বাড়িওয়ালার তালাপ্রীতি

আঁকা: অনিন্দ্য

আমাদের পাড়ায় যদি বদমেজাজিদের একটি তালিকা করা হতো, তাহলে আমাদের বাড়িওয়ালার নামটি থাকত সেই তালিকার শীর্ষে। শুধু তা-ই নয়, পৃথিবীর যত সব অদ্ভুত ও অপ্রয়োজনীয় নিয়মকানুন আছে, সবই তার মাথায় সংরক্ষিত থাকে সব সময়। তার সেই নিয়মগুলো মেনেই বাসায় থাকতে হয় আমাদের।

তার মস্তিষ্ক থেকে আমদানি করা অনেক অনন্য নিয়মের অন্যতম একটি হলো গেটে সব সময় তালা দিয়ে রাখা। বরাবরের মতো আমি তার এই নিয়মের বিরুদ্ধে। আমি বাইরে যাওয়া মানেই গেটের তালা না লাগিয়েই চলে যাওয়া। আর আমার এই মহান উদ্যোগে চোরের হাতে যে কটি তালা পড়েছে, তা হিসাব করা বাড়িওয়ালার পক্ষে সম্ভব হয়নি।

আমি আবার আমাদের পাড়ার বিচ্ছুবাহিনীর প্রধান। তাদের যেকোনো মিটিংয়ে আমাকেই শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করতে হয়। আর আমাদের এই বিচ্ছুবাহিনী এক দিনে যতবার মিটিং করে স্বয়ং মার্কিন প্রেসিডেন্ট পুরো বছরে অতগুলো মিটিং করেন কি না সন্দেহ। এই যেমন কার বাসায় চুরি হয়েছে, কার সাইকেলের পাম্প ছেড়ে দিতে হবে, কার গাছে কয়টা আম ধরেছে—এসব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তদন্ত করা হয় মিটিংয়ে। আর তাদের ২৪ ঘণ্টায় ৪২ বারের মিটিংয়ে প্রতিবারই আমাকে সশরীরে উপস্থিত থাকতে হয়।

কিন্তু সমস্যাটা হলো আমাদের বাসার গেট। সেই তালাওয়ালা গেট খুলে আবার তালা লাগানোর মতো ধৈর্য আমার মতো বিচ্ছুপ্রধানের নেই। তাই অনেক চিন্তাভাবনা করে একটা বুদ্ধি বের করলাম।

একটা চিঠি লিখলাম বাড়িওয়ালার কাছে। চিঠি না বলে এটিকে হুমকি বলাই অধিক শ্রেয়। চিঠিটি বাড়িওয়ালার বাসায় দরজার ফুটো দিয়ে চালান করে দিলাম।

চিঠিতে যা লেখা ছিল—

জনাব হামিদুর রহমান,

গোপন সূত্রে আমরা জানতে পেরেছি যে আপনি আপনার বাসায় সব সময় তালা দিয়ে রাখেন। যার ক্ষতিকর প্রভাবের কথা বলে শেষ করা যাবে না। এই মুহূর্তে যদি ভূমিকম্প বা আগুন লাগে, তাহলে আপনার ফ্ল্যাটের সবাই সহজে বের হতে পারবে না। অনেকের জানমালের ক্ষতি হবে। আর আপনি পুলিশের ভয়ে পালিয়ে যাবেন। আপনাকে খোঁজার জন্য অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করতে হবে আমাদের। তারা মাথার ঘাম জলীয় বাষ্প করে আপনাকে খুঁজে বের করবে। আপনি জেলে যাবেন, আর আপনার বউ-বাচ্চা খাওয়া-পরার টাকার জন্য আপনার প্রিয় এই ফ্ল্যাটটি বিক্রি করে দেবে। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে যখন আপনি দেখবেন আপনার ফ্ল্যাট আর আপনার নেই, তখন আপনি হার্ট অ্যাটাক করবেন। নৈতিকতার খাতিরে আপনাকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে আমাদের। আর আপনার চিকিৎসার বিল দিতে হবে আমাদেরই। সেই বিলের টাকা তো আপনি শোধ করতে পারবেন না। কারণ, আপনার নাম বদমেজাজির তালিকা থেকে দেউলিয়ার তালিকায় উঠে যাবে তত দিনে। তাই এত সব ঝক্কি-ঝামেলা পোহানোর চেয়ে আপনার গেটের তালাটিকে ডাস্টবিনে স্থান দেওয়াই শ্রেয়।

নিবেদক

প্রধান কর্মকর্তা

জেলা উন্নয়ন কমিটি

অতঃপর গেটের তালা নাম লেখাল ইতিহাসের পাতায়। আজ এখানেই ইতি টানি। আমার আবার বিচ্ছুবাহিনীর মিটিংয়ে যেতে হবে।