ডেভিড ফ্রস্টের জন্মদিনে দেখে নিন ‘ফ্রস্ট/নিক্সন’ সিনেমাটি

ডেভিড ফ্রস্ট ছিলেন সাংবাদিক। বিখ্যাত হয়ে আছেন কিছু সাক্ষাৎকারের জন্য। বঙ্গবন্ধুর সাক্ষাৎকারও নিয়েছিলেন। আজ তাঁর জন্মদিন। আজকের দিনে দেখতে পারেন ফ্রস্ট/নিক্সন সিনেমাটি। কেননা, এই সাক্ষাৎকারের জন্যই ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছেন ডেভিড ফ্রস্ট

বলা হচ্ছে, ডেভিড ফ্রস্ট সম্ভবত একমাত্র সাংবাদিক, যিনি ১৯৬৪ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত সব কজন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এবং ১৯৬৯ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত সব মার্কিন প্রেসিডেন্টের সাক্ষাৎকার নিয়েছেনকোলাজ

স্যার ডেভিড প্যারাডাইন ফ্রস্ট। সবাই জানেন ডেভিড ফ্রস্ট নামেই। ইংল্যান্ডের কাউন্টি কেন্টের শহর টেন্টারডেনে জন্ম ১৯৩৯ সালের ৭ এপ্রিল। সাংবাদিকতায় বিশ্বজুড়ে তাঁর সুনাম। ব্রিটেনের সাংবাদিক ও টেলিভিশন উপস্থাপক হিসেবে তিনি বিখ্যাত হয়ে আছেন নানা কারণে।
বার্তা সংস্থা বিবিসি বলছে, ডেভিড ফ্রস্টের পেশাগত জীবন শুরু হয়েছিল টেলিভিশনে ব্যঙ্গাত্মক একটি অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে। পরে অবশ্য তিনি বিশেষ বিশেষ অনেক সাক্ষাৎকার নিয়ে নিজের খ্যাতি পৌঁছে দিয়েছিলেন ঘরে ঘরে। পড়াশোনা করেছিলেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে। এরপর যোগদান করেন ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের একটি প্রতিষ্ঠানে। ১৯৬২ সালে তিনি বিবিসিতে শুরু করেন ব্যঙ্গাত্মক শো—‘দ্যাট ওয়াজ দ্য উইক দ্যাট ওয়াজ’। অনুষ্ঠানটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী, ধর্মযাজক, কেউই রেহাই পাননি ডেভিড ফ্রস্টের পরিহাস থেকে। সেই জনপ্রিয়তার পথ ধরেই তিনি শুরু করেন নতুন ধরনের টিভি অনুষ্ঠান, বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিদের বিশেষ সাক্ষাৎকার।

গানের দল বিটেলস, মিক জ্যাগারের মতো সংগীত ব্যক্তিত্ব থেকে শুরু করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সন, বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ অনেক রাষ্ট্রনায়কের সাক্ষাৎকার নেন ডেভিড ফ্রস্ট। স্বাধীনতাযুদ্ধের পর পরই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন তিনি। ওই সাক্ষাৎকারেই পাকিস্তানি বাহিনীর নির্মম নির্যাতনের বর্ণনা দেন বঙ্গবন্ধু।

গানের দল বিটেলস, মিক জ্যাগারের মতো সংগীত ব্যক্তিত্ব থেকে শুরু করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সন, বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ অনেক রাষ্ট্রনায়কের সাক্ষাৎকার নেন ডেভিড ফ্রস্ট।
ডেভিড ফ্রস্টের জন্মদিনে আজ দেখে নিতে পারেন বিখ্যাত সেই সিনেমা—‘ফ্রস্ট/নিক্সন’
আইএমডিবি

বলা হচ্ছে, ডেভিড ফ্রস্ট সম্ভবত একমাত্র সাংবাদিক, যিনি ১৯৬৪ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত সব কজন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এবং ১৯৬৯ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত সব মার্কিন প্রেসিডেন্টের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন।
সাংবাদিকতার দীর্ঘ জীবনে বেশ কয়টি বই লিখেছেন ডেভিড ফ্রস্ট, পেয়েছেন বহু আন্তর্জাতিক পুরস্কার। ব্রিটেনের রানি তাঁকে দিয়েছেন সম্মানসূচক খেতাব। তাঁর সাংবাদিকতার কায়দা সম্পর্কে ব্রিটিশ রাজনীতিক জন স্মিথ একবার তাঁকে বলেছিলেন, ‘ডেভিড, তোমার প্রশ্নগুলো আপাতদৃষ্টে নিরীহ, কিন্তু তার ফলাফল ভয়াবহ।’ জবাবে ডেভিড ফ্রস্ট বলেছিলেন, ‘আমি চাই আমার স্মৃতিফলকে শুধু এ কথাই লেখা থাকবে।’
তবে ডেভিড ফ্রস্ট ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছেন নিক্সনের সাক্ষাৎকারের জন্যই।

রিচার্ড নিক্সন তখন পদত্যাগ করে চুপচাপ ছিলেন। সময়টি ছিল ১৯৭৭ সাল। ডেভিড ফ্রস্ট তখনো বিখ্যাত কেউ নন। ঠিক করলেন নিক্সনের একটা সাক্ষাৎকার নিতে হবে। নিক্সন তখন একপ্রকার নির্বাসিত জীবন যাপন করছেন। গ্লানিময় জীবন তাঁর। দেশের মানুষ পছন্দ করে না। ইতিহাসের অন্যতম সেরা কেলেঙ্কারির জন্মদাতা। ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির জেরে ১৯৭৪ সালে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। সেই নিক্সন রাজি হয়েছিলেন ডেভিড ফ্রস্টকে সাক্ষাৎকার দিতে। তবে এ জন্য দর হাঁকলেন ৬ লাখ ডলার। শর্ত হচ্ছে সাক্ষাৎকারের চারটা পর্ব হবে চার বিষয়ে—ওয়াটারগেট, ভিয়েতনাম যুদ্ধ, অভ্যন্তরীণ নীতি ও ব্যক্তি নিক্সন। এর মধ্যে ওয়াটারগেট কোনোভাবেই মোট সাক্ষাৎকারের ২৫ শতাংশের বেশি হতে পারবে না।

রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী, ধর্মযাজক, কেউই রেহাই পাননি ডেভিড ফ্রস্টের পরিহাস থেকে। সেই জনপ্রিয়তার পথ ধরেই তিনি শুরু করেন নতুন ধরনের টিভি অনুষ্ঠান, বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিদের বিশেষ সাক্ষাৎকার।
১৯৭৭ সালের এপ্রিলে প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের সঙ্গে ডেভিড ফ্রস্ট (বামে)। ছবি: দ্য গার্ডিয়ান/ টাইম অ্যান্ড লাইফ পিকচার্স

নিক্সনের ধারণা ছিল, এই সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে তিনি আবার নিজের হারানো ভাবমূর্তি উদ্ধার করবেন। তিনি মনে করেছিলেন, ডেভিড ফ্রস্ট তাঁর সঙ্গে কথায় পারবেন না। বিষয়টি তখন সহজভাবে নেননি মার্কিন নাগরিকেরাও। তাঁরা মনে করলেন, যে লোকের জেলে থাকা উচিত, সেই লোককে ধনী করে দিচ্ছেন ফ্রস্ট। ফ্রস্ট তখন পেশাগত জীবনের সবচেয়ে বড় সন্ধিক্ষণে।

শুরু হলো মনস্তাত্ত্বিক খেলা। শুরুতে সাক্ষাৎকারে সুবিধা করতে পারছিলেন না ফ্রস্ট। নিক্সন বলা যায় দাঁড়াতেই দেননি ফ্রস্টকে। ফ্রস্ট শিবিরে চরম হতাশা। বাকি আছে ওয়াটারগেট পর্ব। শুরু হলো আসল খেলা। ১৯৭৭ সালে এই চার পর্বের সাক্ষাৎকার প্রচারিত হয়। এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি দেখা সাক্ষাৎকারের রেকর্ড এটি। এ থেকে ফ্রস্টের আয় হয়েছিল ১০ লাখ ডলার।

‘ফ্রস্ট/নিক্সন’ সিনেমার দৃশ্য
আইএমডিবি

মার্কিন টেলিভিশন নেটওয়ার্কে সাক্ষাৎকারের এ ঘটনাকে ‘চেকবুক জার্নালিজম’ নামে অভিহিত করে। চার সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে সাক্ষাৎকারটি প্রায় ২৯ ঘণ্টা ধারণ করা হয়েছিল। ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির ঘটনা নিয়ে সেটিই ছিল নিক্সনের দেওয়া প্রথম বক্তব্য।
এ সাক্ষাৎকার নিয়ে পরে মঞ্চনাটক হয়েছে। সিনেমাও হয়েছে। ডেভিড ফ্রস্টের জন্মদিনে আজ দেখে নিতে পারেন বিখ্যাত সেই সিনেমা—‘ফ্রস্ট/নিক্সন’। ‘আ বিউটিফুল মাইন্ড’ সিনেমার জন্য অস্কার পাওয়া রন হাওয়ার্ডের এ সিনেমা মুক্তি পেয়েছিল ২০০৮ সালে।
ডেভিড ফ্রস্ট আকস্মিক হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ২০১৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর।