যদিও মশা কমানোর আয়োজনও কমে না। সংবাদমাধ্যমের খবরে প্রকাশ, সিটি করপোরেশন মশার প্রজননক্ষেত্র চিহ্নিত করে। তাতে গাপ্পি মাছ ছাড়ে। গত বছর নাকি তিন জলাশয়ে মশা মারতে তেলাপিয়া মাছ ও হাঁস ছাড়া হয়েছিল। সেই হাঁস-মাছ মশা খায়, নাকি মশাদের গুরুপাক ভোজন হয়—তা অবশ্য নাগরিকেরা জানতে পারে না। অবশ্য আদার ব্যাপারীর জাহাজের খবর জানার দরকারই–বা কী!
খবরে জানা গেছে, গত চার বছরে শুধু মশা মারতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নাকি প্রায় ৭৬ কোটি ৩৫ লাখ টাকা খরচ করেছে। ওদিকে আবার মশার বংশ ধ্বংসের বিশেষ ওষুধের কার্যকারিতা নিয়ে শুরু থেকে বিশেষজ্ঞরা প্রশ্ন তুলতে থাকলেও, তাতে থোড়াই কেয়ার করে সেই ওষুধ ব্যবহার করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। কিন্তু এত কিছুর পরও ফি বছরই মশার গানের প্রাবল্য বেড়েই চলে। মশারা আমাদের গান শোনাবে বলেই হয়তো পণ করেছে! তার সঙ্গে যদি বাদ্য-বাজনা (পড়ুন গাপ্পি মাছ, তেলাপিয়া, হাঁস, প্রশ্নবিদ্ধ ওষুধ ইত্যাদি ইত্যাদি) বিনা মূল্যে মেলে, তবে তো কথাই নেই।
এমন অবস্থায় মনে হওয়াই স্বাভাবিক যে মশার কামড়ানোর নিশ্চয়ই অন্য কোনো বিপরীত অর্থের প্রতিশব্দ আছে এবং তাকে স্বীকৃতিও দেওয়া হয়েছে আনুষ্ঠানিকভাবে। কামড়ানোকে যদি খারাপ মনে করি, তবে তো চুমুর কাছেই যেতে হয়।
গবেষণা নিয়ে তাড়াহুড়ো করা যাবে না মোটেও। চালাতে হবে কয়েক বছর। কয়েক হাজার কোটি টাকা যদি গবেষণায় খরচই না হয়, তবে বিশ্ব দরবারে কি তা উপস্থাপন করা যাবে?
আসলে ঢাকার মশাদের নিয়ে একটি গবেষণা করা জরুরি হয়ে পড়েছে। আমরা এমনিতেই গবেষণায় অনেকটা পিছিয়ে। তাতে একটু এগিয়ে যাওয়ার সুযোগও এতে পাওয়া যেতে পারে। মশা কামড়ায়, নাকি চুমু দেয়—সে ব্যাপারে বিস্তারিত গবেষণা হওয়া প্রয়োজন। এ ব্যাপারে দুই সিটি করপোরেশন ও মশাদের বক্তব্য ও মতামত আলাদাভাবে জোগাড় করতে হবে। বলতে পারেন, মশাদের বক্তব্য কীভাবে নেওয়া যাবে? আরে, এত দিন মশার প্রগাঢ় ‘ভালোবাসা’য় সিক্ত হতে পারলেন, আর এহেন প্রেমিক-প্রেমিকাদের ভাষা বুঝতে পারবেন না, তা কী হয়? পারলে আমরা ঢাকাবাসীরাই পারব। মশাদের সঙ্গে এমন দীর্ঘ ‘অম্ল-মধুর’ সম্পর্ক পৃথিবীর অন্য কোনো নগরের অধিবাসীদের আছে বলে মনে হয় না। প্রয়োজনে আমরা টেলিপ্যাথিও ব্যবহার করতে পারি। কিন্তু সাবধান, সিমপ্যাথি দেখানো চলবে না!
তবে হ্যাঁ, গবেষণা নিয়ে তাড়াহুড়ো করা যাবে না মোটেও। চালাতে হবে কয়েক বছর। কয়েক হাজার কোটি টাকা যদি গবেষণায় খরচই না হয়, তবে বিশ্ব দরবারে কি তা উপস্থাপন করা যাবে? একটা বিশ্বাসযোগ্যতার বিষয় তো আছে, নাকি?
তত দিন না হয় একটু কষ্ট করুন। মশাদের গানে তাল মেলানোর চেষ্টা চালান। চেষ্টায় কী না হয়? আর কামড়ানোর বিষয়টা মনে বেশি কষ্ট দিলে, ভাবতে থাকুন—এগুলো কামড় নয়, এগুলো চুমু। অন্তত মানসিক শান্তি পাবেন। আর মনে মনে মনকলা খেলে, কেউ যে আপনাদের মারতে আসবে না, সে ব্যাপারে নিশ্চিত থাকতে পারেন। কারণ, কথায় তো আছেই—‘পাগলের সুখ মনে মনে...!’