রাশিয়ার দিকে মুখ করে মূত্রত্যাগে নিষেধাজ্ঞা এবং একটি বাণী

কোথায় মূত্রত্যাগ করছেন, তা আপনার ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়
ছবি: সংগৃহীত

থুতু ওপর দিকে ফেললে নিজের গায়ে পড়ে। মূত্র সোজা নিচের দিকে ত্যাগ করলে নিজের পায়ে পড়ে। থুতু বেশি ফেলতে মানা। মূত্র আটকে রাখা বারণ। থুতু শরীরের অন্যতম প্রয়োজনীয় ফ্লুইড বা তরল। মূত্র অন্যতম ত্যাজ্য তরল। তবে ফেলতে চাইলে দুটোকেই দূরে ফেলতে হয়।

সমস্যা হচ্ছে কোন দিকে ফেলবেন। ওপর আর নিচের দিকে ফেলার সমস্যা তো বলা হলো। বাকি থাকে উত্তর–দক্ষিণ–পূর্ব–পশ্চিম। থুতু নিয়ে এই চারদিক বিষয়ে কোনো ধর্মেই কিছু বলা নেই বলে জানি। ফলে রাস্তায় নামলে এদিক–সেদিক থেকে প্রায়ই দু–একদলা থুতু আপনার দিকে উড়ে আসতে দেখবেন। বেশির ভাগ সময় অবশ্য আপনার অগোচরেই কর্মটি সম্পাদিত হয়। সে ক্ষেত্রে ‘নিজেকে বাঁচিয়ে চলুন’ বলা ছাড়া আর কোনো পরামর্শ নেই। কিন্তু মূত্রত্যাগের বিষয়ে দিক নির্ধারিত আছে। কাবা শরিফের দিকে ফিরে এটা ত্যাগ করা ইসলাম ধর্মে নিষেধ। অন্য ধর্মে এর জন্য দিক নির্ধারণ নিয়ে কোনো নির্দেশনা আছে কি? আমার জানা নেই। জানলে কমেন্ট করতে পারেন। (কমেন্ট কিন্তু লেখার ওপরে করা যাবে না, নিচেই করতে হবে!)

কিন্তু রাশিয়া কেন এমন মূত্রবিরোধী হলো? আগে ঘটনা শুনুন। ইউরোপের দেশ নরওয়ে রাশিয়ার দিকে মুখ করে মূত্রত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এটা কথার কথা নয়। এই নিষেধাজ্ঞা না মানলে জরিমানাও গুনতে হবে। অঙ্কটা নেহাত ছোট নয়। নরওয়ের মুদ্রায় ৩ হাজার ক্রোনার; বাংলাদেশি মুদ্রায় ২৯ হাজার টাকার বেশি। বলা হচ্ছে এই কঠোর নিষেধাজ্ঞা এসেছে রাশিয়াকে তুষ্ট করতেই।

নরওয়ের জাকোবসিলভা নদীর পাড়ের সেই সাইনবোর্ড
ছবি: টমাস নিলসেন

নরওয়ের জাকোবসিলভা নদীর অপর পাড়ে রাশিয়া। জায়গাটা সুন্দর। অনেক পর্যটক সেখানে যায়। সেই জাকোবসিলভা নদীর তীরে রীতিমতো সাইনবোর্ড বসিয়ে দিয়েছে দেশটির সীমান্ত কর্তৃপক্ষ। ‘নো পিইং টুয়ার্ডস রাশিয়া।’ মানে ‘রাশিয়ার দিকে ফিরে মূত্রত্যাগ নয়।’ জামানা ডিজিটাল; তাই ভিডিও নজরদারির ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে সেখানে। বোঝাই যাচ্ছে বিষয় সিরিয়াস! বার্তা সংস্থা এএফপি নরওয়ের রাজধানী অসলো থেকে এ খবর জানিয়েছে।

আপনি কোথায় মূত্রত্যাগ করছেন, তা আপনার ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়। এখন দেখা যাচ্ছে নরওয়ে আর রাশিয়ার কাছে তা রাষ্ট্রীয় দৃষ্টিভঙ্গিরও বিষয়। নরওয়ের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রতিবেশী দেশ কিংবা এর সীমান্তে ইচ্ছাকৃত অপরাধ আইনে নিষিদ্ধ। কাজেই সেখানে মূত্রত্যাগও অপরাধ।

রাশিয়া–নরওয়ে সীমান্তের মানচিত্র
ছবি: সংগৃহীত

সম্প্রতি সীমান্তবর্তী নদীর পাড়ে মূত্রত্যাগের বিষয়ে নরওয়ের কাছে অভিযোগ করেছে রাশিয়া। তারপরই নরওয়ের এই কড়া ব্যবস্থা। এটা সৌজন্য নাকি নতজানু পররাষ্ট্রনীতি, তা কে বলবে! এটা আন্তর্জাতিক কূটনীতি–বিশ্লেষকদের জন্য তোলা থাক। তবে বাংলাদেশ–ভারত সীমান্তে এমন কিছু ঘটলে এ বিষয়ে আলাদা বিশেষজ্ঞের দরকার হবে না। আমরা সবাই কমবেশি বিশেষজ্ঞ মত দিতে পারব।

রাষ্ট্রীয় বিষয় থাক। মূত্র নিয়ে বিড়ম্বনা অনেক; বিশেষ করে বাঙালি শিশু–কিশোরদের বিড়ম্বনার অন্ত নেই। উন্নত দেশের মতো ডায়াপার তো আর আমাদের যুগে ছিল না। এখনো দেশের অনেক শিশুই ডায়াপারের ‘সুবিধা আর আনন্দ’ উপভোগ করতে পারে না। দেশের অনেক শিশুই এখনো রাতে বিছানা ভিজিয়ে সকালে বাসিমুখে ভর্ৎসনা গিলছে। শীতের রাতে ঘুমে ডুবন্ত শরীরে সাময়িক উষ্ণ তরলের পরশ পরমুহূর্তে কী রকম সিক্ত বিড়ম্বনার জন্ম দেয়, তা নিশ্চয়ই সবার মনে পড়ছে। ওই কনকনে শীতেই বরফশীতল পানিতে শরীর পবিত্র করার মতো কষ্টের সঙ্গে জগতের আর কোনো কষ্টের কি তুলনা চলে!

মূত্র বহনীয় বা বাহ্য, কিন্তু একেবারেই কি ত্যাজ্য? কেউ কেউ মূত্র পান করেও বিখ্যাত। ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাই এ কাজ করে সাধারণ জ্ঞানের বইয়ে স্থান করে নিয়েছেন। তবে তাঁর এই মূত্রপান নাকি ‘ইউরিন থেরাপি’।

ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাই (১৮৯৬–১৯৯৫)

১৯৭৮ সালে মার্কিন টেলিভিশন সিবিএস নিউজের সাক্ষাৎকারভিত্তিক অনুষ্ঠান ‘সিক্সটি মিনিটসে’ মোরারজি এ কথা শুধু স্বীকারই করেননি, ইউরিন থেরাপির নানা ‘উপকারী’ দিক তুলে ধরেছিলেন। সবাইকে এই ‘মূত্র থেরাপি’ নিতেও বলেছিলেন তিনি। স্বমূত্র না হলেও ভারতে গোমূত্র পান নিয়ে নানা সংস্কার আছে। করোনাকালের শুরুতে এর বাড়বাড়ন্ত আন্তর্জাতিক খবরের বিষয় হয়েছে। সেলিব্রিটি বাবা রাম দেবের সংস্থা পাতাঞ্জলী তো ভারতের বাজারে গোমূত্রের সাবান, শ্যাম্পু, ফেসপ্যাক আনারও ঘোষণা দিয়ে রেখেছে। মূত্র আসলে ‘ফেলনা’ নয়!

আঁকা: নাইমুর রহমান

মূত্র নিয়ে আমার আব্বার উক্তিই এখন পর্যন্ত আমার কাছে সেরা। আম্মা আমাদের ভাইবোনদের কোনো আবদার রক্ষার জন্য আব্বার কাছে সমর্থন চাইতে যেতেন। আম্মা আমাদের হয়ে ওকালতি করতে গেলে আব্বা প্রথমেই বলতেন, ‘পোলাপানের মুতে আছাড় খাইয়ো না!’ এই লেখাও অনেকটা তেমন। এই লেখক মনের দিক থেকে পুরোপুরি ‘পোলাপান মানুষ’। তাই লেখাটি পড়ে যদি মনে হয়...আছাড় খেয়েছেন, তাহলে আন্তরিকভাবে দুঃখিত!