রাত থেকেই গুগল ও ইউটিউবে খোঁজ চলছে, কে এই মারভে ডিজদার

অভিনেত্রী মারভে ডিজদার। ছবি: ইনস্টাগ্রাম

হঠাৎ সারা বিশ্বের গণমাধ্যমে আলোচনায় মারভে ডিজদার। তারপর থেকে গুগল ও ইউটিউবে খোঁজা হচ্ছে তাঁকে। আগ্রহীদের প্রশ্ন ৩৬ বছরের এই নারীর সফলতার পেছনের গল্প কী? কে এই মারভে ডিজদার? সিরিজটার্কিজডটকম অবলম্বনে সেটাই জেনে নেওয়া যাক।

কর্কট রাশির এই মেয়ের জন্ম তুরস্কের মধ্যবিত্ত এক পরিবারে, ১৯৮৬ সালে। বুঝতে শেখার পরে বন্ধুরা কেউ ডাক্তার, কেউ ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করতেন। ডিজদারও চাইতেন সমাজ, পরিবারের লোকদের চাওয়ার মতোই ডাক্তার অথবা আইনজীবী হতে। কিন্তু বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চিন্তার পরিবর্তন হয়। তিনি হতে চান অভিনেত্রী। তবে বেঁকে বসে পরিবার। কিন্তু তিনিও এই চাওয়াকে আঁকড়ে ধরে বড় হতে থাকেন।

তুরস্কের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিনয়ের ওপর পড়াশোনা শুরু করেন। কিন্তু এক সময় বুঝতে পারেন, যতটা সহজ ভেবেছিলেন এই পেশা তার চেয়ে বহুগুণ কঠিন ও পরিশ্রমের।

অভিনেত্রী মারভে ডিজদার
রয়টার্স

তাকে আরও বেশি পরিশ্রম করতে হয়। পরে কিছুদিন মঞ্চ থেকেও শিখেছেন। পরিবার থেকে এক সময় সায় দিলেও পরবর্তীতে তিনিও বুঝতে থাকেন, পরিবার ভাবছে সবকিছুর একটা মাত্রা থাকা দরকার। যে কারণে তাকে নিজে আয় করে চলতে হয়েছে।

জীবন চালাতে তাঁকে এক সময় বাসা বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ করতে হয়েছে। কখনো করেছেন সেক্রেটারির কাজ। কিন্তু লক্ষ্য সব সময়ই ছিল অভিনয়ে দক্ষতা বাড়ানো।  

প্রথম নাম লেখান টিভি সিরিজ ‘ডে ড্রিমিং’-এ। তাঁর চরিত্রের নাম ছিল সালিহা। কিন্তু ৫১ পর্বের এই ধারাবাহিক থেকে সাফল্য আসেনি।

সিনেমার পোস্টার
ছবি: ইনস্টাগ্রাম

বেশ কিছু নাটকে অভিনয় করে নাম লেখান সিনেমায়। ‘আ নয়েজ ইন দ্য নাইট’ নামের সেই সিনেমাটিও ব্যর্থ হয়।
ক্যারিয়ার নিয়ে দুশ্চিন্তার মধ্যে দিয়ে দিন যাচ্ছিল। পরে টিভিতে ‘দ্য নাইনটিন্থ’, ‘ফাইভ ব্রাদার্স’, ‘সেভেন ফেইস’-এর মতো কাজ দিয়ে পরিচিতি পেতে শুরু করেন। ২০১৭ সালে ‘অরগানিক লাভ স্টোরি’ সিনেমা দিয়ে অভিনেত্রী হিসেবে ভক্তদের ভালোবাসা পান। সর্বশেষ ২০২২ সালে ‘স্নো অ্যান্ড দ্য বেয়ার’ সিনেমা দিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আসেন। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সাড়া জাগালেন।

৭৬তম কান চলচ্চিত্র উৎসবে তিনি জিতে নিয়েছেন সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার। তুরস্কের প্রথম কোনো অভিনেত্রী এই পুরস্কার পেলেন। গতকাল রাতে বাংলাদেশ সময় রাত ১২টা পর থেকে শুরু হয় বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা। নিজের নাম শুনে চমকে ওঠেন এই অভিনেত্রী। তিনি বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না এই পুরস্কার পাচ্ছেন। পুরস্কার হাতে নিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পরেন। পুরস্কারটি সংগ্রামী নারীদের উৎসর্গ করে বলেন, ‘আমার যে বোনেরা সংগ্রাম করে শক্তি জোগান, যারা জীবনে ঝুঁকি নেন, জীবন চলার পথে কঠিন বাধা আসলেও হাল ছেড়ে দেন না, যারা সাহসের সঙ্গে যুদ্ধ করে যান শুধু ভালো দিনের জন্য; তুরস্কের আমার সেই সব বোনদের এটা পাওয়া।’

অভিনেত্রী মারভে ডিজদার, পরিচালক নুরি বেলগি জিলান ও অন্যরা
ছবি: ইনস্টাগ্রাম

সেরা অভিনেত্রী পুরস্কারটি তাকে এনে দিয়েছে নুরি বিলগে জিলানের ‘অ্যাবাউট ড্রাই গ্রাসেস’ সিনেমা। এই ছবিতে আর্টের শিক্ষিকার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন ডিজদার। তার চরিত্রের নাম নুরাই। তার চরিত্রের মধ্যে দিয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলের একজন শিক্ষকের বিশ্বাস ঘিরে এগুলো থাকে গল্প। কিন্তু এই বিশ্বাসের জন্য তাকে কঠিন মূল্য দিতে হয়। গতকাল শেষ হয়েছে এই উৎসব।