মামলার বিষয়ে যা বললেন মেহজাবীন
নাটক, সিনেমা কিংবা ওটিটির কাজ নিয়েই সবচেয়ে বেশি আলোচনায় থাকেন মেহজাবীন চৌধুরী। কাজ দিয়ে ভক্তদের কাছে তিনি আলাদাভাবে পরিচিতি। সেই মেহজাবীন হঠাৎ করেই গতকাল জানতে পারেন তাঁর নামে মামলা হয়েছে। গতকাল সেই মামলায় আত্মসমর্পণ করে জামিন নিতে তাঁকে আদালতে যেতে হয়। তিনি গতকালই জামিন নিয়েছেন। এ ঘটনা নিয়ে এবার ফেসবুকে নিজের বক্তব্য তুলে ধরেছেন। আসলে কী ঘটেছিল মেহজাবীনের সঙ্গে?
মেহজাবীন চৌধুরী লিখেছেন, ‘একজন অজানা ব্যক্তি ২০২৫ সালের মার্চ মাসে আমার ও আমার ১৯ বছর বয়সী ছোট ভাইয়ের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছেন। গত ৯ মাসে আমি এই মামলার কোনো তথ্য পাইনি। কারণ, অভিযোগকারী ব্যক্তি পুলিশকে আমার সঠিক ফোন নম্বর, সঠিক ঠিকানা বা কোনো যাচাইকৃত তথ্য দিতে পারেননি।’
এমন ঘটনায় মেহজাবীন তাঁর নিজস্ব বক্তব্য তুলে ধরেন।
তিনি লিখেছেন, ‘অভিযোগকারীর দাবি ২০১৬ সাল থেকে তিনি আমার সঙ্গে ব্যবসা করছিলেন।’ ‘কিন্তু এই ঘটনার কোনো প্রমাণ দিতে পারেন নাই’ উল্লেখ করে মেহজাবীন লিখেছেন, ‘কোনো যোগাযোগের প্রমাণ নেই। অভিযোগকারী দাবি, ২০১৬ সাল থেকে আমাকে ফেসবুকে মেসেজ দিতেন। সেটাও কিন্তু তিনি দেখাতে পারেননি। মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ বা আমার নম্বরেও কোনো কিছু আসেনি। একটি স্ক্রিনশটও তিনি দেখাতে পারেননি।’
এদিকে গতকাল থেকেই এই অভিনেত্রীর নামে মামলা করা ব্যক্তির পরিচয় পাওয়া যাচ্ছে না উল্লেখ করে মেহজাবীন লিখেছেন, ‘তাঁর পরিচয় অসম্পূর্ণ। তাঁর সম্পূর্ণ পরিচয়পত্র এখনো জমা দেওয়া হয়নি। তাঁর এনআইডি পর্যন্ত অনুপস্থিত।’ এদিকে গতকাল থেকেই অভিযোগকারী ও তাঁর আইনজীবীর মুঠোফোন বন্ধ। এই অভিনেত্রী লিখেছেন, ‘গতকাল খবর প্রকাশ হওয়ার পর থেকে অভিযোগকারী তাঁর ফোন বন্ধ করে রেখেছেন, এমনকি তাঁর আইনজীবীর নম্বরও বন্ধ।’
অভিযোগকারী গতকাল দাবি করেন তিনি ব্যবসায়িক প্রয়োজনে এই অভিনেত্রীকে ২৭ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। এই নিয়ে মেহজাবীন বিবৃতিতে বলেন, ‘আর্থিক লেনদেনের কোনো প্রমাণ নেই। আমাকে ২৭ লাখ টাকা দিয়েছেন, কীভাবে দিলেন; ব্যাংক লেনদেন, কোনো চেক, বিকাশ লেনদেন, কোনো লিখিত চুক্তি, কোনো রসিদ, কোনো সাক্ষী, কিছুই না। একটি কাগজপত্রও তিনি দেখাতে পারেননি।’
এ ছাড়া অভিযোগকারী দাবি করেন গত ১১ ফেব্রুয়ারি এই অভিনেত্রী তাঁকে চোখ বেঁধে হাতিরঝিল এলাকার একটি রেস্টুরেন্টে নিয়ে গিয়েছিলেন। সঙ্গে ছিলেন তাঁর ছোট ভাইসহ আরও ৪-৫ জন। এটাও সত্য নয় উল্লেখ করে মেহজাবীন লিখেছেন, ‘এ ঘটনার প্রমাণ গত নয় মাসে তিনি দেখাতে পারেননি। রেস্টুরেন্ট বা আশপাশের রাস্তার এক সেকেন্ডেরও সিসিটিভি ফুটেজ, কোনো সাক্ষী, কোনো প্রমাণ, কিছুই না। হাতিরঝিল ঢাকার সবচেয়ে বেশি সিসিটিভি-নিয়ন্ত্রিত এলাকা, তবু তিনি একটি ছবি বা ভিডিও ফুটেজ দেখাতে পারেননি।’
অভিযোগকারী বলেছিলেন তিনি মেহজাবীনদের কাছে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছিলেন। এই নিয়ে মেহজাবীন তাঁর বিবৃতিতে লিখেছেন, ‘গত নয় মাসে আমি কোনো নোটিশ পাইনি। কোনো পুলিশ স্টেশনের ফোনকল, কোনো কোর্টের নোটিশ বা ডকুমেন্ট কিছুই পাইনি। কোনো নোটিশ পেলে আমি অনেক আগে থেকেই আইনি ব্যবস্থা নিতাম। আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এই মামলার কোনো ভিত্তি না থাকলেও, যখন জানতে পারলাম, অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট জারি হয়েছে, তখন আমি আইনি প্রক্রিয়া মেনে জামিন নিয়েছি—কারণ, আমি আইন ও নিয়মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।’
‘প্রমাণ ছাড়া দায়ের করা মামলা কখনো সত্য হয়ে যায় না।’ উল্লেখ করে মেহজাবীন লিখেছেন, ‘সত্য খুব দ্রুতই আদালতে পরিষ্কার হয়ে যাবে। এখনকার দিনে কাউকে অপমান করা, মানহানি করা বা ভাইরাল হওয়ার জন্য অন্যকে ব্যবহার করা খুবই সহজ হয়ে গেছে। এই ব্যক্তির যেই উদ্দেশ্যই থাকুক, আমার বা আমার পরিবারের সুনাম ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করে সে যা-ই করতে চায়—আমি বিশ্বাস করি সবকিছু খুব দ্রুতই পরিষ্কার হয়ে যাবে।’
সবার কাছে অনুরোধ করে মেহজাবীন লিখেছেন, ‘কোনো কিছু প্রমাণ হওয়ার আগপর্যন্ত আমি সবাইকে অনুরোধ করব, দয়া করে সহানুভূতিশীল হোন, দয়া করে মানবিক হোন, এবং কাউকে না জেনে কোনো মিডিয়া ট্রায়াল শুরু করবেন না। গত ১৫ বছর ধরে আমি আমার কাজ, আমার পেশা এবং আমার দর্শকদের জন্য যে পরিমাণ পরিশ্রম এবং নিষ্ঠা দিয়ে এসেছি, সেই পরিশ্রমের পরেও আজ আমাকে এসব ব্যাখ্যা করতে হচ্ছে—এটাই সবচেয়ে দুঃখজনক।’