সেদিন সেই দৃশ্য দেখে কেঁদেছিলেন মাহফুজও
মঞ্চ ও টেলিভিশন জগতের জনপ্রিয় এবং সবার প্রিয় ‘রুমি ভাই’ জাগতিক ভ্রমণ শেষ করেছেন। ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করে শেষ পর্যন্ত আর পারলেন না গুণী এই মানুষটি। সব চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে সোমবার শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন জনপ্রিয় মুখ অলিউল হক রুমি। তিন দশকের বেশি সময় ধরে দর্শকদের বিনোদন দিয়ে আসছিলেন রুমি। অভিনয় করেছেন অসংখ্য নাটক এবং সিনেমায়। তাঁর উপস্থিতিতে বাড়তি মাত্রা যুক্ত হতো পর্দায়।
অভিনেতার মৃত্যুর পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সামনে এসেছে বেসরকারি চ্যানেল আরটিভিতে প্রচারিত তাঁর একটি পুরোনো সাক্ষাৎকার। যেখানে অভিনয় এবং বর্তমান সময়ের নাটক নিয়ে কথা বলেন জনপ্রিয় অভিনেতা। আলাপচারিতায় অভিনয়জীবনের সুদিনে ফিরে যান রুমি। বলেন, ‘কাজ তো অনেক করেছি। অনেক ভালো ভালো কাজ হয়েছে। অসংখ্য অসংখ্য ভালো ভালো কাজ আছে। যেগুলো দর্শকনন্দিত হয়েছে, যেগুলোকে সাধারণ মানুষ লুফে নিয়েছে। সেসব কাজ মানুষ ক্যারেক্টারের নাম ধরে বলত, ওই যে রাসু যায়, রাসু। নোয়াশালে আমার চরিত্রের নাম ছিল রাসু। নাম ধরে আমাকে বলত, ওই যে রাসু যায়, রাসু যায়। এটা আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া। অনেক বড় পাওয়া যে নাটকের একটি চরিত্রকে নাম ধরে মানুষ রাস্তায় বলছে।’
বর্তমান সময়ের অভিনেতা-অভিনেত্রী আর নাটক নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে রুমি বলেন, ‘কোনো একটা স্ক্রিপ্ট নেবে না, একটা ভালো গল্প নেবে না। ওখান থেকে কিছু টাকা বাঁচাবে। কিন্তু সুদূরপ্রসারী জিনিসটা তো না। আপনি যদি একজন ভালো পরিচালক হন, তাহলে সেটাই আপনাকে বাঁচিয়ে রাখবে। কিছু অভিনেতা-অভিনেত্রী তাঁরা যে ইউটিউবে নাটকগুলো করেন, তাঁদের কাছে আমার অনুরোধ, ভাই কাজটা করবেন না। নাটক করা এত সহজ না। এই মিডিয়াকে এই পেশাকে কলুষিত করবেন না। শুধু কিছু টাকার জন্য সেটা করে দিয়ে আসেন।’
ভালো কাজের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে অভিনেতা বলেছিলেন, ‘একজন অভিনেতা তো ভুবুক্ষ। সে প্রতিনিয়ত আশা করে ভালো কাজ করব। কিছু কাজ যে পাইনি তা না। একটা নাটক করেছিলাম “বুনো চালতার গায়ে” নাটকের একটি চরিত্র আমাকে দিয়েছিল মাহফুজ আহমেদ। আমি ভুলিনি। বাবু ভাই ছিলেন আমার বড় পীর, আমি মেজ পীর, ছোট পীর ছিলেন আরেকজন। বাবু ভাইয়ের বাচ্চা হয় না, বাবু ভাই পরে আমার বাচ্চা নিয়ে যান। কাউকে বলতে নিষেধও করেন। মেয়েটা ছিল মোনালিসা। মেয়েটা বড় হয়, আমি দূর থেকে দেখি। আমাকে বাবা ডাকে না, বাবা ডাকে বাবু ভাইকে। একসময় মেয়েটা বুঝতে পারে আমিই তার বাবা। মেয়ে জানালার ওপারে আমি এপারে। মাহফুজ মনিটরে বসা। অঝোরে কাঁদছিলাম আমি এবং আমার মেয়ে। দেখি মাহফুজও কাঁদছে। কখনো সময় পেলে নাটকটা দেখবেন।’
১৯৮৮ সালে রুমির অভিনয়ের শুরু থিয়েটার বেইলি রোডের ‘এখনো ক্রীতদাস’ নাটকের মধ্য দিয়ে। একই বছর ‘কোন কাননের ফুল’ নাটকের মাধ্যমে ছোট পর্দায় অভিষেক হয় তাঁর। টেলিভিশনের পাশাপাশি অভিনয় করেছেন সিনেমাতেও। ২০০৯ সালে ‘দরিয়াপাড়ের দৌলতি’ চলচ্চিত্রে প্রথম অভিনয় করেন রুমি।