মার্কিন প্রেসিডেন্টদের ৪৯ শতাংশই মানসিক সমস্যায় ভুগেছেন

এত কিছুর পরও ডোনাল্ড ট্রাম্প বলছেন নির্বাচনে তিনিই বিজয়ী
রয়টার্স

মার্কিন নির্বাচনে জো বাইডেনকে বিজয়ী হিসেবে মেনে নিল সবাই। মানলেন না কেবল ডোনাল্ড ট্রাম্প। কারচুপির অভিযোগ এনে নির্বাচন প্রক্রিয়া পুনর্নিরীক্ষণ করতে বললেন। তা করা হলো। বলা হলো, সব ঠিকঠাক, বাইডেনই জয়ী। এত কিছুর পর গতকাল (১৬ নভেম্বর) ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও লিখলেন, নির্বাচনে আমিই জয়ী। অর্থাৎ বিচার মানি, তবে তালগাছটা আমার।

তবে ওভাল অফিসের চাপ সামলানো চাট্টিখানি কথা নয়। মস্তিষ্কের কলকবজাগুলো নড়বড়ে তো হতেই পারে। ইতিহাস ঘাঁটলে এমন উদাহরণ মিলবে ভূরি ভূরি। এ নিয়ে ২০০৬ সালে গবেষণা শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রের ডিউক ইউনিভার্সিটি।

জর্জ ওয়াশিংটন থেকে রিচার্ড নিক্সন পর্যন্ত (১৭৭৬ থেকে ১৯৭৪ সাল) মোট ৩৭ জন মার্কিন প্রেসিডেন্টের জীবনী ঘাঁটতে বলা হলো বেশ কজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞকে। তাঁরা ঘেঁটেঘুঁটে বললেন, ওই প্রেসিডেন্টদের প্রায় অর্ধেক (৪৯ শতাংশ) মানসিক সমস্যায় ভুগেছেন।

১৯৬৪ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচিত প্রতিনিধি কিংবা প্রেসিডেন্টপ্রত্যাশীদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে মন্তব্য করতে বারণ করা হয় আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের। তবে যাঁরা সংগঠনটির সদস্য নন, তাঁরা মাঝেমধ্যেই প্রেসিডেন্টদের মানসিক সমস্যার লক্ষণগুলো নিয়ে বিশ্লেষণ করে মতামত জানিয়েছেন।

আব্রাহাম লিংকন (বাঁ থেকে তৃতীয়) বেশ কয়েকবার আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন বলে উল্লেখ পাওয়া যায়
ইন্টারনেট বুক আর্কাইভ

হতাশ ছিলেন আব্রাহাম লিংকন

আব্রাহাম লিংকন আজীবন তীব্র হতাশায় ভুগেছেন। বেশ কয়েকবার আত্মহত্যা করবেন বলে মনস্থির করেছিলেন বলেও মনে করেন অনেকে। তবে হতাশা কখনো তাঁর রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে কিংবা সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাব ফেলেনি বলেই মানেন ইতিহাসবিদেরা।

সহকারীদের কাছে প্রেসিডেন্ট লিনডন জনসনের (বসা) আচরণ ভীতিকর মনে হতো

লিনডন জনসনের আচরণ ভীতিকর মনে হতো

যুক্তরাষ্ট্রের ৩৬তম প্রেসিডেন্ট লিনডন জনসন বাইপোলার ডিসঅর্ডারে ভুগতেন। তাঁর মেজাজ হুটহাট ওঠানামা করত। লিনডনের ব্যক্তিগত সহকারী পরবর্তী সময়ে প্রকাশিত বইয়ে লেখেন, মাঝেমধ্যে প্রেসিডেন্টের আচরণ ভীতিকর মনে হতো। এমনকি মানসিক বৈকল্যের লক্ষণও দেখা যায় তাঁর মধ্যে।

বাইপোলার ডিসঅর্ডারে ভুগতেন প্রেসিডেন্ট থিয়োডর রুজভেল্ট

রুজভেল্টকে পাগল বলেছিলেন মার্ক টোয়েন

২৬তম প্রেসিডেন্ট থিয়োডর রুজভেল্টও বাইপোলার ডিসঅর্ডারে ভুগতেন বলে জানিয়েছেন ডিউক ইউনিভার্সিটির সেই গবেষকেরা। মনোবিদ গাই উইঞ্চের ভাষ্যমতে, পুনর্নির্বাচনে হারার পর মানসিক সমস্যার কারণেই দুই বছরের জন্য আমাজনে অভিযান চালিয়েছিলেন রুজভেল্ট। এদিকে মার্কিন লেখক মার্ক টোয়েন রুজভেল্ট সম্পর্কে বলেছিলেন ‘নিঃসন্দেহে পাগল’।

হঠাৎ হঠাৎ রাগে ফেটে পড়তেন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন
রিচার্ড নিক্সন প্রেসিডেনশিয়াল লাইব্রেরি

হুটহাট রেগে যেতেন নিক্সন

অ্যালকোহলে আসক্ত ছিলেন রিচার্ড নিক্সন। হঠাৎ করে রাগে ফেটে পড়তেন। কম্বোডিয়ায় বোমা হামলার পর মার্কিন জনগণ তীব্র নিন্দা জানালে তিনি সাইকোথেরাপিস্টের শরণাপন্ন হয়েছিলেন বলে কথিত আছে। অনেক লেখক দাবি করেছেন, মানসিক অবস্থা উন্নতির জন্য ডিলান্টিন নামের ওষুধ সেবন করতেন নিক্সন। বিভ্রান্তি, স্মৃতিশক্তি লোপসহ নানা ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছিল ওই ওষুধের। তিনি একবার উত্তর কোরিয়ায় পারমাণবিক হামলা চালানোর আদেশ দিয়েছিলেন বলে কথিত আছে। তবে হেনরি কিসিঞ্জার সে সময় ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তাদের নিক্সনের ব্যাপারে ‘শান্ত’ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে বলেন।

উপদেষ্টারা প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যানের (বাঁ থেকে দ্বিতীয়) মানসিক সমস্যা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন

দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন উপদেষ্টারা

রোনাল্ড রিগ্যানের ভুলে যাওয়ার রোগ বা আলঝেইমারের সমস্যা ছিল। আলঝেইমারের কারণে হতাশা, উদ্বেগ ও হ্যালুসিনেশনের (দৃষ্টি ও শ্রবণ বিভ্রম) মতো সমস্যাও তৈরি হয়। তবে প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন সেসব সমস্যা তাঁর মধ্যে দেখা দিয়েছিল কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে। পুত্র রন রিগ্যান তাঁর বইয়ে হোয়াইট হাউসে বাবার ডিমেনশিয়ার লক্ষণের কথা লিখেছেন। ‘দ্য নিউ ইয়র্কার’ সাময়িকীর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেশ কয়েকজন উপদেষ্টা প্রেসিডেন্টের মানসিক সমস্যা নিয়ে এতই চিন্তিত ছিলেন যে সংবিধানের ২৫তম সংশোধনীবলে ভাইস প্রেসিডেন্টকে দায়িত্ব দেওয়ার কথা ভেবেছিলেন।

প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসনের কাজের ভার নিয়েছিলেন তাঁর স্ত্রী
উড্রো উইলসন প্রেসিডেনশিয়াল লাইব্রেরি

দায়িত্বের ভার নিয়েছিলেন স্ত্রী

দায়িত্বে থাকার সময়েই হতাশায় ভুগতেন যুক্তরাষ্ট্রের ২৮তম প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন। ১৯১৯ সালে তাঁর একবার স্ট্রোক হয়। অনেকে বলেন, তারপর দায়িত্ব পালন তাঁর জন্য অসম্ভব হলেও সবকিছু গোপন রাখা হয়। ইতিহাসবিদদের অনেকে লিখেছেন, প্রেসিডেন্টের অনেক দায়িত্বের ভার নিয়েছিলেন তাঁর স্ত্রী।

উদ্বেগ কমানোর ওষুধ সেবন করতেন জন এফ কেনেডি

আট ধরনের ওষুধ সেবন করতেন কেনেডি

জন এফ কেনেডির স্বাস্থ্য নিয়ে রাখঢাক কম হয়নি। তবু বেশ কিছু প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, হতাশায় ভুগতেন তিনি। কেনেডি উদ্বেগ কমানোর এবং ঘুমের ওষুধসহ দিনে প্রায় আট ধরনের সেবন করতেন।

সূত্র: বিবিসি ও ইউনিভিশন ডটকম