ক্রিকেটারদের উদ্দেশে এলাকার মুরব্বিদের চিঠি

আঁকা: আসিফ

প্রিয় বাবারা,

সামনে নির্বাচন। নির্বাচন সামনে রেখে চায়ের দোকানে ব্যস্ত সময় পার করতে হয় আমাদের। যদিও সারা বছরই চায়ের দোকানে ব্যস্ত সময় পার করি, তবু নির্বাচনের সময়টা একটু অন্য রকম। চায়ের কাপে ঝড় তোলার এই সুযোগ পাঁচ বছরে একবারই পাওয়া যায়। এখন সে রকম সোনালি দিনই যাচ্ছে। এ সময় দেশ–বিদেশের শেষ পরিস্থিতি নিয়ে জ্ঞানগর্ভ আলোচনা করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেওয়ার কথা ছিল। এ রকম সুযোগ বিসর্জন দিয়ে বাসায় টেলিভিশনের সামনে বসে তোমাদের খেলা দেখলাম। আর তোমরা কিনা সবাই
ফেল মারলে!

এ জন্যই বলছি, ক্রিকেটের পাশাপাশি একটু বিসিএসটাও চেষ্টা করো। পাশের দেশের ছেলেদের দেখো। ওরা কত সুন্দর খেলে। গোল্ডেন এ–প্লাস পাওয়ার মতো খেলা যাকে বলে আরকি! বাবারা, তোমরা এ রকম খেলতে পারো না? সব দলের ওপেনাররা কত ভালো খেলে। আর তোমরা ওপেনিংয়ে নামলে একটা পান বানিয়ে মুখে দেওয়ার আগেই দেখি আউট। ওরা পারলে তোমরা পারো না কেন? ওদের দলের ওপেনারদের ব্যাটিংয়ে রেখে ওরা বিরিয়ানি বানিয়ে খায়। আর আমরা নুডলস বানানোর সময়টুকুও পাই না। তোমাদের মতো বয়সে কী ক্রিকেটটাই না খেলতাম আমরা! পুরো বিশ্বে এমন একটা দল ছিল না, যারা আমাদের হারাতে পারত। এখন বললে তো বলবে, আবার চাচা মিথ্যা কথা বলছে। আমরা যখন ক্রিকেট খেলতাম, তখন পেলে-ম্যারাডোনার মতো খেলোয়াড়েরাও আমাদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলার সাহস করতেন না। আর এখন তোমরা কী যে খেলো, বুঝি না!

১০ দলের টুর্নামেন্টে ৮ নম্বর হয়ে নাচতে নাচতে বাড়িতে আসলা। আমাদের সময় এ রকম কিছু করলে তো আমাদের বাপ–চাচারা দৌড়ানি দিত! তোমরা তো এখন বাসা থেকে বের হলেই ক্রিকেট খেলার জায়গা পাও। আমাদের যুগে পাঁচ কিলোমিটার দূরে হেঁটে গিয়ে ক্রিকেট খেলতে হতো। তোমরা এখন কোনো টুর্নামেন্টে খেলতে যাওয়ার আগে তোমাদের সেলফির ধরন দেখলে মনে হয় শিক্ষাসফরে যাচ্ছ। আর আমাদের সময় বাড়ি থেকে মা বলে দিত, ‘খবরদার! ট্রফি ছাড়া বাড়িতে ঢুকলে দুপুরে খাবার নাই
তোর কপালে!’

যে রকম বৈরী পরিবেশে ক্রিকেট খেলেছি আমরা, সে রকম পরিবেশ পেলে তো তোমরা ক্রিকেট খেলা বাদ দিয়ে মোটিভেশনাল স্পিকারের ক্যারিয়ারই বেছে নিতে। যাহোক, তোমাদের আর ম্যাচ নেই। তাই কাল থেকে নির্বাচন পর্যন্ত পুরোদমে চায়ের কাপে ঝড় তোলার জন্য প্রস্তুত আমরা! 

ইতি

এলাকার মুরব্বি সমাজ

(মুরব্বিদের পক্ষে চিঠিটি লিখেছেন মাহবুব আলম)