ঝিরির নাম দপ্রু ঝিরি। বান্দরবানের আলীকদমের প্রত্যন্ত এলাকায় এই ঝিরির পাশেই একটি ম্রো পাড়ার অবস্থান। ঝিরি নামেই পাড়ার নাম। ঝিরিটাকে বলা যায় পাড়ার প্রাণপ্রবাহ বা লাইফলাইন। নিত্যদিনের পানীয় জল, জুমের ফসল, গবাদিপশু লালনপালন থেকে শুরু করে সবকিছুই ঝিরির ওপর নির্ভরশীল। কেবল দপ্রু ঝিরি নয়, পার্বত্য চট্টগ্রামের বহু গ্রাম এমন ঝিরিকে ঘিরে গড়ে উঠেছে। দপ্রু ঝিরি যেন সেসবেরই এক প্রত্যক্ষ প্রতিনিধি। ক্রমাগত পাথর তোলা আর বন উজাড়ের মতো পরিবেশবিনাশী কর্মকাণ্ডের কারণে দপ্রু ঝিরি এখন মৃতপ্রায়। আর এর প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ে দপ্রু ঝিরি পাড়ার ম্রো বাসিন্দাদের ওপরও।
চট্টগ্রামের আলোকচিত্রী ও কবি আসমা বীথি এই বিষয় নিয়ে নির্মাণ করেছেন ২৮ মিনিট ৩৮ সেকেন্ডের প্রামাণ্য চলচ্চিত্র ‘দপ্রু ঝিরি’। এটি এই নির্মাতার দ্বিতীয় প্রামাণ্য চলচ্চিত্র। ‘সিমরু ক্লাইমেট প্রজেক্টের’ আওতায় ঢাকা ডকল্যাবের উদ্যোগে আসমা বীথি পরিচালিত এই চলচ্চিত্রের অর্থায়ন করেছে ব্রিটিশ কাউন্সিল ও ওয়েলস ওয়ান ওয়ার্ল্ড ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল (ওয়াও)।
সিমরু প্রকল্পের আওতায় এটিসহ মোট চারটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে, যার মধ্যে দুটি বাংলাদেশের নির্মাতাদের। ‘দপ্রু ঝিরির’ পাশাপাশি ‘লতিকা’ নামের বাংলাদেশের অপর প্রামাণ্যচিত্রটি পরিচালনা করেছেন শামসুল ইসলাম স্বপন। বাকি দুটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেছেন যুক্তরাজ্যের ওয়েলসের দুই নির্মাতা। যার মধ্যে রয়েছে লিলি টাইগার টোনকিন নির্মিত ‘শি সেলস শেলফিশ’ এবং মারেড রিস পরিচালিত ‘আওয়ার হোম, দা সি’। সব কটি চলচ্চিত্রের বিষয় পানিকে ঘিরে মানুষের জীবনের গল্প।
আগামীকাল শনিবার বিকেল পাঁচটায় ঢাকার ফুলার রোডের ব্রিটিশ কাউন্সিল মিলনায়তনে এই প্রকল্পের আওতায় নির্মিত চারটি চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে। এর আগে ওয়েলসে ২১ মে যুক্তরাজ্যের ওয়েলসে এই চারটি চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়েছিল।
‘দপ্রু ঝিরি’ প্রামাণ্যচিত্রের চিত্রগ্রহণের পুরোভাগেই ছিলেন চলচ্চিত্রটির নির্মাতা আসমা বীথি। তাঁর সঙ্গে ক্যামেরায় ছিলেন পংকজ চৌধুরী রনি।
স্বল্পদৈর্ঘ্যের প্রামাণ্যচিত্রটি শুরু হয় প্রচণ্ড বর্ষণমুখর এক রাতের চিত্র দিয়ে। কান পাতলে শোনা যায় ঝিরির কল কল শব্দ। পুরো প্রামাণ্যচিত্রটিতে কোনো আবহ সংগীত ব্যবহার করা হয়নি। প্রকৃতির নানা শব্দ সেই অভাবকে পূরণ করেছে দারুণভাবে।
ঝিরির পাশের ঝোপে ফোটা ফুলের ওপর বর্ণিল প্রজাপতির দিকে চোখ যায় আমাদের চলচ্চিত্রের শুরুর দিকে। শেষ দৃশ্যে শুকিয়ে যাওয়া ঝিরির পাশেই মরে পড়ে থাকতে দেখা যায় সেই প্রজাপতিটিকে। ভীষণ ইঙ্গিতবাহী এই দৃশ্য যেন ঝিরিই মৃত্যুকে প্রতীকায়িত করে। সেই সঙ্গে তাকে ঘিরে গড়ে ওঠা জীবনেরও।