বাবা, তোমাকে অনেক কিছু বলার ছিল

জীবনে কেউ একজন আমাকে ‘প্রিন্সেস’ ডেকেছিল। জবাবে বলেছিলাম, ‘ভুল বললে। আমি বাবার আদরের “রাজকন্যা” নই, আমি “ফাইটার”। আমাকে “যোদ্ধা” বলতে পারো।’

আমি কখনোই বাবার আদরের মেয়ে ছিলাম না। তবু তাঁর জন্য অদ্ভুত অনুভূতি কাজ করে। বাবাকে কাছে পেয়েছি খুব কম। কাছে না পাওয়ায় তীব্র যন্ত্রণা পাহাড়সমান।

মনে করতে চেষ্টা করি, শেষ কবে বাবাকে জড়িয়ে ধরেছিলাম, বাবার আঙুল ধরে হেঁটেছিলাম কি না। বাবার সঙ্গে ভালো কোনো স্মৃতিও মনে পড়ে না, বাবার ঘ্রাণ কেমন জানি না। মাঝেমধ্যে তবু বৃথা চেষ্টা করি উপলব্ধির।

বাবাকে নিয়ে খারাপ লাগা এখন আর কাজ করে না, এ কথাই বিশ্বাস করতে চাই। ‘বাবা, বাবা’ করে কোনো বাবার আদুরে কন্যা যখন আহ্লাদ করে, তখন তার জায়গায় নিজেকে কল্পনা করি। আবার কখনো দৃষ্টি সরিয়ে নিই। কখনো শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকি। কিন্তু ‘বাবা’ শব্দের ব্যক্তিটাকে নিয়ে পাথরের মতো শক্ত হতে পারি না, বরফের মতো শক্ত হই। মানে, শক্ত হয়ে পরক্ষণেই গলে যাই। যাঁকে নিয়ে রাগ, ক্রোধ, ক্ষুব্ধতা, তাঁর কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে অনুভূতিগুলো তরল হয়ে ঝরে পড়ে, বুঝে উঠি না। নিজের অজান্তেই বলে উঠি, একটিবার দেখতে পেতাম তোমাকে!

বাবার জন্মদিন কবে, সেটা মনে থাকে না। তবে মনে আছে সেই দিন, যেদিন আমাদের ছেড়ে একেবারে চলে গিয়েছিলে। সেদিনের কথা পুঙ্খানুপুঙ্খ মনে আছে, সবটাই মনে আছে।

আমার তোমাকে অনেক কিছু বলার ছিল। আমি এখনো তোমার নম্বরে মেসেজ পাঠাই, কল করি। জানি কোনো উত্তর আসবে না। তবু...

আমাকে সব সময় বোকা বলতে। আমি এখনো অনেক বোকা। এখনো নিজেকে সেভাবে গুছিয়ে উঠতে পারিনি। একা সব করতে একটু কষ্ট হয়। তবে আমি শিখে গেছি, আমি হোঁচট খেয়ে একা উঠে দাঁড়াই।

তুমি পৃথিবীতে থাকলে এখন হয়তো গর্ব করতে আমাকে নিয়ে। হয়তো আর বকতে না। হয়তো আমার মাথায় হাত রাখতে। আমি ব্যর্থতা আর বাস্তবতাকে বন্দী করে তোমার বুকে লুকিয়ে চিৎকার করে কাঁদতাম। তখন হয়তো আমাদের ভুল–বোঝাবুঝির শেষ হতো।

তোমাকে মাঝেমধ্যে ভীষণ দেখতে ইচ্ছা করে। যেখানে আছো, অনেক ভালো থেকো, বাবা।