বছরের সেরা সিনেমা, বই, শব্দ, গান আর তারকা
সদ্য বিদায় নেওয়া ২০২৩ সালে যুদ্ধ আর প্রাকৃতিক বিপর্যয় যেমন ছিল, ঘটনা-দুর্ঘটনাও কম ছিল না। আবার ভালো গান, সিনেমা বা বইয়ের কাটতিও কম ছিল না।
সেরা হলেই জনপ্রিয় হয় না। আবার জনপ্রিয় যা, তা–ও হয়তো সেরা নয়। পুরো বিষয়টাই গোলমেলে। সেরা অনেক সময় আপেক্ষিক, তবে জনপ্রিয়তা জানার কিছু মাপকাঠি আছে। তাই জনপ্রিয়র তালিকাটা করাই তুলনামূলক সহজ। তবে কিছু সেরার তালিকাও বাদ রাখা হয়নি। এই তালিকা সদ্য বিদায় নেওয়া ২০২৩ সালের।
মাইলি সাইরাসের ‘ফ্লাওয়ার্স': মার্কিন সংগীত তারকা মাইলি সাইরাসের এই গান মুক্তি পেয়েছিল ২০২৩ সালের ১২ জানুয়ারি। এরপর থেকে ফ্লাওয়ার্স গানটি একটার পর একটা রেকর্ড গড়েছে। নিজেকে পরিপূর্ণ করতে অন্য কারও বা কিছুর ওপর নির্ভর করে না থাকা নিয়ে সাবেক প্রেমিকের উদ্দেশে গাওয়া এই গান বিশ্বে গত বছর সবচেয়ে বেশি বার শোনা হয়েছে। গানটি মাইলি সাইরাসের এন্ডলেস সামার ভ্যাকেশন অ্যালবামের প্রথম গান। মুক্তি পাওয়ার পরে প্রথম সপ্তাহেই গানটি স্পোটিফাইতে বেজেছে ৯ কোটি ৬০ লাখ বার। আর এখন পর্যন্ত ইউটিউবে এই গানের ভিউ হচ্ছে ৬৬ কোটি ৮০ লাখ। মাত্র ৩ মিনিট ২১ সেকেন্ডের গানটি এতটাই জনপ্রিয়।
এসজিএর কিলবিল: মার্কিন গায়িকা এসজিএর পুরো নাম সোলানা ইমানি রোয়ে। তার কিলবিল গানটিই ছিল জনপ্রিয়তার দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে। ঠিকই ধরছেন, কুয়েনটিন টরেনটিনোর ‘কিল বিল’ সিনেমার থিম থেকেই গানটি লেখা।
হ্যারি স্টাইলসের এজ ইট ওয়াজ: হ্যারি স্টাইলস ব্রিটিশ গায়ক। মজার ব্যাপার হলো গানটি মুক্তি পেয়েছিল ২০২২ সালে। তবে স্পোটিফাই বলছে, ২০২৩ সালে তাদের সাইটে সব বেশি বেজেছে এমন তালিকার তৃতীয় গান এটি।
অথেনটিক: যুক্তরাষ্ট্রের প্রাচীনতম অভিধান মেরিয়াম-ওয়েবস্টার বর্ষসেরা নির্বাচন করেছে `অথেনটিক শব্দটিকে। এর অর্থ খাঁটি বা প্রকৃত। অভিধানটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অথেনটিক শব্দটির একাধিক অর্থ আছে। যেমন খাঁটি, প্রকৃত বা মিথ্যা নয়। মূলত মানুষের ‘প্রকৃত ব্যক্তিত্ব, সত্তা কিংবা চরিত্র’ নির্দেশ করতেও এই অথেনটিক কথাটা ব্যবহার করা রয়েছে। মিথ্যা, অপপ্রচার, আসল আর নকল-এসবের পার্থক্য কমে আসায় মানুষ সম্ভবত এই শব্দটা এখন বেশি ব্যবহার করছে। মূলত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইয়ের কারণে লেখা, ছবি, ভিডিওসহ সবকিছু যাচাইয়ে মানুষ অথেনটিক শব্দটি বেশি ব্যবহার করছেন। বিবিসি বলছে, বিভিন্ন ব্র্যান্ড, সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার এবং সেলিব্রিটিরাও শব্দটিকে জনপ্রিয় করে তুলেছেন। এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা), তারকা সংস্কৃতি, পরিচয় (আইডেন্টিটি) এবং সামাজিক মিডিয়াকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন গল্প আর কথোপকথনে শব্দটি ব্যবহারে মানুষের আগ্রহ দেখা গেছে।
রিজ: অক্সফোর্ড বলছে, তাদের কাছে সেরা শব্দ হচ্ছে রিজ (Rizz)। আটটি শব্দের তালিকা থেকে এটিকে বেছে নেওয়া হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে শৈলী, কমনীয়তা বা আকর্ষণীয়। সঙ্গীকে আকৃষ্ট করতে এটি ব্যবহার করা হয়। জানা গেছে, ২০২২ সালের জুনে অভিনেতা টম হল্যান্ড এক সাক্ষাৎকারে রিজ শব্দটি উচ্চারণ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘আমার কোনো রিজ নেই, আমার সীমিত রিজ আছে।’ এর পর থেকেই শব্দটি জনপ্রিয় হতে থাকে। নানা ধরনের মিমও তৈরি হয়।
রিজ না জয়ী হলে সম্ভবত জিতে যেত ‘সিচুয়েশনশিপ’ শব্দটি। রোমান্টিক সম্পর্কের বর্ণনায় এই শব্দ ব্যবহার হয়। তালিকায় ছিল বেইজ ফ্ল্যাগ। টিকটকে শব্দটি বেশি জনপ্রিয়। সম্পর্কের ক্ষেত্রে শব্দটা ব্যবহার করা হয়। অর্থাৎ খুব ভালো নয়, খারাপও নয়। মৌলিকতার অভাব বা সম্পর্কের একটি নির্দিষ্ট স্তরকে বর্ণনা করা হয় এই শব্দ দিয়ে। এ ছাড়া সিচুয়েনশিপ, ডিপফেক ও ডি-ইনফ্লুয়েন্সিং শব্দগুলোও সেরা হওয়ার তালিকায় ছিল।
হ্যালুসিনেট: কেমব্রিজ অভিধান বেছে নিয়েছে এই শব্দটিকে। অর্থাৎ মায়া বা অলীক কিছুতে বিশ্বাস রাখা, অর্থাৎ একধরনের মায়া বা বিভ্রান্তিতে থাকা। আসলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর জায়গা থেকে এ শব্দ বেশি ব্যবহার করা হয়েছে।
ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধ: শুরু হয়েছিল ৭ অক্টোবর। ওই দিন ইসরায়েলি ভূখণ্ডে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের অতর্কিত এক হামলা করে। গাজা সীমান্তবর্তী কয়েকটি ইসরায়েলি শহরে ঢুকে পড়ে গাজার সশস্ত্র যোদ্ধারা। তবে জবাব দিতে দেরি করেনি দেশটি। ওই দিনই অবরুদ্ধ গাজায় ব্যাপক হামলা শুরু করে তারা।
টাইটানিক সাবমেরিন: আটলান্টিক মহাসাগরে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে আগ্রহী পর্যটকদের নিয়ে একটি সাবমেরিন বা ডুবোজাহাজ নিখোঁজ হয়ে যায় ২০২৩ সালের ১৮ জুন। চার দিন পরে টাইটানিক জাহাজের ধ্বংসাবশেষের পাশেই পাওয়া যায় টাইটানিক সাবমেরিনের ধ্বংসস্তূপ। মারা যান সাবমেরিনের পাঁচ আরোহী।
তুরস্কের ভূমিকম্প: ২০১৩ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ভূমিকম্প আঘাত হানে গাজিয়ানতেপ শহর থেকে পশ্চিমে তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলে। এতে তুরস্ক ও সিরিয়ায় ব্যাপক ক্ষতি হয়।
ডামার হ্যামলিন: তালিকার শীর্ষে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ফুটবল লিগের (এনএফএল) খেলোয়াড় ডামার হ্যামলিন। খেলেন বাফেলো বিলস-এ। ২০২৩ সালের ২ জানুয়ারি খেলার মাঠেই হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। জীবন ছিল সংকটাপন্ন। ৯ দিন হাসপাতালে ছিলেন। সুস্থ হয়ে পরে খেলার মাঠে ফিরে এসেছেন।
জেরেমি লি রেনার: মার্কিন গায়ক ও অভিনেতা। গত বছরের শুরুর দিনেই যুক্তরাষ্ট্রের নেভাদায় বরফ সরাতে গিয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিলেন জেরেমি রেনার। ৩০টির বেশি হাড় ভেঙেছিল। অবশেষে সুস্থ হয়ে আবারও অভিনয়জগতে ফিরছেন তিনি।
অ্যান্ড্রু টেট: অ্যান্ড্রু টেট ছিলেন একজন পেশাদার কিকবক্সার। কিকবক্সিং থেকে অবসর নিয়ে অনলাইনে সক্রিয় হন। সামাজিক মিডিয়া ব্যক্তিত্ব হিসেবে বিপুল জনপ্রিয় হয়েছিলেন। পরে নারীবিদ্বেষী বক্তব্যের দায়ে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম থেকে নিষিদ্ধ হন। আরেক অভিযোগে গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন। সব মিলিয়ে চরম বিতর্কিত একজন ব্যক্তি।
ম্যাথু পেরি: মাত্র ৫৪ বছর বয়সে গত ২৮ অক্টোবর মারা যান যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় অভিনেতা ও কৌতুকশিল্পী ম্যাথু পেরি। নব্বইয়ের দশকে জনপ্রিয় টেলিভিশন শো ‘ফ্রেন্ডস’–এর প্রধান ছয় চরিত্রের অন্যতম ছিল চ্যান্ডলার বিং। আর সেই চরিত্রে অভিনয় করেই দর্শকের মনে জায়গা করে নিয়েছিলেন ম্যাথু পেরি।
টিনা টার্নার: কিংবদন্তি মার্কিন পপ ও রক তারকা টিনা টার্নার মারা যান ২৪ মে, ৮৩ বছর বয়সে। সুইজারল্যান্ডের জুরিখের পার্শ্ববর্তী কুইস্নাচট এলাকায় নিজ বাড়িতে মারা যান তিনি। দুঃস্বপ্নের শৈশব পেরিয়ে রক অ্যান্ড রোলের রানি হয়ে উঠেছিলেন তিনি।
সিনিয়াড ও’কনর: নব্বইয়ের দশকে সাড়া জাগানো ‘নাথিং কম্পেয়ারস টু ইউ’খ্যাত পপ সংগীতশিল্পী সিনিয়াড ও’কনর মারা যান ২৬ জুলাই, একেবারেই আকস্মিকভাবে। আইরিশ এই সংগীতশিল্পীর বয়স হয়েছিল ৫৬ বছর।
বার্বি। এই সিনেমার ব্যবসার পরিমাণ ১৪৪ কোটি ১০ লাখ ডলার। বাংলাদেশের টাকায় যা ১৫ হাজার ৮৫১ কোটি টাকা, যা দিয়ে প্রায় অর্ধেক পদ্মা সেতু বানানো যায়।
দ্য সুপার মারিও ব্রস, ১৩৬ কোটি ১০ লাখ ডলার ব্যবসা করেছে। অ্যানিমেশন সিনেমার যে তুমুল জনপ্রিয়তা আছে, এ তারই প্রমাণ।
ওপেনহেইমার। ব্যবসা করেছে ৯৫ কোটি ২০ লাখ ডলারের। ক্রিস্টোফার নোলানের এই সিনেমা নিয়ে নতুন কিছু আর বলার নেই। পদার্থবিদ জে রবার্ট ওপেনহেইমারের জীবন নিয়ে সিনেমা। তিনি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির অন্যতম নায়ক।
গার্ডিয়ানস অব দ্য গ্যালাক্সি, ভলিউম-তিন। ব্যবসার পরিমাণ ৮৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার। সুপারহিরো সিনেমা করে ব্যবসাসফল হননি, এমন উদাহরণ আছে, কিন্তু খুবই কম।
ফার্স্ট এক্স, ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াসের দশক পর্ব। ব্যবসার পরিমাণ ৭০ কোটি ৪০ লাখ ডলার।
ফলেন লিভস: ফিনিস-জার্মানির যৌথ প্রযোজনা। রোমান্টিক কমেডি এটি।
মায়েস্ত্রো: মার্কিন সংগীতকার লিওনার্দো বার্নস্টেইন ও তাঁর স্ত্রী ফেলিসিয়া মনতালেগ্রির সম্পর্ক নিয়ে সিনেমা। এর পরিচালক অভিনেতা ব্রাডলি কুপার।
দ্য জোন অব ইন্টারেস্ট: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় অসউইজ কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পের পাশে পরিবার নিয়ে বসবাস করা ‘কমান্ড্যান্ট’-এর গল্প। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও পোল্যান্ডের যৌথ প্রযোজনা এই সিনেমা।
প্রিসিলা: সোফিয়া কপোলার ভক্তদের জন্য সুখবর এই সিনেমা। আবার এলভিস প্রিসলির ভক্তরাও দেখবেন। কেননা এটি তাঁর স্ত্রী প্রিসিলা প্রিসলির জীবনীভিত্তিক।
প্যারিস মেমোরিজ: ফ্রান্সের সিনেমা। মূল নাম রিভয়র প্যারিস। সন্ত্রাসী আক্রমণ থেকে বেঁচে যাওয়া এক মেয়ের গল্প।
পাস্ট লাইভস: সিউলের পটভূমিতে তৈরি এই রোমান্টিক সিনেমা এরই মধ্যে তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়ে গেছে।
কিলার্স অব দ্য ফ্লাওয়ার মুন: মার্টিন স্করসিজের নতুন সিনেমা। স্করসিজের সিনেমার সেরার তালিকায় থাকবে না, এটা তো হতেই পারে না।
আর ইউ দেয়ার গড, ইট’স মি, মার্গারেট: ১৯৭০ সালের এক উপন্যাস থেকে তৈরি এই সিনেমাও বেশ নাম করেছে।
ড্রিমিন ওয়াইল্ড: ডনি ও জো এমারসন নামের সংগীতশিল্পী দুই ভাইয়ের জীবনী নিয়ে সিনেমা।
প্যাসেজেস: ভিন্নধারার রোমান্টিক সিনেমা।
ইট এনডস উইথ আস-কলিন হুভার
ইট স্টার্ট উইথ আস-কলিন হুভার
ফোর্থ উইং-রেবেকা ইয়ারোস
ডগ ম্যান-ডাভ পিলকে
লেসনস ইন কেমিস্ট্রি-বনি জারমাস
নন–ফিকশন বইয়ের তালিকা এ রকম:
স্পেয়ার-প্রিন্স হ্যারি
অ্যাটমিক হ্যাবিটস: এন এসে অ্যান্ড প্রুভেন ওয়ে টু বিল্ড গুড হ্যাবিটস অ্যান্ড ব্রেক ব্যাড ওয়ান্স-জেমস ক্লিয়ার
দ্য উইমেন ইন মি-ব্রিটানি স্পেয়ার্স
টেইলর সুইফট: এ লিটল গোল্ডেন বুক বায়োগ্রাফি-ওয়েন্ডি লগগিয়া
দ্য ফর্টি এইট লজ অব পাওয়ার-রবার্ট গ্রিন