্ডির মাঝেই বেড়ে উঠেছি। যে কারণে নাগরিক জীবনকে নিয়ে লিখতে আমি স্বস্তি অনুভব করি। এটাকে তুলে আনতে পারি বলেই বিশ্বাস করি।

প্রথম আলো:

দেশের শীর্ষ ব্যান্ডগুলো মৌলিক গানে নিয়মিত নই। এখনো কনসার্টে নব্বইয়ের দশকের পুরোনো গান পরিবেশন করে। সেখানে শিরোনামহীন নিয়মিত নতুন গান করেছে; হালের ‘এই অবেলায়’ তো মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়েছে। নিয়মিত মৌলিক গান করা কতটা চ্যালেঞ্জের?

জিয়াউর রহমান: এটাতে সংগ্রাম আছে। পাইরেসির সময়ে অনেকে দ্বিধায় পড়ে গিয়েছিলেন। ফলে নতুন গানের ধারাবাহিকতায় ছেদ ঘটেছিল। শিল্পীরা কাজ না করতে করতে সেটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়। তখন নতুন গান করা খুব কঠিন, আমাদেরও হয়তো সেটা হতে পারত। কিন্তু আমরা চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলাম। আমরা প্যাশন থেকে মিউজিকে এসেছি, মিউজিককে পেশা হিসেবে নেওয়ার পরও প্যাশন কমেনি। মিউজিক কেন করি? আমরা গিটার বাজানো শিখেছি, আরও ইনস্ট্রুমেন্ট বাজানো শিখেছি। আমার সৃষ্টি শোনানোর জন্যই শিখেছি, সেটা বন্ধ হয়ে গেলে এই সংগীতজীবনের মূল্য থাকে না।

কাজী আহমেদ শাফিন: আমাদের সৃষ্টির ক্ষুধাটা খুবই বেশি। প্রতিটি গানে ব্যান্ডের পাঁচজনেরই ভূমিকা রয়েছে। কোনো গাড়ি চলতে চলতে থেমে যাবে না, ধাক্কা দেওয়ার জন্য নতুন কেউ আসে। তেমনই ব্যান্ডের সদস্য পরিবর্তন হলেও আমরা গান করে যাচ্ছি। ২০১৭ সালে আমাদের ফ্রন্টম্যান চেঞ্জ হওয়ার পর অনেকে বলছিলেন, ফ্রন্টম্যান (ভোকালিস্ট) চেঞ্জ হলে ব্যান্ড আর টিকবে না। তখন আমাদের প্রমাণ করার একটা তাগাদা তৈরি হয়েছে। আমরা কাজ দিয়েই যাচ্ছিলাম, এমন না ফ্রন্টম্যান পরিবর্তন হয়েছে বলে নতুন করে কাজ করছি।

জিয়াউর রহমান: গানটা উনি গাইছেন। এত দিন তো গানটা তৈরি করলাম, তাহলে আরেকটা গান কেন তৈরি করতে পারব না? ওই চ্যালেঞ্জ নেওয়ার প্রবণতাটা আমাদের মধ্যে ছিল।

আমরা প্যাশন থেকে মিউজিকে এসেছি, মিউজিককে পেশা হিসেবে নেওয়ার পরও প্যাশন কমেনি। মিউজিক কেন করি? আমরা গিটার বাজানো শিখেছি, আরও ইনস্ট্রুমেন্ট বাজানো শিখেছি। আমার সৃষ্টি শোনানোর জন্যই শিখেছি, সেটা বন্ধ হয়ে গেলে এই সংগীতজীবনের মূল্য থাকে না।
জিয়াউর রহমান, দলনেতা, শিরোনামহীন
প্রথম আলো:

ক্যাসেটে শিরোনামহীনের অ্যালবাম বের হয়েছে, সিডি ঘুরে এখন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে অ্যালবাম আসছে। প্রযুক্তির বাঁকবদলকে কীভাবে দেখছেন?

জিয়াউর রহমান: আমরা এমন একটা ব্যান্ড, যারা তিনটা মিডিয়ার পরিবর্তনটা দেখেছি। প্রথমে ক্যাসেট ছিল, ফিতা পেঁচিয়ে যেত। সেটাকে ঠিক রাখার জন্য পেনসিল রাখা লাগত, আমি ওই প্রজন্মের মানুষ। আমি নিজে ক্যাসেট কিনে শুনতাম। শিরোনামহীনের প্রথম অ্যালবাম জাহাজী ক্যাসেটে বের হয়েছিল, পরে সিডি এল। এখন মোবাইলে গান শোনে।

কাজী আহমেদ শাফিন: আগে অ্যালবাম বের হতো, ভিডিও আসত না। এখন ভিডিও বের করতে হয়। আমরা ১০ মাস ধরে রেকর্ডিং করছি। আবার দুই বছর ধরে ভিডিও করছি, পরে আবার প্রকাশের জন্য অপেক্ষা করছি। জীবনের একটা সময় ভিডিও করতেই কেটে যাচ্ছে। ইউটিউব জনপ্রিয় হওয়ার পর আমাদের বাধ্য হয়ে ভিডিও দিতে হচ্ছে। কারণ, মানুষ এখন শোনার পাশাপাশি দেখতেও চায়।

প্রথম আলো কার্যালয়ে আড্ডায় ‘শিরোনামহীন’–এর জিয়াউর রহমান, কাজী আহমেদ শাফিন, শেখ ইশতিয়াক ও দীপু সিনহা
ছবি: আশরাফুল আলম
প্রথম আলো:

বেশির ভাগ রক ব্যান্ড গিটার, ড্রামস, কি-বোর্ডের মতো ইনস্ট্রুমেন্টনির্ভর। আপনারা রক সংগীতে সরোদ, চেলো, বাঁশির মতো যন্ত্রকে সংগত করেছেন। কোন ভাবনা থেকে করছেন?

জিয়াউর রহমান: জাহাজী অ্যালবামের লাইনআপে ফারহানকে ব্যান্ডে যুক্ত করি। ফারহান দারুণ সরোদ বাজাত। সেটাকে আমাদের গানে ব্যবহার করলে কেমন লাগবে, সেটা নিয়ে নিরীক্ষা করেছিলাম। এ ধরনের নিরীক্ষা বিশ্বের অনেক ব্যান্ডই করেছে, আমরাই প্রথম করেছি—এমন না। তবে বাংলাদেশের পটভূমিতে এটা নতুন। কয়েকটা গানে আবার বাঁশির প্রয়োজন অনুভব করেছি, মুরাদ ভাইকে ডেকে নিয়েছি। অ্যালবামের পরে ইচ্ছেঘুড়ি অ্যালবামের দুটি গান রেকর্ডিংয়ের পর ফারহান চলে যায়। তখন শূন্যতা তৈরি হলো, ‘বন্ধ জানালা’ পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম করতে হলো। পরে আমি অনেকটা একগুঁয়েমি করে কিছু যন্ত্রপাতি নিজেই শেখার চেষ্টা করলাম। পঞ্চম অ্যালবামে কাজের সময় বললাম, সরোদ কিনব। সেটা নিয়েই টেক দিতে চাই, আমি তিন দিনের মাথায় ‘আবার হাসিমুখ’-এ সরোদ বাজিয়েছিলাম। পরে সাফিন বাজিয়েছে, ও দারুণ বাজিয়েছে।

শেখ ইশতিয়াক: পারফিউম অ্যালবামে ভায়োলিনের জন্য রুশ একজনকে হায়ার করতে হয়েছিল। ভেবেছিলাম, বাতিঘর অ্যালবামেও হয়তো বাইরে থেকে কাউকে নিতে হতে পারে। পরে শাফিন ভাই ভায়োলিন কিনলেন, এক সপ্তাহ পর দারুণ টেক দিয়েছে। ফলে আমাদের আর রাশিয়া যেতে হয়নি। এই অ্যালবামে দীপু সিনহা ব্যাঞ্জো বাজিয়েছে।

সাইমন চৌধুরী
ছবি: ব্যান্ডের সৌজন্যে
আরও পড়ুন
প্রথম আলো:

সামনে শিরোনামহীনের কী কনসার্ট আছে?

জিয়াউর রহমান: ২৯ মার্চ ভারতে আমাদের কনসার্ট আছে। এর আগে হিমাচল প্রদেশ বাতিঘর অ্যালবামের বাকি দুটি গানের ভিডিওর শুটিং করে আসব। জুলাইয়ে অস্ট্রেলিয়া, আগস্টে কানাডা কনসার্ট আছে। সঙ্গে দেশের কনসার্ট তো আছেই।

বর্তমান লাইনআপ জিয়াউর রহমান (দলনেতা, বেজ গিটারিস্ট ও গীতিকার), কাজী আহমেদ শাফিন (ড্রামার), শেখ ইশতিয়াক (ভোকালিস্ট), সাইমন চৌধুরী (কি-বোর্ডিস্ট) ও দীপু সিনহা (গিটার)।
আরও পড়ুন