যে কারণে ১ লাখ ২০ হাজার ডলারের কলা খেয়েছেন নোহ

স্রেফ একটি কলাই তো খেয়েছিলেন নোহ হিউন-সু। তা নিয়েই এত কাণ্ড। দক্ষিণ কোরিয়ার লিয়াম জাদুঘরে আধা ঘণ্টা ধরে চলে নাটক। কিন্তু একটা কলা নিয়ে এত হুলুস্থুল কেন? কারণ, নোহের খাওয়া কলাটা যে একটা শিল্পকর্ম। দাম ১ লাখ ডলারের বেশি। সেটাই কিনা ১ মিনিটে কপ করে ফেলেন নোহ! চলুন আদ্যোপান্ত ঘটনাটা একবার জানা যাক।

এই সেই ১ লাখ ২০ হাজার ডলারের ‘শিল্প’কলা—কমেডিয়ান
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

ভাস্কর্য ও স্থাপনাশিল্প নিয়ে কাজ করেন মারিজিও কাটেলান। তীক্ষ্ণ রসবোধের জন্য ইতালির এ শিল্পীর পরিচিতি রয়েছে। তাঁর বিখ্যাত কয়েকটা শিল্পকর্মর বিবরণ শুনলেই রসবোধের কিছুটা পরিচয় পাওয়া যাবে। ২০১৬ সালে তিনি বানান ‘আমেরিকা’। শিল্পকর্মটি মূলত একটি হাই কমোড। একদম ঠিকঠাক কাজ করে। কেবল বিশেষত্ব হলো, সেটা ১৮ ক্যারেট সোনার তৈরি। তিনি চান শিল্পামোদীরা এসে তাঁর বানানো হাই কমোডটা ব্যবহার করবেন। ২০১৯ সালে শিল্পকর্মটি প্রদর্শনের জন্য ইংল্যান্ডের ব্লেনহেইম প্যালেসে বসানো হয়েছিল। ৩০০ বছরের পুরোনো এ প্রাসাদেই জন্মেছিলেন সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল। পরদিনই তা চুরি হয়ে যায়।

আর এবার তাঁর আরেক শিল্পকর্ম যাকে বলে ‘ডাকাতি’ হয়ে গেল। হ্যাঁ, নোহের খাওয়া কলাটা কাটেলানেরই আরেক শিল্পকর্ম। নাম ‘কমেডিয়ান’। এটাও কম বিখ্যাত নয়। ভাবনাটা অবশ্য খুবই সাধারণ। খালি দেয়ালে একটা কলা ডাক্ট টেপ দিয়ে লাগানো এবং সেই কলাও একদম সত্যিকারের কলা। প্রদর্শনী যত গড়াতে থাকে, কলাটাও তত চিমসে যেতে থাকে। রং বদলে হলুদ থেকে হতে থাকে কালচে। আর ছড়াতে থাকে গন্ধ কিংবা দুর্গন্ধও বলতে পারেন।

২০১৯ সালে কাটেলান প্রথম এই স্থাপনাশিল্পটির প্রদর্শন করেন। সঙ্গে থাকে একটা বিস্তারিত বিবরণ, যাতে লেখা থাকে কীভাবে শিল্পকর্মটি প্রদর্শন করতে হবে। সে অনুযায়ী কয়েক দিন পরপর বদলাতে হয় কলা। এ কলার ব্যবহারই শিল্পকর্মটিকে দিয়েছে ভিন্নমাত্রা। হয়ে উঠেছে বিদ্রূপ ও হাস্যরসের দুর্দান্ত উৎস। প্যারিসের পেরোটিন আর্ট গ্যালারির মালিক ইমানুয়েল পেরোটিন বলেন, ‘কলা একদিকে যেমন বৈশ্বিক ব্যবসার প্রতীক, একই সঙ্গে আবার হাস্যরসের এক ধ্রুপদি উৎস।’

১ লাখ ২০ হাজার ডলারের কলা খাচ্ছেন নোহ হিউন-সু
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

দেখতে-শুনতে হাস্যকর লাগলেও কাটেলানের এই শিল্পকর্ম কেবল বিখ্যাতই নয়, বেশ দামিও বটে। এ পর্যন্ত তিনটি ‘কমেডিয়ান’ বানিয়েছেন কাটেলান। এগুলোর মধ্যে দুটিই বিক্রি হয়ে গেছে। দামটাও চোখ কপালে তুলে দেওয়ার মতো—১ লাখ ২০ হাজার ডলার করে। অন্যটি জাদুঘর চেইন গাগেনহাইমকে দিয়ে দিয়েছেন।

দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলের লিয়াম জাদুঘরে এখন কাটেলানের একটা প্রদর্শনী চলছে। তার মধ্যমণি ‘কমেডিয়ান’। চলবে জুলাই পর্যন্ত। সেটাই দেখতে গিয়েছিলেন নোহ। তিনি সিউল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে অ্যাস্থেটিকস অ্যান্ড রিলিজিয়ন নিয়ে পড়ছেন। সেদিন সকালে নাশতা খাওয়া হয়নি। স্বভাবতই জাদুঘরে ঢুকেই তাই কমেডিয়ানের তরতাজা কলাটায় চোখ আটকে যায়। সুকান্তের ক্ষুধার রাজ্যে আকাশের চাঁদই হয়ে গিয়েছিল ঝলসানো রুটি। আর এটা তো সত্যিকারের কলা।

তাই জাদুঘরের কর্মীদের নিষেধে একটুও গা করেননি নোহ। নির্বিকার চিত্তে ডাক্ট টেপ খুলে কলা খেতে শুরু করেন। দূর থেকে ভিডিও করেন তাঁর বন্ধু। আশপাশে থাকা কর্মীরা চিৎকার করে অনুরোধ করলেও থামেননি। মিনিটখানেকের মধ্যেই শেষ করে ফেলেন কমেডিয়ানের কলা। তারপর কলার জায়গায় সুন্দর করে লাগিয়ে দেন কলার খোসা।

২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ামিতে এক প্রদর্শনীতে ‘কমেডিয়ান’–এর সঙ্গে সেলফি তুলছেন দুজন দর্শক
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়ে যায় হইচই। জাদুঘর কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে নোহ সাফ জানিয়ে দেন, খিদে পেয়েছিল তাই খেয়েছেন। অবশ্য পরে কোরিয়ার টিভি চ্যানেল কেবিএসকে নোহ বলেন, কমেডিয়ানের কলাটা আসলে খাওয়ার জন্যই রাখা হয়। এমনকি তিনি দাবি করেন, তাঁর এ কর্মকাণ্ড খোদ শিল্পকর্মটিরই অংশ হয়ে গেছে।

এদিকে জাদুঘর কর্তৃপক্ষ ভয়ে ছিল ঘটনা শুনে কাটেলান না জানি কী বলেন! তিনি অবশ্য মোটেও রাগ করেননি। কলা খেয়ে ফেলেছে তো কী হয়েছে! কীভাবে নতুন কলা বসাতে হবে, সে নির্দেশনা তো দেওয়াই আছে। আরেকটা বসিয়ে দিলেই হলো। পরে সেটাই করেন জাদুঘরের কর্মীরা। মাঝখানে আধা ঘণ্টা ধরে চলে কলার নাটক।

তথ্যসূত্র : এনপিআর