আকিরা কুরোসাওয়া পুরস্কার পাচ্ছেন চীন ও ইন্দোনেশিয়ার পরিচালক
টোকিও আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ১৯৯০–এর দশকে আকিরা কুরোসাওয়া পুরস্কার প্রবর্তন করলেও পরবর্তী সময়ে আর্থিক জটিলতার কারণে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল সেই পুরস্কার। চলচ্চিত্র শিল্পের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা পরিচালকদের সম্মাননা জানানোর উদ্দেশ্যে জাপানের বিখ্যাত চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্বের নামে প্রবর্তিত পুরস্কার বন্ধ হয়ে যাওয়াকে অনেকেই স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করতে পারেননি। ফলে পুরস্কার ফিরিয়ে আনার জন্য চাপের মুখে থাকা টোকিও আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ১৪ বছর বিরতির অবসান ঘটিয়ে ২০২২ সালে আবারও এই পুরস্কার প্রদান করতে শুরু করে। গত বছর যে দুজন পরিচালককে এই সম্মান প্রদান করা হয়েছিল, তাঁরা হলেন মেক্সিকোর খ্যাতিমান পরিচালক আলেহান্দ্রো গনজালেস ইনাররিতু এবং জাপানি পরিচালক কোজি ফুকাদা। অক্টোবর মাসের শেষ দিকে শুরু হতে যাওয়া ৩৫তম টোকিও আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের জন্য আয়োজকদের মনোনীত বাছাই কমিটি ইতিমধ্যে দুজন পরিচালককে বেছে নিয়েছে।
তাঁরা হলেন চীনের চলচ্চিত্র পরিচালক গু শিয়াও-গাং এবং ইন্দোনেশিয়ার মওলি সুরিইয়া। ৩১ অক্টোবর টোকিওর ইম্পেরিয়াল হোটেলে আয়োজিত বিশেষ অনুষ্ঠানে তাঁদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে।
গু শিয়াও-গাং প্রামাণ্য ও স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি নির্মাতা হিসেবে চলচ্চিত্র অঙ্গনে প্রবেশ করলেও পরবর্তী সময়ে তিনি পূর্ণদৈর্ঘ্যের কাহিনি ছবি নির্মাণ করতে শুরু করেন। প্রথম ছবি ‘ফুচুন পর্বতে বসবাস’ চিত্রায়িত করতে তিনি সময় নিয়েছিলেন দুই বছর। ২০১৯ সালে মুক্তি পাওয়া সেই ছবি একই বছর কান চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানো হয়েছিল এবং টোকিও ফিল্ম এক্স চলচ্চিত্র উৎসবে সে বছর সেটা বিশেষ জুরি পুরস্কার জিতেছিল। ‘ফুচুন পর্বতে বসবাস’ নামের সেই ছবিতে চীনের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসরত বড় একটি পরিবারের জীবনসংগ্রামের বর্ণনার কাব্যিক উপস্থাপনা পরিচালক দেখিয়েছেন। বিশ্বের নেতৃস্থানীয় চলচ্চিত্র পর্যালোচকেরা সেই ছবির আবির্ভাবকে স্বাগত জানিয়েছিলেন চীনা চলচ্চিত্রশিল্পে নতুন প্রজন্মের একজন পরিচালকের বলিষ্ঠ উপস্থিতির প্রমাণ হিসেবে।
আকিরা কুরোসাওয়া পুরস্কার পাওয়া নিয়ে নিজের অনুভূতির ব্যাখ্যা দিয়ে চীনের এই পরিচালক টোকিও আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবকে বলেছেন, ‘এই সম্মান আমার জন্য বড় এক অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। এটা যেন অনেকটা হচ্ছে, কুরোসাওয়া আমাকে বলছেন, “ছায়াছবি আসলে কী, সেটা তোমাকে বুঝে নিতে হবে এবং তুমি যেন ভবিষ্যতে ছবি নির্মাণের যোগ্যতা অর্জন করতে পারো, সে জন্য তোমাকে এটা আমি মনে করিয়ে দিতে চাইছি।”’
বাছাই কমিটি একই সঙ্গে ইন্দোনেশিয়ার পরিচালক মওলি সুরিইয়াকে এ বছরের সহবিজয়ী হিসেবে বেছে নিয়েছে। মওলি সুরিইয়ার প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্যের কাহিনি ছবি ‘ফিকশন’ ২০০৮ সালে ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় চলচ্চিত্র উৎসবে একাধিক পুরস্কার পেয়েছিল। তাঁর দ্বিতীয় ছবি ‘হোয়াট দে ডোন্ট টক অ্যাবাউট হোয়েন দে টক অ্যাবাউট লাভ’ ২০২৩ সালের টোকিও আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানো হয় এবং একই বছর সানডেন্স চলচ্চিত্র উৎসবেও সমালোচকদের দৃষ্টি সেটা আকৃষ্ট করে। মওলি সুরিইয়ার তৃতীয় ছবি ‘মার্লিনা দ্য মার্ডারার ইন ফোর অ্যাক্টস’ ২০১৭ সালের কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হলে নতুন ধারার ইন্দোনেশীয় ছায়াছবি হিসেবে সংবাদমাধ্যমে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়।
আকিরা কুরোসাওয়া পুরস্কারের জন্য এ বছর যে তাঁকে বেছে নেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে মওলি সুরিইয়া বলেছেন, ‘আমার নাম যে আকিরা কুরোসাওয়ার পাশাপাশি উচ্চারিত হবে, সে রকম সৎ সাহস এর আগে আমি কখনো দেখাতে পারিনি। আমার জন্য এটা হচ্ছে বিশাল এক সম্মাননা।’