‘এদেশের চলচ্চিত্রে নবতরঙ্গের উদ্যোক্তা আলমগীর কবির’

বাংলাদেশে আধুনিক চলচ্চিত্র নির্মানের অন্যতম পথিকৃৎ আলমগীর কবিরকোলাজ

দেশে চলচ্চিত্রে নবতরঙ্গের উদ্যোক্তা ও তাত্ত্বিক তিনি। চলচ্চিত্রের বিষয়বস্ত ও উপস্থাপনায় এনেছেন নতুন ধারা। চিত্রগ্রহণ, ক্যামেরার কোণ নির্ণয়, লেন্সের ব্যবহার, আবহসংগীত রচনা; গানের বাণী, সুর, অভিনয়, সংলাপ বলা কিংবা সম্পাদনা—সবকিছুতেই আধুনিকতার ছাপ রেখেছেন। সে জন্যই বলা হয়, বাংলাদেশে আধুনিক চলচ্চিত্র নির্মানের অন্যতম পথিকৃৎ আলমগীর কবির। পাশাপাশি তিনি চলচ্চিত্রবিষয়ক লেখালেখি, গ্রন্থ রচনা ও সমালোচনা নিয়ে এবং প্রশিক্ষণ ও দেশ-বিদেশি সুস্থ চলচ্চিত্র প্রদর্শনের মাধ্যমে শিক্ষিত চলচ্চিত্র দর্শক, অনুরাগী, বোদ্ধা, লেখক, গবেষক, ছাত্র-শিক্ষক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা তৈরিতে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছেন। এভাবেই দেশের চলচ্চিত্রশিল্পের বিকাশে বরেণ্য চলচ্চিত্রকার আলমগীর কবিরের মূল্যায়ন করলেন প্রাবন্ধিক ও চলচ্চিত্র সাংবাদিক রফিকুজ্জামান।
শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত ‘স্মৃতি সত্তা ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। সোমবার একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার স্টুডিও থিয়েটার হলে এই স্মরণানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

বরেণ্য ব্যক্তিত্বদের মূল্যায়নধর্মী এদিনের আলোচনায় আলমগীর কবিরসহ চার গুণীজনকে স্মরণ করা হয়। বাকি তিনজন হলেন সাহিত্যিক ও পরিসংখ্যানবিদ কাজী মোতাহের হোসেন; সাহিত্যিক, অভিনেতা, নির্দেশক ও নাট্যকার কল্যাণ মিত্র এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী।
অনুষ্ঠানের আলমগীর কবিরের জীবন ও কর্মনির্ভর একাডেমি নির্মিত বিশেষ প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। এরপর ‘আলমগীর কবির: স্বপ্ন দেখা এক অভিযাত্রী’ শীর্ষক প্রবন্ধ পাঠ করেন প্রাবন্ধিক রফিকুজ্জামান। আলোচনায় অংশ নেন চলচ্চিত্র পরিচালক কাজী হায়াৎ। সভাপতিত্ব করেন শিক্ষক ও চলচ্চিত্র পরিচালক মসিহউদ্দিন শাকের।

আলোচকেরা বলেন, যেকোনো শিল্পের উৎকর্ষ সাধনে একজন সমালোচক ব্যারোমিটার হিসেবে কাজ করেন। আলমগীর কবির ছিলেন এমনি একজন ব্যারোমিটার। ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউটের মুখপত্র ‘সাইট এ সাউন্ড’সহ বিভিন্ন পত্রিকায় চলচ্চিত্র সমালোচনা লিখে সুনাম অর্জন করেন তিনি। দেশে ফিরেও বিশ্বের স্বনামখ্যাত চলচ্চিত্রকারদের চলচ্চিত্রসহ দেশীয় বায়োস্কোপ মার্কা চলচ্চিত্র নিয়ে নিয়মিত লিখেছেন। আবার তাঁর নির্মিত চলচ্চিত্র সম্পর্কে দেশি-বিদেশি সমালোচকেরা লিখেছেন। বিশিষ্ট চলচ্চিত্রকার খান আতাউর রহমানে উদ্ধৃতি দিয়ে বক্তারা বলেন, চলচ্চিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে আলমগীর কবির কখনো অসত্যের সঙ্গে সন্ধি করেননি। তাঁর নির্মিত প্রতিটি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রই জীবনধর্মী ছিল এবং সামাজিক অসংগতির দিকে কটাক্ষবহ ছিল।

কল্যাণ মিত্রকে নিবেদিত আলোচনার পূর্বে প্রদর্শিত হয় তার জীবন ও কমের্র ওপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র। ‘নাট্যকার কল্যাণ মিত্র: জনস্রোত কিংবা স্রোতের বিপরীতে’ শীর্ষক প্রবন্ধ পাঠ করেন প্রাবন্ধিক মনিরুল ইসলাম। আলোচনায় অংশ স্বাধীন বাংলা বেতার কর্মী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. মনোয়ার হোসেন। সভাপতিত্ব করেন প্রাবন্ধিক ও গবেষক মফিদুল হক।
দ্বিতীয় পর্বে একাডেমির সংগীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে স্মরণ করা হয় কাজী মোতাহার হোসেন ও কামাল লোহানীকে। অনুষ্ঠানের শুরুতেই প্রদর্শিত হয় দুই গুণীজনের জীবন ও কমের্র ওপর নির্মিত বিশেষ প্রামাণ্যচিত্র। আলোচনা পর্বে ‘সময়ের সাহসী যোদ্ধা কামাল লোহানী’ শীর্ষক প্রবন্ধ পাঠ করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো: মাহমুদুল হাসান। আলোচনায় অংশ নেন। সভাপতিত্ব করেন অভিনয়শিল্পী শংকর সাঁওজাল।