মাত্র দুই হাতের পার্থক্য

বাংলা অঞ্চলের প্রবল প্রতাপশালী চরিত্র নদীয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র (১৭১০-৮৩)। পণ্ডিতদের মতে, তাঁর সভার অনেক রত্নের এক রত্ন ছিলেন গোপাল ভাঁড়। এ বিষয়ে পণ্ডিতেরা স্থির সিদ্ধান্তে না এলেও এই মতের পক্ষেই রয়েছে অধিকাংশের সায়। যেমন বঙ্গসাহিত্যে হাস্যরসের ধারা বইয়ে অজিতকুমার ঘোষ লিখেছেন, ‘গোপাল রসিক-চূড়ামণি মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের রাজসভার ভাঁড় ছিলেন।’ সে যাহোক, গোপাল ভাঁড় বললেই গোলগাল এক চরিত্র আমাদের চোখের সামনে ভাসে। আর তাঁর গল্প? শোনেনি এমন কেউ আছে! আসুন, আবার পড়া যাক গোপাল ভাঁড়ের গল্প...

আঠারো মাসে বছর

গোপালের একবার টাকার খুব দরকার পড়ল। কোনো জায়গা থেকে টাকা জোগাড় করতে না পেরে এক মহাজনের কাছ থেকে টাকা ধার করল। কথা হলো, এক বছরের মধ্যে সুদসমেত সেই টাকা শোধ করে দিতে হবে। এক বছর পার হয়ে যাওয়ার পর মহাজন গোপালের বাড়ি অনেকবার গিয়েও টাকা না পাওয়ায় শেষে রাজদরবারে গোপালের নামে নালিশ করল।

সব ঘটনা শুনে রাজা হুকুম দিলেন গোপালকে ধরে নিয়ে আসার জন্য। গোপালকে রাজদরবারে হাজির করার পর রাজা জিজ্ঞেস করলেন, ‘গোপাল, তুমি এই লোকের কাছ থেকে টাকা ধার করেছিলে?’

‘হ্যাঁ হুজুর, করেছিলাম।’

‘এক বছরের মধ্যে সুদসমেত সব টাকা মিটিয়ে দেবে বলে কথা দিয়েছিলে?’

‘হ্যাঁ হুজুর, দিয়েছিলাম।’

‘তাহলে সে টাকা শোধ করোনি কেন?’

‘আজ্ঞে এখনো তো বছর শেষ হয়নি।’

বছর শেষ হয়নি, কী বলছ! চুক্তিপত্রে যে তারিখ দেখছি তাতে তো চৌদ্দ মাস হয়ে গিয়েছে।’

গোপাল বলল, ‘হুজুর, আপনাদের একটা ভুল হয়েছে। আপনাদের বারো মাসে বছর হয় আর আমার যে আঠারো মাসে বছর।’

গোপালের কথা শুনে রাজা এবং রাজসভায় উপস্থিত সবাই না হেসে পারলেন না।

মাত্র দুই হাতের পার্থক্য

মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র রাজসভায় বসে আছেন। অন্যান্য দিনের মতো গোপাল তাঁর পাশে এসে বসেছে।

মহারাজ বললেন, ‘জানো, আমি কে? আমাকে তোমার মান্য করা উচিত কিন্তু তুমি তা করো না। তোমাতে আর আমাতে কত পার্থক্য জানো?’

গোপাল চট করে নিজের ও মহারাজের আসনের মাঝের দূরত্বটা মেপে বলল, ‘জানি মহারাজ, মাত্র দুই হাত।’

আরও পড়ুন