বিশ্বের সেরা ১০ সিনেমার গল্পে কী আছে
ইন্টারনেট মুভি ডেটাবেজ (আইএমডিবি) বিশ্বের সবচেয়ে বড় অনলাইন চলচ্চিত্রের তথ্যভান্ডার। এই আইএমডিবিতে রয়েছে মুক্তি পাওয়া কয়েক লাখ ছবির খুঁটিনাটি তথ্য। এই ডেটাবেজে ২৫০টি চলচ্চিত্রের একটি তালিকা আছে। এই তালিকাকে বলা হয় সর্বোচ্চ রেটিং পাওয়া সিনেমা। অনেক চলচ্চিত্র বিশ্লেষক এই ছবিগুলোকে বিশ্বের সেরা ছবি হিসেবেও বিবেচনা করেন। ঘরে বসে দেখতে পারেন আইএমডিবি ব্যবহারকারীদের ভোটে সর্বোচ্চ রেটিং পাওয়া বিশ্বের সেরা ১০টি ছবি।
১. ‘দ্য শশাঙ্ক রিডেম্পশন’
জেল থেকে পালানোর গল্প নিয়ে অনেক সিনেমা হলেও সেরা সিনেমার তালিকায় রয়ে গেছে এটি। ৩১ লাখ ভক্ত সিনেমাটিকে রেটিং দিয়েছেন। সিনেমা–দুনিয়ার অনেক ভক্ত ও সমালোচকেরা মনে করেন, এটিই বিশ্বের ১ নম্বর সিনেমা। এই সিনেমাটির নাম ‘দ্য শশাঙ্ক রিডেম্পশন’। ১৭ বছর ধরে আইএমডিবির তালিকায় সেরা অবস্থান ধরে রেখেছে এই ছবি। বিখ্যাত ছবিটি পরিচালনা করেছেন ফ্র্যাঙ্ক ড্যারাবন্ট। গল্পে দেখা যাবে, পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়া স্ত্রীকে খুন করার পরিকল্পনা করে অ্যান্ডি। হঠাৎ রাতে খুন হয় তার স্ত্রী ও তার প্রেমিক। পরে অ্যান্ডিকে যেতে হয় জেলে। ১৯৯৪ সালে মুক্তি পাওয়া এ ছবিতে অভিনয় করেছেন টিম রবিন্স, মরগান ফ্রিম্যান প্রমুখ।
২. ‘দ্য গডফাদার’
এ তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ‘দ্য গডফাদার’। মাফিয়াজগৎ নিয়ে এখন পর্যন্ত সেরা সিনেমা বলা হয় ‘দ্য গডফাদার’কে। ইতালির সিসিলি থেকে আসা সাধারণ একজন ভিটো কার্লিয়নি ভাগ্যক্রমে হয়ে যায় আমেরিকার অন্ধকার জগতের ডন। ১৯৭২ সালে মুক্তি পাওয়া এই ছবিটি তিনটি বিভাগে অস্কার জিতে নেয়। মারিয়ো পুজোর বিখ্যাত উপন্যাস ‘দ্য গডফাদার’ অবলম্বনে ছবিটি নির্মিত। সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন ফ্রান্সিস ফোর্ড কপোলা। সিনেমাটি ২১ লাখ দর্শকের ভোট পেয়েছে।
৩. ‘দ্য ডার্ক নাইট’
নির্মাতা ক্রিস্টোফার নোলানের সেরা সিনেমার একটি ‘ডার্ক নাইট’ ট্রিলজির দ্বিতীয় ছবি ‘দ্য ডার্ক নাইট’। এই নির্মাতা ‘ব্যাটম্যান বিগিনস’ সিনেমার শেষে প্রথম ইঙ্গিত দেন, পরের ছবিতে ভিলেন হিসেবে আসবে জোকার। ২০০৮ সালে মুক্তি পায় ‘দ্য ডার্ক নাইট’ ছবিটি। অভিনয় করেন ক্রিশ্চিয়ান বেল। জোকার চরিত্র দিয়েই বাজিমাত করেন অভিনেতা হিথ লেজার। নিজের অভিনীত সিনেমাটি তিনি দেখে যেতে পারেননি। সিনেমাটি দিয়ে তিনি পার্শ্বচরিত্রের অভিনেতা হিসেবে অস্কার জয় করেন।
৪. ‘দ্য গডফাদার-২’
তুমুল এক উত্তেজনা দিয়ে শেষ হয় প্রথম কিস্তি। পরে ‘দ্য গডফাদার’ ছবির ধারাবাহিকতায় ১৯৭৪ সালে মুক্তি পায় ‘দ্য গডফাদার টু’। এই সিনেমাটিও দর্শকদের মধ্যে তুমুল সাড়া ফেলে। মাফিয়াজগতে বাবার রেখে যাওয়া আধিপত্য ক্ষমতা ধরে রাখতে মরিয়া হয় কার্লিয়নি। মাইকেল কর্লিয়নি চরিত্রে অভিনয় করেন আল পাচিনো। সিনেমাটি ১১টি শাখায় অস্কার মনোনয়ন পায়। ৬টি শাখায় পুরস্কার পায়। ১৪ লাখ ভক্ত সিনেমাটিকে ভোট দিয়েছেন। সিনেমার রেটিং ৯।
৫. ‘টুয়েলভ অ্যাংরি ম্যান’
১২ জন মানুষের বিবেককে জাগ্রত করার ছবি ‘টুয়েলভ অ্যাংরি ম্যান’। একটি কক্ষের ভেতর শ্বাসরুদ্ধকর এক নাটকীয়তার জন্য বিখ্যাত এই ছবিটি। এক তরুণ নিজের বাবাকে হত্যা করে। সেটা যুক্তিসংগতভাবে সত্য কি না, তা নিয়েই ১২ জন বিচারক একটি কক্ষে একত্রিত হন। ১৯৫৭ সালে মুক্তি পায় ছবিটি। অভিনয় করেন হেনরি ফন্ডা, লি জে কব, জন ফিডলার, মার্টিন বলসাম প্রমুখ। সিনেমাটি ৯ লাখ ৩৯ হাজার ভক্ত ভোট দিয়েছেন। সিনেমাটির রেটিং ৯।
৬. ‘দ্য লর্ড অব দ্য রিংস: রিটার্ন অব দ্য কিং’
২০০৩ সালের সিনেমা ‘দ্য লর্ড অব দ্য রিংস: রিটার্ন অব দ্য কিং’ এই তালিকায় ৬ নম্বরে রয়েছে। অ্যাডভেঞ্চার ফ্যান্টাসি ঘরানার এই সিনেমাটিকে ২১ লাখ দর্শক ভোট দিয়েছেন। সিনেমাটির রেটিং ৯। গ্যান্ডালফ এবং অ্যারাগর্ন, সওরন বাহিনীর হাত থেকে বিশ্বকে রক্ষা করতে নেতৃত্ব দেন। এই পৃথিবী কি রক্ষা পাবে? সেই গল্পের মধ্যে দিয়েই তুলে ধরা হয়েছে বন্ধুত্ব, ত্যাগ ও আশার এ গল্পটি। এটি পরিচালনা করেছেন পিটার জ্যাকসন। সিনেমাটি ১১টি শাখায় অস্কার পুরস্কার জেতে।
৭. ‘শিন্ডলার্স লিস্ট’
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পোল্যান্ডে জার্মান দখলদারির প্রেক্ষাপটে নির্মিত হয়েছে সিনেমাটি। এটি পরিচালনা করেছেন স্টিভেন স্পিলবার্গ। সিনেমার গল্প মূলত অস্কার শিন্ডলার নামের একজন জার্মান ব্যবসায়ীকে নিয়ে। সিনেমায় তাঁর ইহুদি শ্রমিকদের প্রতি সহানুভূতি এবং তাদের জীবন বাঁচানোর গল্প তুলে ধরা হয়েছে। সিনেমাটিতে যুদ্ধের বিভীষিকা যেমন রয়েছে, তেমনি গল্পটি মানুষকে মানবিক হওয়া কথা বলে। সিনেমাটিকে ১৫ লাখ দর্শক আইএমডিবিতে ভোট দিয়েছেন। ১৯৯৩ সালের এই সিনেমাটি সাতটি শাখায় অস্কার জয় করে। সিনেমাটির রেটিং ৯।
৮. ‘পাল্প ফিকশন’
গত বছর সাড়া জাগানো সিনেমা ‘পাল্প ফিকশন’ মুক্তির তিন দশক পার করে। তখন সিনেমার অন্যতম অভিনেতা জন ট্রাভোল্টা জানান, সিনেমাটি নিয়ে তাঁদের প্রত্যাশা একদমই ছিল না। অভিনয়ের জন্য সেরা অভিনেতা হিসেবে অস্কারে মনোনয়ন পাবেন, এটা ভাবেনইনি। ১৯৯৪ সালে মুক্তি পাওয়া সিনেমাটি মাত্র সাড়ে আট মিলিয়ন ডলার বাজেটে তৈরি। সেই সিনেমা ৩১ বছর আগে ২১৩ মিলিয়ন ডলার আয় করে তাক লাগিয়ে দেয়। সিনেমাটির রেটিং ৮.৮। ভোট দিয়েছেন ২৪ লাখ দর্শক। সিনেমাটি পরিচালনা করেন কুয়েন্টিন ট্যারান্টিনো। তিনি অস্কার জেতেন।
৯. ‘দ্য লর্ড অব দ্য রিংস: দ্য ফেলোশিপ অব দ্য রিং’
২০০১ সালের আলোচিত সিনেমা এটি। সিনেমাটির আইএমডিবি রেটিং ৮.৯। ২১ লাখ দর্শক সিনেমাটিকে ভোট দিয়েছেন। পিটার জ্যাকসনের বিখ্যাত সিনেমা এটি। এর গল্পে দেখা যাবে, শান্তশিষ্ট হাবিট ফ্রোডো ব্যাগিন্স হঠাৎ একটি জাদুকরি আংটি পায়। এই আংটিকে ধরা হয় মন্দের প্রতীক হিসেবে। সওরনের তৈরি এই আংটি ধ্বংস না করলে পুরো মধ্য-পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। মহাকাব্যিক এই সিনেমাটি চারটি শাখায় অস্কার জিতে নেয়।
১০. ‘দ্য গুড দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’
বিশ্বের সেরা সিনেমার এই তালিকায় ১০ নম্বরে রয়েছে ‘দ্য গুড দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’। বিখ্যাত পরিচালক সার্জিও লিওনির সিনেমায় ভালো, মন্দ ও খুব খারাপ এমন তিনটি চরিত্রকে ঘিরে। গল্পটি গৃহযুদ্ধের পটভূমিতে বিশ্বাসঘাতকতা, লোভকে কেন্দ্র করে। একটি গুপ্তধনের খোঁজে একে অপরকে ঠকাতে মরিয়া হয়ে ওঠে তারা তিনজন। প্রধান তিনটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন ক্লিন্ট ইস্টউড, লি ভ্যান ক্লিফ, এলি ওয়ালাচ। সিনেমাটির আইএমডিবি রেটিং ৮.৮। প্রায় ৯ লাখ দর্শক সিনেমাটিকে ভোট দিয়েছেন।