পুরোনো বইয়ের পাতা কেন হলদেটে হয়ে যায়

আমাদের বয়স বাড়লে যেমন চুল পেকে যায়, কাগজের বয়স বাড়লেও তেমনই হয়ে যায় হলদেটে। কিন্তু কেন এমন হয়?

আমাদের বয়স বাড়লে যেমন চুল পেকে যায়, কাগজের বয়স বাড়লেও তেমনই হয়ে যায় হলদেটেছবি: পেক্সেলস

পুরোনো বইয়ের দোকানে গেলে অনেক হলদেটে বা লালচে পাতার বই দেখা যায়। ওসবের আদতে অনেক বয়স। পুরোনো বই বা পত্রিকার কাগজ অনেক দিন রেখে দিলে সাদা রং ধীরে ধীরে লালচে বা হলদেটে হয়ে যায়। মনে হয় যেন কাগজটা বুড়িয়ে গেছে!

কাগজের হলদেটে হওয়ার রহস্য খুঁজতে গেলে প্রথমে জানতে হবে, কাগজ আসে কোথা থেকে। মানে কাগজ কী দিয়ে তৈরি। কাগজ বানানো হয় কাঠ থেকে। কাঠ একদম গুঁড়া করে পানি মিশিয়ে নরম মণ্ড তৈরি করা হয় প্রথমে। তারপর সেই মণ্ডকে চাপ দিয়ে পাতলা করে শুকিয়ে নিলেই তৈরি হয় কাগজ।

কাঠের মধ্যে থাকে লিগনিন নামের একধরনের পদার্থ। এই পদার্থ কাগজকে মজবুত করে। গাছের ভেতরে এটা আঠার মতো কাজ করে। কিন্তু এর একটা দোষও আছে। যখন কাগজ আলো, বাতাস আর সূর্যের তাপে অনেক দিন থাকে, তখন লিগনিন ভেঙে যায়।

ভাঙতে ভাঙতে সেটা একধরনের রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটায়। ফলে কাগজের রং আর সাদা থাকে না। তবে কাগজ থেকে যদি সম্পূর্ণ লিগনিন বের করে ফেলা হয়, তাহলে কিন্তু কাগজ সাদাই থাকবে। কিন্তু এই কাজ করতে খরচ হয় অনেক। তাই অনেক কাগজের লিগনিন বের করা হয় না।

আরেকটা ব্যাপার হলো, বাতাসে থাকা অক্সিজেনও কাগজের সঙ্গে বিক্রিয়া করে। আলো আর অক্সিজেন মিলে কাগজের রং বদলে দেয়। এই প্রক্রিয়াকে বলে অক্সিডেশন।

খেয়াল করলে দেখবেন, আপেল কেটে রাখলে কিছু সময় পর কালচে বা বাদামি হয়ে যায়। এমনটা হয় আদতে কাটা আপেল বাতাসের সংস্পর্শে এলে। কাগজের ক্ষেত্রেও ঠিক তেমনটাই ঘটে।

আরও পড়ুন

সংবাদপত্র বা বইয়ের সস্তা কাগজে লিগনিনের পরিমাণ বেশি থাকে। তাই সেসব অনেক দ্রুত হলদেটে হয়ে যায়। কিন্তু বইয়ের ভালো মানের কাগজে লিগনিন খুব কম থাকে। তাই সেসবের রং অনেক বছর একই রকম থাকে বা তেমন বদলায় না।

কাগজ হলদেটে হওয়ার পেছনে আর্দ্রতারও ভূমিকা আছে। কোনো বই যদি রোদে পড়ে থাকে, তাহলে কাগজ আরও দ্রুত হলদেটে হয়ে যায়। আবার খুব আর্দ্র বা স্যাঁতসেঁতে জায়গায় রাখলেও কাগজে ছত্রাক জন্মে। ফলে রং আর গন্ধ দুটোই বদলে যায়।

তাই যেসব বই বা পত্রিকা তোমার খুব প্রিয়, সেগুলো ঠান্ডা, শুকনা আর ছায়াঘেরা জায়গায় রাখা ভালো।

সূত্র: সায়েন্টিফিক আমেরিকান

আরও পড়ুন