রুপন্তি যখন প্রেরণা
সিডনিতে প্রথম দিনেই আলোচনায় হিন্দি ভিন্দি; এ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে দর্শকদের প্রশংসা কুড়াচ্ছেন রুপন্তি আকিদ। অস্ট্রেলিয়া-ভারত যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত আলী সায়েদ পরিচালিত এ ছবিতে রিয়ানা চরিত্রে অভিনয় করেছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই অভিনেত্রী। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ছবিটি অস্ট্রেলিয়ায় মুক্তি পেয়েছে।
রুপন্তির এ সাফল্যে সিডনির বাংলাদেশিরা গর্বিত। এখন সিডনিতে রয়েছেন বাংলাদেশের অভিনেতা মাজনুন মিজান। তিনি প্রিমিয়ার শোতে আমন্ত্রিত হয়ে ছবিটি দেখেছেন। মিজান বলেন, ‘রুপন্তি আমাদের গর্ব। ও ভালো অভিনয় করে, তা আমি জানি। কিন্তু এ ছবিতে ও আরও বেশি ছাড়িয়ে গেছে। তার এ সাফল্য আমাদের সবার জন্য অনুপ্রেরণা।’
অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী বাংলাদেশি প্রযোজক ও সমাজকর্মী রইসুদ্দীন রাসেল বলেন, ‘রুপন্তির অভিনয়ে একটি স্বাভাবিক দক্ষতা আছে। তিনি যে চরিত্রেই অভিনয় করেন, জীবন্ত হয়ে ওঠে। এ চলচ্চিত্রে তাঁর অভিনয়দক্ষতা নতুন মাত্রা পেয়েছে। শুধু একজন অভিনেত্রী নন, তিনি আমাদের সংস্কৃতির প্রতিনিধি।’ প্রবাসীরা বলছেন, রুপন্তি আকিদের এ সাফল্য শুধু তাঁর ব্যক্তিগত অর্জনই নয়, দক্ষিণ এশীয় তরুণদের জন্য প্রেরণা হয়ে থাকবে।
সিডনির স্থানীয় থিয়েটার ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র দিয়ে রুপন্তি আকিদের অভিনয়যাত্রা শুরু। অস্ট্রেলিয়ার বহুসংস্কৃতির পরিবেশে নিজের প্রতিভাকে তিনি বিকশিত করেছেন। স্থানীয় থিয়েটার গ্রুপ ও কমিউনিটি আয়োজনে নিয়মিত অংশ নিয়ে সিডনির বাংলাদেশি ও দক্ষিণ এশীয় কমিউনিটির মধ্যে পরিচিত হয়ে ওঠেন।
২০১৩ সালে সাগর জাহানের আংটি দিয়ে নাটকে রুপন্তির যাত্রা শুরু। পরের দুই বছরে করেছেন মাহফুজ আহমেদের কেবলই রাত হয়ে যায়, হ্যালো বাংলাদেশ নামে দুটি নাটক। গত বছর শিহাব শাহীন পরিচালিত চরকির অরিজিনাল সিনেমা কাছের মানুষ দূরে থুইয়া-তে অভিনয় করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন রুপন্তি। হিন্দি ভিন্দি ছাড়াও বাংলাদেশের সরকারি অনুদানে নির্মিত সিনেমা বনলতা সেন-এর শুটিং শেষ করেছেন। ছবিটি নির্মাণ করেছেন নির্মাতা মাসুদ হাসান উজ্জ্বল।
আত্মান্বেষণের গল্প
ভারতীয় উপমহাদেশের এক তরুণ কবিরকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে হিন্দি ভিন্দির গল্প। চরিত্রটি করেছেন বলিউডের উদীয়মান তারকা মিহির আহুজা। কবির অস্ট্রেলীয় সংগীতশিল্পী। তার সাংস্কৃতিক পরিচয় নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত। ভাষার বাধার কারণে তার নানির (নীনা গুপ্তা) সঙ্গে সম্পর্কে টানাপোড়েন তৈরি হয়।
তবে একপর্যায়ে সংগীতের মাধ্যমে কবির ও তার নানির মধ্যে বন্ধন গড়ে ওঠে। আর কবিরেরই বন্ধু রিয়ানা চরিত্রে অভিনয় করেছেন রুপন্তি আকিদ। রিয়ানা বহুসাংস্কৃতিক পরিবেশে বেড়ে ওঠা একজন তরুণী। এ চলচ্চিত্রে আরও দুই বাংলাদেশির উপস্থিতি সবার নজর কেড়েছে। পরিবেশক প্রধান হিসেবে কাজ করছেন তানিম মান্নান আর পোস্টার নকশা করেছেন সাজ্জাদুল ইসলাম সায়েম।
তানিম মান্নান বলেন, ‘এ চলচ্চিত্রে বাংলাদেশি তিনজনের তিন মাত্রায় অংশগ্রহণ রয়েছে, এটা ভাবতেই ভালো লাগছে। রুপন্তির অভিনয় যেমন প্রশংসা কুড়াচ্ছে, তেমনি সায়েমের পোস্টার নকশাও প্রশংসিত হয়েছে।’
রুপন্তির কৃতজ্ঞতা
‘এ চলচ্চিত্রে কাজ করা আমার জন্য একটি স্বপ্নপূরণের মতো। সিডনির থিয়েটার ও কমিউনিটি আমাকে এ পর্যায়ে পৌঁছাতে সাহায্য করেছে। সবার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ,’ হিন্দি ভিন্দি নিয়ে এভাবেই প্রতিক্রিয়া জানালেন রুপন্তি। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশ, বলিউড কিংবা হলিউড বলে কথা নয়, ভালো চরিত্র হলে যেকোনো চলচ্চিত্রে কাজ করতে আগ্রহী।’
‘হিন্দি ভিন্দি’র পরিচালক আলী সায়েদ বলেন, ‘অভিবাসীদের চ্যালেঞ্জ ও অর্জনকে বৈশ্বিক দর্শকদের জন্য বিশ্বাসযোগ্য করে উপস্থাপন করেছি। এটি শুধু একটি চলচ্চিত্রই নয়; বরং অভিবাসী জীবনের আয়না, যা বিশ্বজুড়ে দর্শকদের হৃদয় স্পর্শ করবে।’ বাংলাদেশসহ উপমহাদেশীয় দর্শককে কীভাবে সিনেমাটি দেখানো যায়, সেটা নিয়ে কাজ করছেন বলে জানান এই নির্মাতা।
আছেন গাই সেবাস্টিয়ান
অস্ট্রেলিয়ার সংগীত তারকা গাই সেবাস্টিয়ানও অভিনয় করেছেন এ চলচ্চিত্রে। এটাই তাঁর অভিষেক চলচ্চিত্র। অস্ট্রেলিয়ার ‘চ্যানেল ৭’-এর জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘সানরাইজ’-এ হিন্দি ভিন্দি নিয়ে এক সাক্ষাৎকারে সেবাস্টিয়ান বলেন, ‘আমার মা-ও ভারতীয় ছিলেন। তাই গল্পটি আমাকে স্পর্শ করে; সুযোগ পেতেই রাজি হয়ে যাই।’ ছবিটিতে তাঁর সংগীতের পাশাপাশি অভিনয়দক্ষতাও দর্শকদের মুগ্ধ করেছে।