ওজুকে স্মরণ করে এবারের টোকিও আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব

৩৬তম টোকিও আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের আনুষ্ঠানিক পোস্টারটিফ

৩৬তম টোকিও আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব শুরু হবে আগামী ২৩ অক্টোবর, চলবে ১ নভেম্বর পর্যন্ত। এবারের উৎসব আগের চেয়ে আরও বেশি বিস্তৃত পরিসরে হবে বলে আশা করছেন আয়োজকেরা। করোনাভাইরাস মহামারির জন্য আরোপিত সব নিষেধাজ্ঞা কার্যত উঠে যাওয়ার পর উৎসব আরও ভালোভাবে আয়োজন করতে পারা নিয়ে উদ্যোক্তারা আশাবাদী। উৎসবের প্রস্তুতি ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে।

আরও পড়ুন

এবারের উৎসবে আয়োজকেরা বরেণ্য জাপানি পরিচালক ইয়াসুজিরো ওজুকে বিশেষভাবে স্মরণের পরিকল্পনা করছেন। চলতি বছর তাঁর জন্মের ১২০তম বার্ষিকী উদ্‌যাপন করা হবে। যে তিনজন পরিচালক জাপানি ছবিকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিয়ে আসায় মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন, ইয়াসুজিরো ওজু তাঁদের অন্যতম।

কেনজি মিজোগুচি ও আকিরা কুরোসাওয়ার পাশাপাশি ওজুকে স্মরণ করা হয় চলচ্চিত্র সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্য। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিক থেকে শুরু করে বিংশ শতাব্দীর সূচনালগ্নে জন্মগ্রহণ করা এই তিন চলচ্চিত্র পরিচালকের মধ্যে মিজোগুচি হলেন বয়োজ্যেষ্ঠ, কুরোসাওয়া কনিষ্ঠ। ওজুর জন্ম দুজনের মাঝখানে, ১৯০৩ সালের ডিসেম্বরে টোকিওতে। ১৯৬৩ সালে ৬০ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করার আগে দেশের ভেতরে সবচেয়ে স্মরণীয় এবং শ্রদ্ধেয় চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে তাঁকে গণ্য করা হতো। তবে ওজুর আন্তর্জাতিক খ্যাতি অবশ্য এসেছে অনেক পরে, বলা যায় তাঁর মৃত্যুর পর।

১৯৩০-এর দশক থেকে জাপানে তাঁর পরিচিতি ছড়িয়ে পড়লেও যুদ্ধকালীন এবং এর ঠিক পরে, ১৯৪২ থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত কোনো ছবি পরিচালনা করেননি তিনি। ১৯৫০-এর দশকের শুরুর দিক থেকে যুদ্ধপরবর্তী জাপানি সমাজে মধ্যবিত্ত জীবনের টানাপোড়েন নিয়ে তৈরি তাঁর একাধিক ছায়াছবি তাঁকে খ্যাতির শিখরে নিয়ে গেছে। ১৯৫৩ সালে ওজুর নির্মিত ছবি ‘টোকিও স্টোরি’কে জাপানি চলচ্চিত্রের মাস্টারপিস হিসেবে গণ্য করা হয়।

চলতি বছর ওজুর জন্মের ১২০তম বার্ষিকীতে তাঁর প্রতি বিশেষ সম্মান প্রদর্শন করবে ৩৬তম টোকিও আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। ওজুর ছবির রেট্রোস্পেক্টিভের আয়োজন ছাড়াও তাঁর জীবন ও সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের ওপর আলোকপাত করে একাধিক অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করছে উৎসব কমিটি। চলচ্চিত্র উৎসবের মূল পোস্টারের থিমও বেছে নেওয়া হয়েছে ওজুর ‘টোকিও স্টোরি’র কাহিনি অনুসরণ করে।

ইয়াসুজিরো ওজু
সংগৃহীত

টোকিও স্টোরির মূল চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন সে সময়ের বিখ্যাত অভিনেত্রী সেৎসুকো হারা। অন্য একটি প্রধান চরিত্রে ছিলেন রিউ চিশু। ছবির কাহিনি যুদ্ধপরবর্তী জাপানের কঠিন বাস্তবতা। বর্ষীয়ান এক দম্পতি বসবাস করছিলেন পশ্চিম জাপানের ছোট এক শহরে। তাঁদের দুই পুত্র ও এক কন্যার মধ্যে দ্বিতীয় সন্তান শোজি যুদ্ধে নিখোঁজ। অন্য দুই সন্তান এবং শোজির স্ত্রী বসবাস করছিলেন টোকিওতে। স্ত্রী এখনো মনে করেন তাঁর স্বামী ঠিকই একসময় ফিরে আসবে। ফলে অনেকের অনুরোধ সত্ত্বেও দ্বিতীয়বার বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে তিনি সম্মত হননি।। বৃদ্ধ দম্পতি সন্তানদের সঙ্গে দেখা করার জন্য টোকিওতে এলে কাজের চাপে পুত্র এবং কন্যা পিতা-মাতাকে একেবারেই সময় দিতে পারেননি। অন্য দিকে পুত্রবধূ অফিসে কাজ থাকা সত্ত্বেও যতটা পেরেছেন শ্বশুর-শাশুড়ির জন্য সময় করে তাঁদের নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছেন এবং যতটা সম্ভব তাঁদের সেবা করার চেষ্টা করেছেন। এই দায়িত্ব পালনের মধ্যে দিয়ে রমণী আরও গভীরভাবে অনুভব করতে পেরেছেন তাঁর নিখোঁজ স্বামীর উপস্থিতি। অতি সাধারণ এই কাহিনিকে পর্দায় অসাধারণ উপায়ে ফুটিয়ে তুলেছেন ওজু।

৩৬তম টোকিও আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের পোস্টারের নকশা করা হয়েছে ‘টোকিও স্টোরি’র কাহিনি অনুসরণ করে। রাজধানীর কেন্দ্রস্থলের একটি উঁচু ভবনের ছাদে তোলা ছবিতে পুত্রবধূ ও শ্বশুরের ভূমিকায় দেখা যায় বর্তমান সময়ের দুই বিখ্যাত চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব এইজি ওকুদা এবং তাঁর কন্যা, চলচ্চিত্র নির্মাতা মমোকো আন্দোকে। পোস্টারের নকশা করেছেন জাপানের বিখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনার জুঙ্কো কোশিনো।
চলচ্চিত্র উৎসবের পোস্টারে বাবার সঙ্গে উপস্থিত হওয়ার বাইরে মমোকো আন্দো একই সঙ্গে এবারের উৎসবের পরিচালকের দায়িত্বও পালন করবেন।

‘টোকিও স্টোরি’র একটি দৃশ্যে সেৎসুকো হারা ও রিউ চিশু
সংগৃহীত

পেশাগত জীবনের পুরো সময় চলচ্চিত্রশিল্পের সঙ্গে জড়িত তিনি। পরিচালনার বাইরে কচি জেলায় একটি প্রেক্ষাগৃহ তিনি চালাচ্ছেন, স্থানীয়ভাবে চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজনও করছেন। আন্দো বলেছেন, সিনেমা বিশ্বকে বদল করে দিতে সক্ষম। তিনি এমন এক বিশ্বের স্বপ্ন তিনি দেখছেন, যে বিশ্ব হবে হানাহানি আর সংঘাত মুক্ত; সবাই যেখানে সময় আর শূন্যতার সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে নিজস্ব আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী বেঁচে থাকতে পারবে।