দেশের জন্য প্রাণ কাঁদে নির্বাসিত এব্রাহিমির

কান চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কারজয়ী জার আমির–এব্রাহিমি
ছবি: রয়টার্স

জার আমির–এব্রাহিমির বয়স যখন ২০–এর কোঠায়, তখন ঘটে এক অঘটন। একটি যৌনদৃশ্যের ভিডিও ফাঁস হয়ে যায় তাঁর। ইরানের মতো কট্টোর ধর্মীয় সংস্কারের দেশে সেটা মেনে নিল না কেউ। তরুণ অভিনেত্রী আমিরের ক্যারিয়ার গেল ধসে। দেশ থেকে বের করে দেওয়া হয় তাঁকে। হলি স্পাইডার ছবিতে অভিনয়ের জন্য এবার ৪১ বছর বয়সে এসে কান চলচ্চিত্র উৎসবে তিনি পেলেন সেরা অভিনেত্রী পুরস্কার।

কানের মঞ্চ থেকে আমির–এব্রাহিমি সমবেদনা জানিয়েছেন নিজের দেশের মানুষদের প্রতি। কদিন আগেই ইরানের আবাদান শহরের একটি ১০ তলা ভবন ধসে প্রায় ৩৪ জন মানুষ মারা যান। পুরস্কার নিতে এসে কাঁপা কাঁপা স্বরে তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে যদিও আমি ভীষণ খুশি। পাশাপাশি নানা সমস্যায় জর্জরিত ইরানের মানুষদের জন্য আমার প্রাণটা কাঁদছে। আজ আমি এখানে, অথচ আমার হৃদয়টা পড়ে আছে দেশের মানুষের কাছে।’

জার আমির–এব্রাহিমি নিজের দেশ ইরান থেকে নির্বাসিত হন ফ্রান্সে
ছবি: রয়টার্স

‘হলি স্পাইডার’ ছবিতে একজন সাংবাদিকের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন আমির–এব্রাহিমি। সেখানে তিনি একজন সিরিয়াল কিলারের পিছু নেন। একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে ছবিটি বানিয়েছেন ইরানি বংশোদ্ভূত ডেনিশ-কানাডীয় নির্মাতা আলী আব্বাসি। ২০০০–০১ সালে ইরানের মাশাদ শহরের ১৬ জন নারীকে শ্বাস রোধ করে খুন করেছিলেন সাইদ হানাই নামের এক ব্যক্তি। কথিত আছে, বেছে বেছে যৌনকর্মীদের হত্যা করতেন তিনি। দেশটির পুলিশ যেন তাঁকে দেখেও দেখত না। সমাজ থেকে এসব ‘অনৈতিক কর্মকাণ্ড’ মুছে ফেলার দাবি করে রীতিমতো কট্টোরপন্থীদের হিরো হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। ২০০২ সালে আটক হন এই ব্যক্তি।

জার আমির–এব্রাহিমি অভিনীত ছবি ‘হলি স্পাইডার’

এই কাহিনি নিয়ে সিনেমা বানানোয় বেশ সমালোচিত হতে হয় পরিচালককে। এমনকি ইরানে ছবিটি প্রদর্শনের অনুমতিও দেওয়া হয়নি। ইরানে শুটিংয়ের অনুমতি না পেয়ে পরে ছবিটির শুটিংও করা হয় জর্ডানে। প্রথম ইরানি হিসেবে সেরা অভিনেত্রীর সম্মানজনক এ পুরস্কার পাওয়ায় দেশটির মানুষেরা আমির-এব্রাহিমিকে নিয়ে গর্বিত। অন্যদিকে কট্টরপন্থীরা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগ তুলেছেন তাঁর বিরুদ্ধে।

কান চলচ্চিত্র উৎসবে আলোকচিত্রায়ন পর্বে জার আমির–এব্রাহিমি

কান চলচ্চিত্র উৎসবের পুরস্কারের মঞ্চে উঠে আমির–এব্রাহিমি বলেন, ‘বহু পথ ঘুরে আমি আজ এই মঞ্চে এসে দাঁড়িয়েছি। সেই পথে অপমান ছিল, নিঃসঙ্গতা ছিল, অন্ধকার ছিল কিন্তু সেখানে সিনেমা ছিল। আজ একটি আনন্দময় রাতে আমি এসে আপনাদের সামনে দাঁড়িয়েছি আমাদের সিনেমাটির জন্য। এই সিনেমা নারীদের নিয়ে। পুরো সিনেমাটিই নারীর মুখ, হাত, পা, যৌনতা নিয়ে, যা ইরানে প্রদর্শন করা অসম্ভব।’