তাঁর যথাযথ মূল্যায়ন হয়নি, ভাগ্যও সুপ্রসন্ন ছিল না

মিতা হক

রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী মিতা হকের প্রয়াণে শোকাহত সংগীতাঙ্গন। গতকাল সকালে তাঁর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শোক প্রকাশ করেছেন বিনোদন অঙ্গনের শিল্পী ও মিতা হকের অনুরাগীরা।
মিতা হকের প্রয়াণে রীতিমতো শোকস্তব্ধ বরেণ্য রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। তিনি বলেন, ‘মিতার এভাবে চলে যাওয়াটা ভীষণ কষ্টের। সারাটা দিন আমার খারাপ কেটেছে। তাঁকে নিয়ে কিছু বলার মতো মানসিক অবস্থায় আমি নেই।’

সাদী মহম্মদ

মিতা হকের সঙ্গে নানা স্মৃতির কথা স্মরণ করেন বরেণ্য রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সাদি মহম্মদ। একসঙ্গে দেশ-বিদেশে গান করাসহ ঘরোয়া নানা আসরে স্মৃতির কথা মেলে ধরেন তিনি। সাদি মনে করেন, মিতা হকের যথেষ্ট মূল্যায়ন হয়নি। তিনি বলেন, ‘যাঁরা সংগীত বোঝেন, তাঁরা নিশ্চয়ই চিনবেন মিতা কত বড় মাপের শিল্পী ছিলেন। তবে তাঁর যথাযথ মূল্যায়ন হয়নি, ভাগ্যও তাঁর সুপ্রসন্ন ছিল না। তবে মিতার মনোবল ছিল প্রকট। এ কারণে এত কষ্টকেও সে পাত্তা দেয়নি।’

মিতার চাচা ওয়াহিদুল হকের পুত্রবধূ ও ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমদ লিসা জানান, করোনা-উত্তর ধকল সামলাতে পারেননি মিতা হক। তাঁকে স্মরণ করে  লিসা বলেন, ‘মিতা আপা ছিলেন শ্রুতিধরের মতো। একটা গান কেবল একবার শুনলেই তুলে নিতে পারতেন কণ্ঠে, নির্ভুল। কোনো স্বরলিপি একবার দেখলে কখনোই ভুল হতো না। তিনি ভীষণ মানবিক আর অসাম্প্রদায়িক মানুষ ছিলেন। যাঁর সঙ্গে পরিচয় হয়েছে, কেউ তাঁকে কখনে ভুলতেন না। তিনি সবাইকে আপন করে নিতে পারতেন। ঠিক ওয়াহিদুল হকের মতোই।’

লাইসা আহমদ লিসা

মিতা হকের দীর্ঘদিনের সহকর্মী জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বুলবুল ইসলাম বলেন, ‘মিতা ছিল এক বলিষ্ঠ সংস্কৃতি সংগ্রামী শিল্পী। মানুষের মঙ্গল দেখে যে ভীষণ আনন্দও পাওয়া যায়, সেটা আমরা তাকে দেখে শিখেছি। আমি ১৯৮১ সালে ঢাকায় আসি। সেই থেকে তার সঙ্গে পথচলা। আমার গুরু ওয়াহিদুল হকের সঙ্গে আনন্দধ্বনি নামে একটি সংগঠনে কাজ করতাম আমি, মিতাসহ অনেকে।’

মা-বাবাকে ছেড়ে প্রথম থিয়েটার করতে একা ঢাকায় এসেছিলেন রুনা খান। কাছের বা দূরের কোনো আত্মীয়র কাছে আশ্রয় পাননি। তাঁকে আশ্রয় দিয়েছিলেন খালেদ খান ও মিতা হক দম্পতি। সেই পরিবারের সঙ্গে কেটেছে ১৮ বছর।

রুনা খান
ছবি : সংগৃহীত

মিতা হকের স্মরণে ফেসবুকে রুনা খান লিখেছেন, ‘২০০৩ সালে তোমাদের বাড়িতে আশ্রয় হলো, আরাম হলো। তারপর থেকে কত স্মৃতি। আজ তোমাকে রেখে আসার সময় মনে মনে শুধু বারবার বলেছি, তোমার শেষ আশ্রয়ে বসবাস আরামদায়ক হোক।’

সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ। ছবি: সংগৃহীত
ছবি:সংগৃহীত

নাট্যজন ও নির্মাতা নাসির উদ্দীন ইউসুফ ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আনন্দের মাঝেই জীবন উথলিয়া ওঠে, এ কথা মিতাকে দেখলেই মনে হতো। দুঃখকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে জীবনের আনন্দে শিশুর মতো করতালি দিত। মিতার মতো জীবনকে ভালোবাসতে আমি কাউকে দেখিনি। এমনভাবে কাউকে জীবন উদ্‌যাপন করতে দেখিনি। শত কষ্ট-দুঃখের মাঝে কলকলিয়ে এভাবে হাসতেও দেখিনি কাউকে। অমন পরিশীলিত সুরেলা কণ্ঠের দেখা মেলা ভার। আর মিলবে কি না, জানি না। জীবন ও শিল্পের এমন শুদ্ধতম মিলন কালেভদ্রে ঘটে।’