১৬তম এশিয়ান ফিল্ম অ্যাওয়ার্ডে জাপানি ছবির প্রাধান্য

জাপানি অভিনেতা হিরোশি আবেএশিয়া ফিল্ম অ্যাওয়ার্ডের সৌজন্যে

এশিয়ার তিনটি প্রধান চলচ্চিত্র উৎসব— টোকিও আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব, বুসান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব এবং হংকং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ২০০৬ সালে সম্মিলিতভাবে এশিয়ান ফিল্ম এওয়ার্ড একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেছিল। এক বছর পর ২০০৭ সালের জানুয়ারি মাসে একাডেমি এশিয়ার বিভিন্ন দেশে নির্মিত ছায়াছবিকে পুরস্কৃত করার বার্ষিক আয়োজনের সূচনা করে এবং হংকং চলচ্চিত্র উৎসবকে সামনে রেখে সে বছর মার্চ মাসের ২০ তারিখে প্রথমবারের মতো এশিয়ান ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড পুরস্কার প্রদান করা হয়। উন্নত মানের ছবি নির্মাণে এশিয়ার বিভিন্ন দেশের চলচ্চিত্রশিল্পকে উৎসাহিত করা ছিল পুরস্কার প্রবর্তনের লক্ষ্য। এবারের ১৬তম এশিয়ান ফিল্ম এওয়ার্ড বিজয়ীদের পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান ১২ মার্চ হংকংয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

পুরস্কারের জন্য বিবেচিত হতে হলে যেসব শর্ত ছায়াছবিকে পূরণ করতে হয়, তা হলো ছবিকে অবশ্যই কাহিনিভিত্তিক এবং ৬০ মিনিটের বেশি সময়ের হতে হবে। পুরস্কার যে বছর প্রদান করা হচ্ছে, তার আগের বছর ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সেটার নির্মাণকাজ শেষ হতে হবে এবং এশিয়ার যেকোনো দেশে তা নির্মিত হতে হবে। এশিয়ার সংজ্ঞা নির্ধারণে একাডেমি পূর্ব, দক্ষিণ-পূর্ব এবং দক্ষিণ এশিয়া থেকে শুরু করে মধ্য ও পশ্চিম এশিয়াকেও অন্তর্ভুক্ত রেখেছে। অর্থাৎ ভৌগোলিক দিক থেকে পুরো এশিয়া মহাদেশ এর আওতাভুক্ত। আরকটি আবশ্যকীয় শর্ত হচ্ছে, ইংরেজি সাবটাইটেল ছবিতে অন্তর্ভুক্ত থাকা।

ড্রাইভ মাই কার ছবির পোস্টার
এশিয়া ফিল্ম অ্যাওয়ার্ডের সৌজন্যে

এ বছর শ্রেষ্ঠ ছবির পুরস্কার পেয়েছে জাপানি পরিচালক রিউসুকে হামাগুচির ছবি ‘ড্রাইভ মাই কার’। কান চলচ্চিত্র উৎসবের মূল প্রতিযোগিতা বিভাগে অন্তর্ভুক্ত হওয়া ছাড়াও ২০২২ সালে অস্কার পুরস্কারের জন্য এটা মনোনীত হয়েছিল। ছবিটি নির্মিত হয়েছে হারুকি মুরাকামির রচিত একই নামের একটি ছোট গল্পের ওপর ভিত্তি করে। তবে তাকামাসা ওয়ের সঙ্গে মিলে লেখা চিত্রনাট্যে কাহিনির কিছুটা রদবদল হামাগুচি করে নিয়েছেন। জাপান এবং বিদেশে ছবিটি ইতিমধ্যে যথেষ্ট প্রশংসিত হয়েছে। এশিয়ান ফিল্ম অ্যাওয়ার্ডে শ্রেষ্ঠ ছবির পুরস্কার আরও একটি সম্মাননা ‘ড্রাইভ মাই কারের’ জন্য নিয়ে এসেছে।

হংকংয়ে আয়োজিত পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে দেওয়া সংক্ষিপ্ত ভাষণে হামাগুচি বলেন, তিনি মনে করেন অভিনেতা ও কলাকুশলীদের সকলে আবেগকে সঠিকভাবে পর্দায় প্রতিফলিত করতে পেরেছেন বলেই পুরস্কার গ্রহণের জন্য মঞ্চে উপস্থিত হওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়েছে। আরও বড় কিছু অর্জনের লক্ষ্যে আগামীতে একই দলের সঙ্গে কাজ করে যাওয়ার আশা তিনি ব্যক্ত করেন। উল্লেখ্য, গত বছরের এশিয়ান ফিল্ম অ্যাওয়ার্ডেও জাপানি পরিচালক কিইয়োশি কুরোসাওয়ার ছবি ‘ওয়াইফ অব এ স্পাই’ সেরা ছবির পুরস্কার পেয়েছিল।

জাপানি পরিচালক হিরোকাজু কোরে-এদা
এশিয়া ফিল্ম অ্যাওয়ার্ডের সৌজন্যে

এবারের বিজয়ীদের তালিকায় শ্রেষ্ঠ ছবি ছাড়াও শ্রেষ্ঠ পরিচালক, সেরা সম্পাদনা, ছবির মূল সংগীত রচনা এবং শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব–অভিনেতার পুরস্কারও জাপান পেয়েছে। সেরা পরিচালক হিরোকাজু কোরে-এদার পরিচালনায় নির্মিত ‘ব্রোকার’ নামের ছবিটি অবশ্য হচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়ার।

এ ছাড়া আরও যে একটি বিশেষ সম্মাননা জাপান এবার পেয়েছে, তা হলো এক্সিলেন্স ইন এশিয়ান সিনেমা অ্যাওয়ার্ড। চলচ্চিত্রের বিশেষ কোনো বিভাগে দীর্ঘ সময় ধরে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার স্বীকৃতি হচ্ছে এই পুরস্কার। জাপানি অভিনেতা হিরোশি আবে পেয়েছেন এ বছরের সেই পুরস্কার।
মোট ২০টি বিভাগে অন্য যেসব দেশের ছায়াছবি পুরস্কৃত হয়, সেই তালিকায় চীন, দক্ষিণ কোরিয়া ও হংকংয়ের প্রাধান্য লক্ষ্য করা গেছে। দক্ষিণ এশিয়াসহ এশিয়ার অন্যান্য অঞ্চল অবশ্য এবারের পুরস্কারে জায়গা করে নিতে পারেনি।