সমালোচনা আমাকে আক্রান্ত করেনি: শর্মিলা ঠাকুর

হাস্যোজ্জ্বল শর্মিলা ঠাকুর, শীতের বিকেলে গায়ে চাদর জড়িয়ে এসেছিলেন তিনিছবি: তানভীর আহাম্মেদ

নির্ধারিত সময়েই ঢাকা ক্লাবে হাজির হলেন অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুর। শীতের বিকেলে কালো রঙের পোশাকের ওপর চাদর জড়িয়ে এসেছেন তিনি; মুখে মিষ্টি হাসি। কুশল বিনিময় শেষে মঞ্চে উঠলেন। গতকাল শুক্রবার ছুটির বিকেলে ঢাকা ক্লাবে প্রথমবারের মতো ঢাকার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলেন এই জনপ্রিয় অভিনেত্রী। দ্বাবিংশ ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের এশিয়ান চলচ্চিত্র প্রতিযোগিতা বিভাগের জুরির দায়িত্ব নিয়ে ১০ দিনের সফরে ঢাকায় এসেছেন তিনি।
অভিনয়ে নাম লেখানো, বলিউডে কাজ, সমালোচনা, বিয়ে, তারকাখ্যাতিসহ নানা বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন শর্মিলা ঠাকুর। আয়োজনটি সঞ্চালনা করেছেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর।

‘সংগ্রাম করতে হয়নি’
অপুর সংসার সিনেমাটি মুক্তির পর ‘অপর্ণা’ চরিত্রটি খুবই জনপ্রিয় হয়েছিল। মানুষের ঘরে ঘরে অপর্ণার নাম ছড়িয়ে পড়েছিল। সে কারণে অভিনয়ে আমাকে খুব একটা সংগ্রাম করতে হয়নি। আমার পরিবার কিংবা আমিও কখনোই চাইনি, অভিনয় করব। মানিকদার (সত্যজিৎ রায়) সঙ্গে কাজের সুযোগ না পেলে হয়তো আমি শান্তিনিকেতনে পড়তাম।

সংবাদ সম্মেলনের সঞ্চালক আসাদুজ্জামান নূর, পাশে শর্মিলা ঠাকুর
ছবি: তানভীর আহাম্মেদ

বলিউড ও টালিউড
বাংলা কিংবা হিন্দি-যেখানেই সিনেমা করেছি মন দিয়ে করেছি। আমি দুই ইন্ডাস্ট্রিতে একসঙ্গে কাজ করেছি। বাংলা ছবিতে যখন কাজ করতাম, তখন সবাই বলত, এটা তোমাদের হিন্দি সিনেমা নয়; একটু ভেবে, সময় নিয়ে ক্যামেরার সামনে রিঅ্যাক্ট করবে। আবার হিন্দি সিনেমায় কাজ করার সময় শুনতাম, এটা সত্যজিৎ রায়ের সিনেমা নয়। দ্রুতলয়ে সংলাপ আওড়াবে।

অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুর
ছবি: তানভীর আহাম্মেদ

বিয়ে ও তারকাখ্যাতি
টাইগারকে (মনসুর আলী খান পতৌদি) বিয়ে করার সময় অনেকেই আমাকে উপদেশ দিয়েছিলেন যে এখন বিয়ের করার সময় নয়। বিয়ের পর আর জনপ্রিয়তা থাকবে না। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, ঠিক সময়ে বিয়ে করাটা দরকার। আমার বিয়ে করাটা উচিত। অন্য লোকের কথা শুনিনি। বিয়ের পর আমরা খুবই সুখী ছিলাম।

সমালোচনা আক্রান্ত করেনি
সমালোচনা আমাকে আক্রান্ত করেনি। আমাকে নিয়ে অনেক কিছু লেখালেখি হতো, তখন আমার খুব খারাপ লাগত। তখন আমি ভাবলাম, পড়ছি কেন? ম্যাগাজিনগুলো নেওয়া বন্ধ করে দিলাম। এটা নিয়ে মাথাব্যথা ছিল না। সমালোচনা তো হবেই। সারা যখন ছবি শুরু করল, ওকে কেউ কিছু বললেই ও কেঁদে ফেলত। ওকে বললাম, ‘মানুষ কী বলছে সেটাকে মেনে নাও। ভালো কিছু হলে শিখতে পারো, ভালো কিছু না হলে এড়িয়ে যাও।’

নারীকেন্দ্রিক সিনেমা বেড়েছে
আগের তুলনায় নারীকেন্দ্রিক সিনেমা বেড়েছে। পিকু সিনেমার কথাই যদি বলি, একটা মেয়ে রোজগার করে তার বাবাকে দেখছে, এটা আগে কেউ বিশ্বাসই করত না। কিন্তু এখন এটা বিশ্বাস করে। বিদ্যা বালানসহ অনেকেই কাজ করছে। এখন নায়িকাপ্রধান ছবি হচ্ছে। নায়িকপ্রধান সিনেমা মানুষ দেখতেও যাচ্ছে।

কমেডি চরিত্র চান
আমার কমেডি চরিত্র খুব একটা করা হয়নি। চুপকে চুপকে সিনেমার চরিত্রে একটু কমেডি ছিল। আমাকে আসলে কমেডি চরিত্র কেউ প্রস্তাব করেনি। কমেডি সিনেমা আমি করতে চাই। আমাকে শুধু কান্নাকাটির চরিত্রে প্রস্তাব দিত।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছেন শর্মিলা ঠাকুর। ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

প্রিয় সিনেমার তালিকা
আমার তিন ছেলেমেয়ে। তার মধ্যে কে প্রিয়, সেটা বলা খুব মুশকিল। সিনেমার ক্ষেত্রেও তা–ই। আমি প্রায় ষাট বছর ধরে কাজ করেছি। সত্যজিৎ রায়ের ছবি বাদে বর্ণালী নামে একটা সিনেমা খুব ভালো। তারপর নির্জন সৈকতে, নমকিন। আগে বলতাম, সফর আমার খুব প্রিয় ছবি। মাঝখানে করোনার মধ্যে আমার আরও বেশ কিছু ছবি দেখেছি। আপাতত নমকিন আমার প্রিয় ছবি।

‘আমি ক্যানসারমুক্ত’
আমার ক্যানসার হয়েছিল ২০১৮ সালে। খুব তাড়াতাড়ি ধরা পড়েছিল। সে কারণে আমাকে কেমোথেরাপি নিতে হয়নি। আমি এখন ক্যানসারমুক্ত।

ওটিটি প্রসঙ্গ
ওটিটিতে ভালো ভালো কাজ হচ্ছে। নতুন অভিনেতা-অভিনেত্রীরা কাজের সুযোগ পাচ্ছে। নানা ধরনের বিষয় নিয়ে কাজ হচ্ছে। আগে যেসব বিষয় নিয়ে কথা বলা যেত না, সেসব নিয়ে চর্চা হচ্ছে। ওটিটিতে অনেক কিছু বলা যায়।

মনসুর আলী খান পতৌদি ও শর্মিলা ঠাকুর
ফেসবুক

বাংলা সিনেমা ও সাহিত্য
সমসাময়িক বাংলা সিনেমার মধ্যে ফেরেশতে ও মাইটি আফরিন দেখেছি। এর বাইরে আর কোনো সিনেমা দেখা হয়নি। আধুনিক বাংলা কবিতা, সাহিত্য আমি পড়তে চাই। ঢাকা থেকে কিছু বই সংগ্রহ করব। আর ঢাকার জামদানি আমাদের ওখানে খুবই জনপ্রিয়। এখানকার জামদানি ওখানে পাওয়া যায়।