যেভাবে কোটি কোটি ডলার খরচ করেন ইলন মাস্ক

শীর্ষ ধনীদের তালিকায় ইলন মাস্ক এখন তৃতীয়
এএফপি

গত বছরের মে মাসে শীর্ষ ধনীদের তালিকায় ইলন মাস্ক ছিলেন ৪৬ নম্বরে। আর এখন তৃতীয়। করোনাকালে বিলিয়নিয়ারের মধ্যে বোধ হয় তিনিই সবচেয়ে বেশি এগিয়েছেন।

টেসলার বদৌলতে চলতি বছরজুড়েই ইলন মাস্কের সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে। মার্কিন গাড়ি তৈরির প্রতিষ্ঠানটির ২০ শতাংশের মালিক তিনি। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার শেয়ারদর বিবেচনায় নিলে এই ২০ শতাংশের দাম ৯ হাজার ২২৫ কোটি ডলারের কিছু বেশি হবে।

ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ার সূচক বলছে, ইলন মাস্কের মোট সম্পদের পরিমাণ ১২ হাজার কোটি ডলার। টেসলা ছাড়াও রকেট নির্মাতা প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্সে ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে মালিকানা আছে তাঁর। এর সঙ্গে নগদ অর্থ তো আছেই।

সে তো গেল সম্পদের হিসাব। এবার চলুন দেখি সেই পাহাড়সম সম্পদ তিনি খরচ করেন কীভাবে।

ইলন মাস্কের যত বাড়িঘর

নিজের প্রতিষ্ঠানগুলোর বাইরে ইলন মাস্কের আনাগোনা রিয়েল এস্টেট খাতে। বেশ দামি কয়েকটি বাড়ির পেছনে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার খরচ করেছেন তিনি। তবে মে মাসের প্রথমার্ধে টুইটারে ঘোষণা দিয়েছিলেন, তিনি আর কোনো বাড়ির মালিক থাকবেন না। এরপর সব বাড়িঘরে ‘বিক্রয়ের জন্য’ ট্যাগ লাগিয়ে দিলেন। এর একটি ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার হিলসবরোতে ১৯১৬ সালে তৈরি ৪৭ একর জায়গার ওপরে ১০ বেডরুমের বাড়ি। দাম হাঁকা হয়েছিল সাড়ে ৩ কোটি ডলার।

বাড়িটি বিক্রির জন্য লিপিবদ্ধ করেছিলেন ইলন মাস্ক
সদাবিস ইন্টারন্যাশনাল রিয়ালটি

গত জুনে ইলন মাস্ক লস অ্যাঞ্জেলেসে ১৬ হাজার বর্গফুটের ৭ বেডরুমের একটি বাড়ি চীনা এক ধনকুবেরের কাছে ২ কোটি ৯০ লাখ ডলারে বিক্রি করেন বলে জানিয়েছিল মার্কিন সংবাদপত্র দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল। তবে গত আগস্টে সিএনবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস এলাকায় ইলন মাস্কের এখনো চারটি বাড়ি রয়েছে। সেগুলোর মোট দাম কমবেশি ৪ কোটি ডলার।

দাতব্যকাজে সিদ্ধহস্ত

২০১২ সালে ওয়ারেন বাফেট ও বিল গেটসের সঙ্গে ‘দ্য গিভিং প্লেজে’ সই করেছেন। সেখানে জীবনভর মোট সম্পদের সিংহভাগ দাতব্যকাজে ব্যয় করার প্রতিশ্রুতি জানিয়েছেন তিনি।

২০১৫ সালে ‘ফিউচার অব লাইফ ইনস্টিটিউট’কে ১ কোটি ডলার দিয়েছেন মাস্ক। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যেন কেবল মানুষের ভালোর জন্যই ব্যবহার করা হয়, তা নিশ্চিতে কাজ করে সংস্থাটি। আর ২০১৬ সালে তাঁর নিজস্ব দাতব্য সংস্থা ‘মাস্ক ফাউন্ডেশনে’ সাড়ে ২৫ কোটি ডলার মূল্যের টেসলা শেয়ার দান করেছেন বলে প্রতিবেদন হয়েছে।

২০১৮ সালে সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে জানানো হয়, সিয়েরা ক্লাব নামের এক পরিবেশবাদী সংগঠনে বেনামে ৬০ লাখ ডলার দান করেছেন ইলন মাস্ক। এদিকে মার্কিন রিপাবলিকান রাজনীতিবিদদের তহবিলেও দান করতে দেখা গেছে তাঁকে।

গাড়ির প্রতি টান থাকা ইলন মাস্কের জন্য স্বাভাবিক
রয়টার্স

সংগ্রহে শুধু বৈদ্যুতিক গাড়ি রাখতে চান

গাড়ি তৈরির প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী তিনি। গাড়ির প্রতি টান থাকা স্বাভাবিক। বেশ কিছু দারুণ গাড়ি আছে তাঁর সংগ্রহে। ২০১৩ সালের এক নিলামে মাস্ক প্রায় ১০ লাখ ডলার খরচ করে ১৯৭৬ মডেলের লোটাস এসপ্রিট স্পোর্টস গাড়ি কেনেন। ১৯৭৭ সালে গাড়িটি ‘জেমস বন্ড’ সিরিজের ‘দ্য স্পাই হু লাভড মি’ চলচ্চিত্রের শুটিংয়ে ব্যবহার করা হয়েছিল।

১৯২০ মডেলের ‘ফোর্ড মডেল টি’ গাড়িও আছে তাঁর সংগ্রহে। মাস্কের ভাষ্যমতে, সেটি এক বন্ধুর উপহার। আরও আছে ১৯৬৭ মডেলের ‘জাগুয়ার সিরিজ ১ ই-টাইপ’ রোডস্টার ধাঁচের গাড়ি। ২০১৭ সালে মাস্ক বলেছিলেন, তাঁর সংগ্রহশালার কেবল ওই দুটি গাড়িই গ্যাসোলিনে চলে। তবে আরও আগে যেসব গাড়ি তাঁর দখলে ছিল, যেমন ১৯৭৮ মডেলের বিএমডব্লিউ ৩২০আই থেকে ম্যাকলারেন এফ১, সেগুলোর কোনো উল্লেখ তিনি করেননি।

২০১৯ সালের জুলাইয়ে টুইটারে ইলন মাস্ক লেখেন, বেশির ভাগ সময়ে তিনি টেসলার মডেল এস গাড়িটিই চালান। এ ছাড়া তাঁকে টেসলার আসন্ন সাইবারট্রাক চালাতেও দেখা গেছে।

বিনিয়োগে করেন নিজের প্রতিষ্ঠানেই

মাস্ক একবার বলেছিলেন তিনি সচরাচর নিজের প্রতিষ্ঠানেই বিনিয়োগ করে থাকেন। ২০১৮ সালে তাঁর প্রতিষ্ঠান দ্য বোরিং কোম্পানি ১১ কোটি ২৫ লাখ ডলার বিনিয়োগ পায়। এর ৯০ শতাংশ করেন মাস্ক।

ডিপমাইন্ড এবং নিউরোভিজিলের মতো বেশ কিছু নতুন প্রতিষ্ঠানে তিনি বিনিয়োগ করেছেন বলে প্রতিবেদন হয়েছে, তবে পরিমাণ জানা যায়নি। ২০১৫ সালে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষক প্রতিষ্ঠান ওপেনএআইয়ে ১০০ কোটি ডলার দেওয়ার প্রতিজ্ঞা করেন মাস্কসহ আরও বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী।

সূত্র: সিএনবিসি